লুকাকুর জোড়ায় বেলজিয়ামের জয়
১৮ জুন ২০১৮ ২২:৫৫ | আপডেট: ১৯ জুন ২০১৮ ১০:৪৭
সারাবাংলা ডেস্ক ।।
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে তিন নম্বর দল বেলজিয়াম আর ৫৫ নম্বর দল বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নেওয়া পানামা। গ্রুপ ‘জি’র ম্যাচে বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টায় বেলজিয়ামের মুখোমুখি হয় নবাগত পানামা। প্রথমার্ধে কোনো দলই গোল করতে পারেনি। বিরতির পরেই তিনটি গোল করে বেলজিয়াম। ৩-০ গোলের জয়ে বেলজিয়ামের তারকা রোমেলো লুকাকু জোড়া গোল করেন, বাকি গোলটি করেন মার্টিনস।
ম্যাচের শুরু থেকেই পানামাকে চেপে ধরে বেলজিয়াম। দ্বিতীয় মিনিটেই ডি ব্রুইন-লুকাকু-হ্যাজার্ডদের আক্রমণে কেঁপে ওঠে পামানার রক্ষণ। ১২তম মিনিটে হ্যাজার্ডের শট জালের বাইরে জড়ায়। তার আগে পেনাল্টির আবেদন করেও হতাশ হতে হয় বেলজিয়ামকে। ২১ মিনিটের মাথায় বেলজিয়ামের আক্রমণটি ছিল দেখার মতো। পানামার ডিফেন্ডারদের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে ডি-বক্সে প্রবেশ করেন ডি ব্রুইন। ম্যানচেস্টার সিটির এই তারকা বল বাড়িয়ে দেন লুকাকুকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তারকা বল পাওয়ার আগেই পানামার অধিনায়ক রোমান তোরেস বল ক্লিয়ার করেন। নিশ্চিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে বেলজিয়াম।
২২ মিনিটের মাথায় আবারো ডি ব্রুইন ঝলক। এবারো তার জোরালো শটটি পানামার গোলবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। সেভাবে বেলজিয়ামের গোলরক্ষক থিবাউট কোরতিউসকে কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি পানামার ফুটবলাররা। ৩৮ মিনিটের মাথায় চেলসির তারকা হ্যাজার্ডের জোরালো শট গোলবারের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
৪২ মিনিটে আক্রমণ সাজিয়েছিল পানামা। কুপারের শটটি বেলজিয়ামের গোলবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। বিরতির আগে আর কোনো সুযোগ থেকে গোল আদায় করে নিতে পারেনি দুই দল। তবে, দারুণ খেলছে ৬২ শতাংশ বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা বেলজিয়াম।
বিরতির পর ম্যাচের ৪৭তম মিনিটে লিড নেয় বেলজিয়াম। পানামার ডি-বক্সের জটলা থেকে বল পান নাপোলিতে খেলা মার্টিনস। সুযোগ নষ্ট করেননি, বাঁকানো শটে পানামার গোলরক্ষক পেনেদোকে পরাস্ত করেন মার্টিনস (১-০)। ৫২ মিনিটে ডি ব্রুইনের বাঁকানো ফ্রি-কিক পানামার গোলবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। ৫৪ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল পানামা। চেলসির গোলরক্ষক কোরতিউসকে একা পেয়েও পানামার তারকা মুরিলো গোল করতে পারেননি। বল নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারলেও দারুণ একটি সেভ করেন বেলজিয়ামের তারকা গোলরক্ষক।
৬৫ মিনিটে পানামার ডি-বক্সের ঠিক সামনে থেকে ফ্রি-কিক পেলেও ডি ব্রুইনের শটটি ডিফেন্ডারদের তৈরি দূর্গে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। অসাধারণ এক প্রচেষ্টায় ৬৯ মিনিটে বেলজিয়াম ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। ডি ব্রুইনের ডিফেন্স চেড়া পাস থেকে বল উড়ে যায় রোমেলো লুকাকুর কাছে, ঝাঁপিয়ে হেড করেন ম্যাচচেস্টার ইউনাইটেড তারকা। পানামার গোলরক্ষক পেনেদো বল আটকানোর চেষ্টা ঝাঁপ দিলেও ব্যর্থ হন।
৭৫ মিনিটে ৩-০ গোলের লিড নেয় বেলজিয়াম। অধিনায়ক হ্যাজার্ডের মাঝ মাঠ থেকে বাড়িয়ে দেওয়া বল পান লুকাকু। পানামার ডিফেন্স এগিয়ে থাকায় ইউনাইটেডের তারকার সামনে ছিল গোলরক্ষক পেনেদো। তবে, প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকের কিছুই করার ছিল না লুকাকুর ফাঁকি দেওয়া শটে। পরের মিনিটে আবারো হ্যাজার্ডের ঝলক, তবে এবার পানামার ডিফেন্স ভাঙতে পারেননি তিনি। ৮১ মিনিটে ব্যাকহিল থেকে গোল করার চেষ্টা করেছিলেন লুকাকু। তবে, তাকে রুখে দেন পেনেদো, তার আগে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি।
৮৮ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে গোল করতে পারেনি পানামা, প্রস্তুত ছিলেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কোরতিউস। বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে বেলজিয়াম ৩-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
রাশিয়া বিশ্বকাপের ফেভারিট দলগুলোর মধ্যে বেলজিয়ামের নামটা বলতে হবে। কারণ, কাগজে কলমে এই বেলজিয়ামকে ধরা উচিত বিশ্বকাপের বড় দাবিদার। যে দলের গোলরক্ষক কোর্তোয়া, রক্ষণে আছেন কোম্পানি, মধ্যমাঠে ডি ব্রুইনদের সাথে আক্রমণে হ্যাজার্ড, লুকাকু; সে দলের সামর্থ্য নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবেন না। এই বেলজিয়াম এতোটাই শক্তিশালী, তাতে জায়গা হয় না রোমার হয়ে দারুণ খেলা মিডফিল্ডার নাইঙ্গোলানের। বাছাইপর্বে অবশ্য দুর্দান্ত খেলেই রাশিয়ায় এসেছে বেলজিয়াম।
বিশ্বকাপে ১২ বার অংশ নিয়ে ১ বার সেমিফাইনালে খেলা দলটি ১৯৩০ সালে উরুগুয়ে বিশ্বকাপে প্রথম অংশ নেয়, আর ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে ছিল তাদের শেষ অংশগ্রহণ।
অপরদিকে, উত্তর আমেরিকার দেশ পানামা এবারই প্রথম খেলতে এসেছে বিশ্বকাপে, তাও আবার দারুণ নাটকীয়ভাবে। রাশিয়া অভিযানে বেশিদূর যাওয়ার মতো গোলাবারুদ তাদের নেই বটে, তবে আস্থা যোগাবে গোলপোস্টের নিচে থাকা জেইমি পেনেদো। পানামার ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড এই গোলরক্ষকের। কোচ হার্নান গোমেজের দলটির উদ্দেশ্য অভিজ্ঞতা অর্জন, তাই পুরো বিশ্বকাপে চাপ ছাড়াই খেলবে পানামা।
সারাবাংলা/এমআরপি