বড় দলগুলোর বিপর্যয়; ফিফা রেফারির বিশ্লেষণ
১৯ জুন ২০১৮ ১৯:৫০ | আপডেট: ১৯ জুন ২০১৮ ১৯:৫৫
আব্দুল আজীজ, সাবেক ফিফা রেফারি
বড় দলগুলোর হোঁচট খাওয়া এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ঘটনা। এর আগে কখনোই এমন হয় নি যে, জার্মানী, ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা ৩ টি দল একই বিশ্বকাপে জয় ছাড়া শুরু করল। বিষয়টা অনেকের কাছে অস্বাভাবিক লাগছে, তবে এটা যে না ঘটার মত কোন ঘটনা , তা না।
ফুটবল ৯০ মিনিটের মাঠের খেলা, সবসময় এখানে নামের ভারের দল জিতবে ব্যাপারটা তা না। বরং আমার কাছে মনে হয়েছে বড় দলগুলোর সমন্বের অভাব থেকে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বিশ্বের সেরা খেলোয়ার মেসির কথাও আনা যায়। আমার কেন জানি মনে হয় আর্জেন্টিনার অন্য খেলোয়াড়রা মেসির চোখের ভাষা পড়তে পারে না যা বার্সালোনার প্লেয়াররা পারে। তাই সঠিক সমন্বয়ের অভাবে আর্জেন্টিনাকে ভুগতে হয়।
অনেকে বলবে, আর্জেন্টিনা গতবার ফাইনালে খেলেছে, কিন্তু কোয়ার্টারে প্রথম ৬ মিনিটে বেলজিয়ামের সাথে গোলের পর দীর্ঘসময় আর্জেন্টিনা গোল দেয় নি। অথচ বার্সালোনায় মেসি পারলে ফুঁ দিয়েও গোল দেয়। যদি সঠিক সমন্বয় মিলে, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ অবশ্যই জেতা উচিত, মেসির মত প্লেয়ার থাকতে তারা বিশ্বকাপ জিতবে না, জিনিসটা অনেকের মত আমাকেও পীড়া দেয়।
বড় দলগুলোর খেলোয়াড়দের মধ্যে কিছুটা ক্লান্তি ভাবও চলে আসতে পারে, মাঝারী দল বলতে আমরা যাদের বুঝাতে চাচ্ছি তাদের সাথে এখনকার বড় দলগুলোর একটা পার্থক্য এরা খেলোয়ারদের ক্যাম্পে অধিক সময় পায়, ফলে কম্বিনেশন করতে সুবিধা হয়। ফুটবল শুধু ইন্ডিভিজুয়াল ব্রিলিয়ান্সের না, এটা দলীয় খেলা, একজনের চোখের ভাষা আরেকজনকে বুঝতে হয়, প্লে-মেকার কখন বলটি সামনে দিবে তা শট নেওয়ার আগেই স্ট্রাইকারদের মাঝে মাঝে বুঝে ফেলতে হয়। এই ব্যাপারগুলো ঘটে একসাথে অনেকদিন ধরে প্র্যাকটিস করলে। অথবা একজনের আরেকজনকে বুঝার ক্ষমতায় ভুল থাকলে।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আমরা বড় দল বলতে বুঝি যারা বিশ্বকাপ জিতেছে। এখন যারা বিশ্বকাপ জিতে নি তারা কি কখনো জিতবে না বা চ্যাম্পিয়ান দলদের রুখে দিবে না? খেলায় হারজিত তো নির্ভর করে নির্দিষ্ট দিন যে ভাল খেলবে তার উপর। এই জায়গায় অন্য দলগুলো দেখিয়ে দিয়েছে। তারা বড় দলগুলোর বিপক্ষে স্ট্র্যাটেজি বানিয়েছে, কৌশল বানিয়েছে, তা কাজেও লাগিয়েছে। সুইজারল্যান্ডের নেইমারকে আটকে রাখার পরিকল্পনা কাজে লেগেছে, এক মুহূর্তও স্বস্তিতে থাকতে দেয় নি তাকে। আইসল্যান্ড মেসিকে তার স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেয় নি, নিজেদের শরীরের গঠনকে চমৎকার ভাবে কাজে লাগিয়েছে। আর মেক্সিকো গতিযুদ্ধে পরাস্ত করেছে জার্মানীকে। জার্মানীও অবশ্য তাদের স্বাভাবিক গতির খেলা দেখাতে পারে নি।
ইংল্যান্ডও প্রায় ড্র করে ফেলেছিল, ইনজুরি টাইমে কেইনের গোলে জিতে গেল। আগের গোলটিও তার দেওয়া। সে অবশ্য সুযোগ নষ্টও করেছে। তবে স্ট্রাইকারদের জানতে হয় কখন কোথায় থাকতে হয়, সে সেটা খুব ভাল বুঝে। এই রিপোর্ট লেখার সময় জাপান আর কলম্বিয়ার খেলা দেখছি। গতবার এই দুই দলের মোকাবিলায় জাপান পাত্তাই পায় নি। এবার শুরুতেই গোল দিল। খেলার চার মিনিটের মধ্যে লাল কার্ড পেল সানচেজ। এর থেকে দ্রুত লালকার্ড দেখেছিলাম ১৯৮৬ বিশ্বকাপে উরুগুয়ের খেলায়। ১ মিনিটেই কার্ড খেয়ে গিয়েছিল সেবার।
লেখা শেষ করতে করতে কলম্বিয়া গোল ফেরত দিয়েছে। তবে যে ফাউলে ফ্রিকিক দিল তা আদৌ জাপান করেছে কি না বুঝলাম না। তারপরেও বলবো এই বিশ্বকাপে বড় বড় চমক অপেক্ষা করছে।
শ্রুতিলিখনঃ রাসয়াত রহমান জিকো