বাটলার কোচ থাকলে গণ অবসরে যাবেন সাবিনারা
৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫০ | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫৭
কোচ পিটার বাটলারের সাথে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের মনোমালিন্যের খবর বেশ পুরনো। গত অক্টোবরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীন এই ইংলিশ কোচের সাথে দলের সিনিয়র ফুটবলারদের দ্বন্দ্বের কথা সামনে এসেছিল তখনই। তবুও বাটলারকেই আগামী এক বছরের জন্য এই দায়িত্বে রেখে দিয়েছে বাফুফে। তবে গত দুই দিন তার অধীনে অনুশীলন বয়কটের পর আজ (বৃহস্পতিবার) আনুষ্ঠানিকভাবে সাবিনা খাতুন-মনিকা চাকমারা জানালেন, বাটলার কোচের পদে থাকলে আর খেলবেন না তারা, দিয়েছেন গণ অবসরের হুমকি।
আজ সন্ধ্যায় বাফুফে ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কোচ বাটলারের বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানিসহ নানান অভিযোগ এনে তার অধীনে আর না খেলার ঘোষণা দিয়েছেন সাবিনারা। এক লিখিত বক্তব্যে মোট ১৮ নারী ফুটবলার জানান, বাটলারের অধীনে খেলার চেয়ে তারা অবসরকেই প্রাধান্য দেবেন।
সাবিনা খাতুন, মনিকা চাকমা, শামসুন্নাহার, সানজিদা আক্তার, ঋতুপর্ণা চাকমা, মাসুরা পারভীনদের মতো সিনিয়র ফুটবলারদের স্বাক্ষরিত ‘নারী জাতীয় ফুটবল দলের হেড কোচ পিটার বাটলার ইস্যু নিয়ে আমাদের অবস্থান, প্রশ্ন এবং যত অভিযোগ’ শীর্ষক সেই লিখিত বক্তব্যে একযোগে অবসরের ঘোষণা দেন তারা।
সেই বক্তব্যে ফুটবলাররা লিখেছেন ‘যেহেতু গত অক্টোবরের পর কোন ফুটবলারের সঙ্গে বাফুফে কোন চুক্তি নবায়ন করেনি, তাই আইনত বাফুফে আমাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রাখে না। তারপরও যদি সেরকম কিছু করার সিদ্ধান্ত হয় এবং পিটার বাটলারকেই রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তে বাফুফে অনড় থাকে, তবে আমরা একযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য হব। ভেবে নিব, দেশের নারী ফুটবলে আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।’
লিখিত বক্তব্যের শেষে বাফুফে সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন নারী ফুটবলাররা, ‘আমরা আশা করছি বাফুফের মাননীয় সভাপতি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে আশু সমাধানের ব্যবস্থা নেবেন। এর আগ পর্যন্ত আমরা পিটারের অধীনে কোন ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশ নেব না।’
চুক্তি নবায়নের পর বাটলার ছুটিতে ইংল্যান্ড থাকায় গত ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অনুশীলন ক্যাম্পে সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমানই অনুশীলন করাচ্ছিলেন মেয়েদের। অবশ্য বাটলার গত সোমবার ফেরার পর পরদিন তার অধীনে অনুশীলনে যাননি দলের সিনিয়র ফুটবলাররা। এমনকি কোচের ডাকা মিটিংয়ের জন্যও সাড়া দেননি তারা কেউ। সেই ধারাবাহিকতায় গতকালও অনুশীলনে অনুপস্থিত ছিলেন সবাই। আজ অনুশীলন না করে কেবল জিম সেশনে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা।
এর আগেও বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে অনুশীলন বয়কট করেছিলেন সাবিনারা। সেই প্রসঙ্গে বাফুফের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান কামরুল হাসান হিলটন গতকাল বলেন বলেন, ‘খেলোয়াড়দের উপর নির্ভর করে তো আর ফেডারেশন চলবে না। আমাদের ম্যানেজমেন্ট আছে, নির্বাহী কমিটির সদস্যরা আছেন তারা সকলে মিলে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। যেহেতু তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখানে খেলোয়াড়দের কোনো কথা চলবে না।’
বাটলারের অধীনে খেলতে না চাওয়াসহ আরও বেশ কিছু দাবি দাওয়া আছে নারী ফুটবলারদের। গত বছরের অক্টোবরে নেপালকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার নারী সাফের শিরোপা জেতা সাবিনা-মনিকারা বাফুফে থেকে সর্বশেষ অক্টোবরেই বেতন পেয়েছেন। চুক্তি নবায়ন না হওয়াতে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও বেতন হয়নি নারী ফুটবলারদের। নতুন করে চুক্তি কবে হবে, এই ব্যাপারেও কিছু জানায়নি বাফুফে।
এর সাথে যুক্ত হয়েছে সুযোগ থাকার পরেও মেয়েদের বিদেশি লিগে খেলতে না দেওয়ার বিষয়টি। গত সাফের পরই ইউরোপের ক্লাব থেকে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাবিনা-ঋতুপর্ণারা। কিন্তু বাফুফের আপত্তিতে সেবার খেলতে যেতে পারেননি তারা। সেই ক্ষোভও কাজ করেছে মেয়েদের অনুশীলন বর্জনে। আর এই সব কিছুর এই বিস্ফোরণ ঘটল আজ পিটার বাটলারকে কেন্দ্রে রেখে।
সারাবাংলা/জেটি