মেক্সিকো ঠাণ্ডা মাথায় খেললে জার্মানিকে আরো গোল দিতো
১৭ জুন ২০১৮ ২৩:১২ | আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ১২:৩৯
আব্দুল আজীজ, সাবেক ফিফা রেফারি
বিশ্বকাপে নিজেদের সূচনা করলো বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানরা। বিশ্বকাপের অন্যতম সফল দল তারা। চারবার বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি কিছু না হলেও সেমিফাইনাল পর্যন্ত তারা যাবে। অত্যন্ত গ্রুপ পর্যায়ে পা ফসকানোর কথা তো ভাবাই যায় না।
জার্মানির সব থেকে ব্যাপার হলো হার না মানা মানসিকতা। কত ম্যাচ যে শুধু মাত্র নার্ভ ধরে রাখার কারণে তারা প্রতিপক্ষ থেকে বের করে নিয়ে গেছে এক জীবনে। যে কারণেই বলা হয়, ফুটবল ৯০ মিনিটের খেলা এবং শেষ পর্যন্ত জিতে জার্মানি।
১৯৫৪ সালে গ্রুপ পর্যায়ে তারা হাঙ্গেরির কাছে ৮-৩ গোলে হেরেছিল, ফাইনালে গিয়ে সেই হাঙ্গেরিকেই হারায় ৩-২ গোলে তাও শুরুতে ২ গোল পিছিয়ে থেকে। বিশ্বকাপ ফাইনালে ২ গোল খেয়ে আবার ফিরে আসা তা শুধু জার্মানরাই দেখিয়েছে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার সাথে ২ গোলে পিছিয়ে পড়ে ঠিকই ২-২ করে ফেলেছিল জার্মানি, যদিও শেষ পর্যন্ত জিতে আর্জেন্টিনা।
২০০২ বিশ্বকাপ থেকে জার্মানিকে বাদ করে দেওয়া দলই কাপ জিতেছে। ব্রাজিল, ইটালি এবং স্পেন, আর্জেন্টিনারও সুযোগ ছিল, পারেনি। ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে জার্মানি ১০ ম্যাচে গোল দিয়েছে ৪৩ টি, বিনিময়ে খেয়েছে মাত্র ৪ টি। ১০ ম্যাচের ১০টিই তারা জিতে।
১৯৯৮ সালে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার পর ফ্রান্স পরের ম্যাচ হারে ২০০২ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে, স্পেনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে ২০১০ এ, এই মজার তথ্য যে জার্মানীও করে ফেলবে এটা বোধহয় আজ কেউ ভাবতে পারে নি। শেষ পর্যন্ত তাই হল, মেক্সিকো হারিয়ে দিল তাদের।
খেলার শুরু থেকেই আক্রমণ, গতি, সব দিক দিয়েই মেক্সিকোকে সেরা মনে হচ্ছিল। সেই ধারা বজায় রেখেই গোল দেয় মেক্সিকো। গোলদাতার নাম লোজানো। মেক্সিকো এটাক শুরু হয় মিডফিল্ড দিয়ে, তারপর খালি নিখুঁত পাসের খেলা আর চমৎকার ফিনিশিং। এই এক গোলেই যে জার্মান বধের ইতিহাস রচিত হবে তা অবশ্য তখনো বোঝা যায় নি। মনে করেছিলাম, আরও কিছু গোল হবে বা জার্মানরা দুর্দান্তভাবে ফিরে আসবে।
যেমনটা হয়েছিল দুইদলের ১৯৯৮ সালের মুখোমুখিতে। ২য় রাউন্ডের খেলাতে সেবারও এগিয়ে ছিল মেক্সিকো। কিন্তু ৭৫ মিনিটে ক্লিনস্ম্যান আর ৮৫ মিনিটে বিয়েরওফ তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে ফেলে।
সব শেষে ভাল খেলার জন্য মেক্সিকোকে শুভেচ্ছা দিতে হবে। তবে তারা মাথা ঠাণ্ডা রাখলে আমার ধারণা আরও গোল দিতে পারতো বলে আমার ধারণা।
বিশ্বকাপের প্রথম অঘটন বলা যেতে পারে এটা, তবে জার্মানদের হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না, এদের অসাধ্য কিছু নেই। আমার মনে হয় ব্রাজিলের জন্য এখন সমস্যা হবে, ২য় রাউন্ডেই জার্মানির মুখোমুখী হতে হবে হয়তো।
আগামীকাল খেলা আছে বেলজিয়াম আর পানামার। বেলজিয়ামকে এবার ডার্ক হর্স ধরা হচ্ছে। লুকাকু, হ্যাযার্ডের মত বিশ্বসেরা খেলোয়ার আছে। পানামার হয়তো পারার কথা না। তবে অঘটন যেহেতু শুরু হয়েছে, কে জানে কি হয়!
শ্রুতিলিখন- রাসয়াত রহমান জিকো