Thursday 16 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাকিস্তানের তৈরি বল ফাটলো ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে


১৭ জুন ২০১৮ ১২:০০ | আপডেট: ১৭ জুন ২০১৮ ১২:০২

সারাবাংলা ডেস্ক ।।

দুই দল, ২২ খেলোয়াড়, তিন রেফারি। ১২০ মিটারের ব্যবধানে দাঁড়িয়ে থাকা দুই গোলপোস্টের মাঝে টানা ৯০ মিনিট অবিরাম ‘ছোটাছুটি’। অথচ গ্যালারি-ভর্তি দর্শকের নজর দুলতে থাকে কেবল একটি বস্তুকে কেন্দ্র করে। শুধুই কি গ্যালারি? ক্যামেরার চোখে বিশ্বের শত কোটি মানুষের দৃষ্টি আটকে থাকে ওই একটি জিনিসেই। আর তা হলো, বল। রাশিয়া বিশ্বকাপে এবার খেলা হচ্ছে টেলস্টার-১৮ নামের বল দিয়ে। যে বল তৈরি করেছে পাকিস্তানের একটি কোম্পানি।

বিজ্ঞাপন

গতকাল ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচে বিশ্বকাপের অফিসিয়াল ম্যাচের বলটি ফেটে যায়। যা নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। ম্যাচের ২৯ মিনিটের মাথায় পাকিস্তানের তৈরি টেলস্টার-১৮ বলটি ফেটে যায়। এরপর ৩৪ মিনিটের মাথায় বার্সেলোনার ফরাসি তারকা ওসমান দেম্বেলে কর্নার কিক নিতে গেলে যে বলটি তার হাতে দেওয়া হয়েছিল সেটিও ফাটা ছিল। দুইবারই বল পাল্টানো হয়।

ব্রাজিলে গত বিশ্বকাপে খেলা হয়েছিল ব্রাজুকা বল দিয়ে। ব্রাজুকার মতো টেলস্টার-১৮ তৈরি হয়েছে পাকিস্তানের শিয়ালকোটে। গত বিশ্বকাপে ব্রাজুকার দ্বিতীয় সাপ্লাইয়ার ছিল শিয়ালকোটের ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফরোয়ার্ড স্পোর্টস। এবারো শিয়ালকোটের এই প্রতিষ্ঠানটিই পায় রাশিয়া বিশ্বকাপে বল তৈরির কাজটি। রাশিয়ায় মোট কতটি বল পাঠিয়েছে পাকিস্তানের ফরোয়ার্ড স্পোর্টস, সেটা প্রকাশ হয়নি। এই কারখানায় বিখ্যাত ব্র্যান্ড এডিডাস তাদের বিভিন্ন ফরমায়েশের কাজ করিয়ে থাকে।

এডিডাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বকাপে তারা ঠিক কতটি বল সরবরাহ করছে তা জানা যায়নি। তবে, মেগা এই ইভেন্টের বল তৈরির কাজ হাতে পেয়ে মাসে প্রায় ৭ লাখ বল তৈরির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল শিয়ালকোটের প্রতিষ্ঠানটি। সময়মতো বিশ্বকাপের বলগুলো হস্তান্তর করার জন্য কারখানার কর্মীরা দিনের নির্দিষ্ট সময়ের চেয়েও বেশি সময় ধরে কাজ করেছে। ফরোয়ার্ড স্পোর্টস জার্মানির বুন্দেসলিগা, ফ্রান্সের লিগ ওয়ান এবং চ্যাম্পিয়নস লিগে ফুটবল সরবরাহ করে।

বিজ্ঞাপন

রাশিয়া বিশ্বকাপেও ব্যবহার করা হচ্ছে থার্মো বন্ডেড ফুটবল। এবারো হাতে সেলাই করা ফুটবল সরবরাহ করেছে ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পাকিস্তানের ফরোয়ার্ড স্পোর্টস। আধুনিকতা আর প্রযুক্তির প্রতীক হিসেবে এবার বলটির কালো প্যানেলে যুক্ত হয়েছে পিক্সেল। ১৯৭০ বিশ্বকাপের বল টেলস্টার থেকে কিছুটা বিবর্তন হয়ে এবারের বিশ্বকাপের বলের নকশা করা হয়েছে। সেদিক থেকে চলতি বছর টেলস্টারের ৪৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৭৪ বিশ্বকাপেও ছিল ওই বল। সেই ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপের বলের নাম ছিল তিয়েন্তো। সেখান থেকে বিবর্তনের পথ ধরে বলের নাম হয়েছে টেলস্টার।

১৯৬২ সালে আমেরিকার ফ্লোরিডায় টেলস্টার নামের একটি স্যাটেলাইট স্টেশন চালু হয়। যেটি আবহাওয়া ও টর্নেডোর পূর্বাভাস সম্প্রাচার করতো। জনপ্রিয় সেই নাম থেকেই টেলস্টার নামটি ধার করে বিশ্বকাপ বলের নাম দেওয়া হয় টেলস্টার। ১৯৭০ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে ব্যবহার করা বলে অনুপ্রাণিত হয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য টেলস্টার-১৮ তৈরি করা হয়েছে। ১৯৭০ এবং ১৯৭৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা হয়েছিল টেলস্টার বলে। সেই সময় পেলে এবং বেকেনবাওয়ারের মতো কিংবদন্তিরা এই বল দিয়ে খেলেছিলেন।

রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে এই বল নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসির প্রশংসা পেয়েছিল টেলস্টার-১৮। আকারে ছোট ও হালকা এই বল নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। স্পেনের গোলরক্ষক পেপে রেইনা, ডি গিয়া, জার্মানির গোলরক্ষক টার স্টেগেন এই বলের সমালোচনা করেছেন। আরও অনেক গোলরক্ষকের মতে, ডি-বক্সের অনেক দূর থেকেই এই বল দিয়ে গোল করা সম্ভব। বাতাসে বলের গতি বেশ অনেকখানি পরিবর্তন হয়। বলা হচ্ছিল রাশিয়ায় গোলরক্ষকদের জন্য টেলস্টার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ‘বখাটে ছেলে’র মতো।

এর আগেও বল নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন গোলরক্ষকরা। ২০০২ বিশ্বকাপে ইতালির গোলরক্ষক এবং অধিনায়ক জিয়ানলুইজি বুফন বিশ্বকাপের বলকে বলেছিলেন, ‘হাস্যকর কিডস’। ২০১০ বিশ্বকাপে স্পেনের গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াস বলেছিলেন, ‘বিচ বল।’ রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষে টেলস্টার-১৮ এর ভাগ্যে কি নাম জুটতে যাচ্ছে সেটা সময় হলেই শোনা যাবে।

সারাবাংলা/এমআরপি

বিজ্ঞাপন

২০২৫ সালেই বার্সায় ফিরছেন মেসি?
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৫

আরো

সম্পর্কিত খবর