Friday 07 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বরিশালের টানা দুই নাকি চিটাগংয়ের প্রথম?

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৩০

ফাইনালের আগে ট্রফির সাথে ফটোসেশনে দুই দলের অধিনায়ক

টেবিল টপার হয়ে বিপিএলের প্লে অফে এসেছিল বরিশাল। প্রথম কোয়ালিফায়ারে চিটাগং কিংসকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার উঠল ফাইনালে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় ফাইনালে বরিশালের প্রতিপক্ষ আবারও সেই চিটাগং। যারা এক যুগ পর বিপিএলে ফিরেই করেছে বাজিমাৎ, খেলবে বিপিএলে তাদের দ্বিতীয় ফাইনাল। গত আসরে শিরোপা জেতা বরিশালের এবারে চ্যালেঞ্জ সেটা ধরে রাখা।

অন্যদিকে চিটাগংয়ের চ্যালেঞ্জ এক যুগ আগের সেই অধরা কাজটা সম্পন্ন করে প্রথমবারের মতো বিপিএল ট্রফি জেতা। ২০১৩ সালের বিপিএলে ফাইনালে উঠলেও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কাছে হেরে রানার আপ হয়েই থামতে হয় তাদের। মাঝের আসরগুলোতে তাদের বদলে চট্টগ্রাম থেকে ভিন্ন ভিন্ন আসরে খেলেছে ভিন্ন দুটো দল; চিটাগং ভাইকিংস ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স নামে। এই দুই দলও ঘুচাতে পারেনি চট্টগ্রামের শিরোপা খরা। দুই দলের ভিন্ন দুই চ্যালেঞ্জ হলেও মূল লক্ষ্য শিরোপা জেতা।

বিজ্ঞাপন

ডাবল রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে লিগ পর্বে দুইবার, প্লে অফে একবার। এখন পর্যন্ত মোট তিনবার মুখোমুখি হয়েছে বরিশাল ও চিটাগং। আজ এক আসরে চতুর্থবারের মতো একে অন্যের বিপক্ষে মাঠে নামছে দুই দল। সব মিলিয়ে ফাইনালের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে বিপিএলের ৩৯ দিনের ক্রিকেট উৎসব।

ফরচুন বরিশাল

পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকেই প্লে অফে উঠেছিল ফরচুন বরিশাল

আসরজুড়ে বেশ ধীরস্থির-গোছানো ক্রিকেট খেলে এসেছে বরিশাল। সরাসরি চুক্তি আর ড্রাফট মিলিয়ে দেশি-বিদেশি তারকাদের সমন্বয়ে বেশ ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়েছিলেন তামিম ইকবালরা। যেখানে শাহীন শাহ আফ্রিদির মতো বিদেশি তারকা খেলে গেছেন,  ডাভিড মালান, মোহাম্মদ নবী, ফাহিম আশরাফ, কাইল মায়ার্সরা দারুণ অবদান রেখেছেন দলের ফাইনাল পর্যন্ত যাত্রায়। সাথে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, তাওহিদ হৃদয়, নাজমুল হোসেন শান্তর মতো স্থানীয় তারকারা তো ছিলেনই। আর সবার ওপরে তামিম ইকবালের অধিনায়কত্ব, পুরো দলটাকে এক সুতোয় গেঁথেছেন, বের করে এনেছেন সেরাটা।

বিজ্ঞাপন

ফাইনাল পর্যন্ত এই যাত্রায় খুব বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি বরিশালকে। গ্রুপ পর্বে সব মিলিয়ে হেরেছে তিনটা ম্যাচ। এর মধ্যে দুটোই তখন জয়রথ ছোটানো রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। আর সর্বশেষটি হেরেছে চিটাগংয়ের বিপক্ষে। ১২ ম্যাচে ৯ জয়ে ১৮ পয়েন্ট, নেট রান রেটেও সবার ওপরে। প্লে অফের মতো মঞ্চে খেলতে যে আত্মবিশ্বাস বা টিম স্পিরিটের প্রয়োজন; সেটা বরিশাল পেয়েছে লিগ পর্ব থেকেই।

বরিশালের সাফল্যের টনিক কী? গত মৌসুমে শিরোপা জেতা দলের অনেকেই আছেন এবারের বিপিএলে। এই দলে পারফর্মার আছেন, ব্যর্থতার দিনে কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতো ক্রিকেটারও আছেন। তাওহিদ হৃদয় শুরু থেকে ব্যাট হাতে রান না পেলেও শেষদিকে এসে জ্বলে উঠেছেন। ফাহিম আশরাফ ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার দৌড়ে, নতুন বলে নিজের কার্যকারিতা দারুণভাবে প্রমাণ করেছেন কাইল মায়ার্স।

তবে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল সফলতার জন্য বেছে নিয়েছেন শান্ত থাকার মন্ত্রকে। গতকাল সংবা সম্মেলনে বরিশাল অধিনায়ক বলেন, ‘যে দল বেশি শান্ত থাকবে তারই জেতার চান্স বেশি। আমি কোয়ালিফায়িং এ অনেক নার্ভাস ছিল। আমি আগের ২ বার ফাইনাল খেলেছি। অত বেশি চিন্তিত থাকি না ফাইনালে। আশা করি কালকের দিনও এভাবে যাক। ফাইনাল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি শান্ত থাকতে না পারেন, চাপে পড়ে যান, তখনই ভুল করবেন। শান্ত থাকা দলই বেশি সুযোগ পাবে।’

চিটাগং কিংস

এক যুগ পর বিপিএলের ফাইনালে চিটাগং কিংস

এক যুগ পুরনো মালিকপক্ষের অধীনেই বিপিএলে ফিরল চিটাগং কিংস। আর প্রত্যাবর্তনটাও হলো কী দুর্দান্ত! গ্রুপ পর্ব, প্লে অফ পেরিয়ে একেবারে ফাইনাল। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খুলনা টাইগার্সকে হারিয়েছে রোমাঞ্চকর এক শেষ ওভারে।

অবশ্য স্কোয়াডের নানান সীমাবদ্ধতাও ছিল আসরজুড়ে। মাঠের বাইরের নানান ইস্যুতেও মালিকপক্ষ পড়েছে সমর্থকদের রোষানলে। পারভেজ হোসেন ইমন অভিযোগ করেন পারিশ্রমিক না পাওয়ার। দলটির মালিক সামির কাদের চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার টাকা গাছে ধরে না।’ এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য ভালোভাবে নেয়নি বিসিবি। শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন চিটাগং কিংসের মালিক।

এর আগে সরাসরি চুক্তিতে সাকিব আল হাসান, মঈন আলীদের দলে টেনেছিল তারা। ড্রাফট থেকে নিয়েছিল শ্রীলংকান অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেল্প ম্যাথিউজেরও। অবশ্য রাজনৈতিক জটিলতায় সাকিব দেশে না ফেরায় তাকে ছাড়াই শুরু হয় চিটাগংয়ের বিপিএল যাত্রা। এর সাথে বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ হওয়াতে সাকিবকে খেলতে হতো শুধু ব্যাটার হিসেবেই। ওদিকে মঈনও আসেননি শেষ পর্যন্ত, অনাপত্তিপত্র জটিলতায় খেলা হয়নি ম্যাথিউজের। তবে আরেক লংকান পেসার বিনুরা ফার্নান্দো এবার হয়ে উঠেছেন কিংসের পেস আক্রমণের মূল অস্ত্র।

যদিও পাকিস্তানের উসমান খান, হায়দার আলী, মোহাম্মদ ওয়াসিমরা খেলে গেছেন এবার। বিদেশি কোটায় গ্রাহাম ক্লার্কও বেশ ভরসা জুগিয়েছেন দলকে। দেশি তারকাদের মধ্যে পারভেজ হোসেন ইমন, শামীম পাটোয়ারি, শরীফুল ইসলাম, আলিস আল ইসলামের মতো তরুণদের সাথে আরাফাত সানি, মোহাম্মদ মিঠুনের অভিজ্ঞতাও রেখেছে দারুণ ভূমিকা।

তবে সাকিব না থাকায় বেশ ভুগেছে চিটাগং। আদর্শ কম্বিনেশনটাও খুঁজে বের করতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রতিটি ম্যাচই তারা খেলেছে মাত্র ছয় ব্যাটার নিয়ে। শেষ পাঁচ ব্যাটারের সবাই বোলার। এই সীমাবদ্ধতা বেশিরভাগ ম্যাচেই শামীমের ব্যাটে চড়ে উতরে গেছে তারা। ধারাবাহিক না হলেও হায়দার আলীও ঝলক দেখিয়েছেন শেষ দিকে। পাওয়ারপ্লে আর ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বাঁহাতি পেসার বিনুরা। শুরুর দিকে একটু নিষ্প্রভ থাকলেও শেষে এসে ছন্দে ফিরেছেন শরীফুল ইসলাম। পেসার খালেদ আহমেদের আছে ২০ উইকেট। আলিসের সাথে সানির স্পিন জাদুতেও শুরুর দিকে ম্যাচ জিতেছে চিটাগং। মাঝেমধ্যে নাঈম ইসলামের বুড়ো হাড়ের ভেলকি, অধিনায়ক মিঠুনের ক্যামিওতেও ঝলক দেখিয়েছেন।

সেরা কম্বিনেশন খুঁজে না পাওয়ার সীমাবদ্ধতা নিয়ে সে চিটাগংই উঠল ফাইনালে। তাই তো কোচ শন টেইট বিশ্বাস করছেন, নিজেদের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখলে ফাইনালে ম্যাজিক্যাল কিছু সম্ভব। গতকাল টিম হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে কিংস কোচ বলেন, ‘দারুণ একটি ম্যাচ জিতেছি। আপনি যদি স্কোয়াডের ওপর বিশ্বাস তৈরি করতে পারেন, ম্যাজিক হতেই পারে। আমরা প্রায় একই দল নিয়ে খেলেছি পুরো আসর। খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। ভালো কাজগুলো ধরে রেখেছি। কিছুটা ভাগ্যও পক্ষে আসতে হয়। যা আমরা পেয়েছি। টুর্নামেন্টজুড়ে আমরা বেশ ভালো ক্রিকেট খেলেছি। তাই এখানে (ফাইনাল) থাকা আমাদের প্রাপ্য’

সারাবাংলা/জেটি

চিটাগং কিংস তামিম ইকবাল ফরচুন বরিশাল ফাইনাল বিপিএল ২০২৫ মোহাম্মদ মিঠুন

বিজ্ঞাপন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩৬

আরো

সম্পর্কিত খবর