পাকিস্তানকে উড়িয়ে জয়ে শুরু নিউজিল্যান্ডের
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৫৯ | আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৩৯
ঘরের মাঠ, চেনা দর্শক, চির পরিচিত আলো হাওয়া। তবুও জয়ের সহজ সমীকরণ মেলানো হলো না পাকিস্তানের। রান তাড়ায় নেমে খেলতে পারল না পুরো ৫০ ওভারও। আজ (বুধবার) করাচিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০ রানে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করলেন মোহাম্মদ রিজওয়ানরা। কিউইদের দেয়া ৩২১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৭.২ ওভারে ২৬০ রানে অল আউট হলো স্বাগতিকরা।
এই জয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাকিস্তানের কাছে অজেয় হয়েই রইল নিউজিল্যান্ড। এখন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে দুই দলের চারবারের মুখোমুখি দেখাতে সবগুলো ম্যাচই জিতল কিউইরা। এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে উইল ইয়াং আর টম ল্যাথামের জোড়া সেঞ্চুরির সাথে গ্লেন ফিলিপসের ঝড়ো ফিফটিতে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২০ রানের বড় সংগ্রহ পায় ব্ল্যাকক্যাপসরা। সেই রান পাহাড়ে চাপা পড়েই এমন শোচনীয় হার পাকিস্তানের। ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল খুশদিল শাহ। যদিও তার ৪৯ বলে ৬৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস বৃথা গেছে বাকি ব্যাটারদের কেউ দাঁড়াতে না পারায়। বাবর আজমের ব্যাটিং এপ্রোচও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ৯০ বল খেলে ৬৪ রান করেছেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
অথচ কদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের ম্যাচে ৬ বল হাতে রেখে ৩৫২ রানের বিশাল লক্ষ্য টপকে গিয়ে রেকর্ড গড়া এক জয় পেয়েছে পাকিস্তান। দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে সেই ম্যাচ জিতিতে দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন রিজওয়ান আর আঘা সালমান। আজ সালমান ২৮ বলে ৪২ রানে ইনিংসে বড় কিছুর ইঙ্গিত দিলেও ব্যর্থ হয়েছেন অধিনায়ক রিজওয়ান। পাকিস্তান অধিনায়কের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৩ রান। অবশ্য ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে গ্লেন ফিলিপস তার ক্যাচটা যে ক্ষিপ্রতায় তালুবন্দী করেছেন, তাতে নিজেকে খানিকটা দুর্ভাগা ভাবতেও পারেন রিজওয়ান।
যদিও রান তাড়ায় নেমে পাকিস্তানের দুর্ভাগ্যের শুরু ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই। ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোট পাওয়ায় ওপেন করা হয়নি ফখর জামানের। তার বদলে বাবর আজমের সাথে পাঠানো হয় সৌদ শাকিলকে। উইল ও’রোর্কের বলে শট খেলতে থার্ডম্যানে ম্যাট হেনরির হাতে ক্যাচ দেন তিনি। তিনে নেমে রিজওয়ানও সুবিধা করতে পারেননি, ও’রোর্কের দ্বিতীয় শিকার তিনি। চারে নামা ফখর জামান চাপে পড়েছেন বাবরের ধীরগতির ব্যাটিংয়ের জন্য। ২১ ও ২২তম ওভারে আট বল থেকে কোনো রানই বের করতে পারেননি বাবর। সেই চাপ উৎরাতে অ্যাটাকিং শটের চেষ্টায় আউট হয়েছেন ফখর।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে সালমানের সাথেও অবশ্য ৫৯ বলে ৫৮ রানের একটা জুটি হয়েছে বাবরের। যেখানে সালমানের অবদানই বেশি। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ঠিকই আক্রমণ শানাচ্ছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটার। তবে ২৮ বলে ৪১ রানে থামতে হয় তাকে নাথান স্মিথের বলে ক্যাচ দিয়ে। বাবর ফিরেছেন মিচেল স্যান্টনারের বলে কেইন উইলিয়ামসনের কাছে ক্যাচ দিয়ে।
এরপর শেষের লড়াই কিংবা পরাজয়ের ব্যবধান কমানো, এই কাজটা পাকিস্তানের হয়ে করে গেছেন খুশদিল। সাত নম্বরে নেমে ৪৯ বলে ১০ চার ও এক ছক্কায় ৬৯ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। শর্ট লেংথ কিংবা মাথা বরাবর ধেয়ে আসা বাউন্সারগুলোতে দারুণ সব পুল-হুক খেলেছেন অনায়াসে। তার ব্যাটিংই সাক্ষ্য দিচ্ছিল আজ টপ অর্ডার ব্যাটারদের নিষ্প্রভতার।ও রোর্কের তৃতীয় শিকার খুশদিল। তাকে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে মাইকেল ব্রেসওয়েলের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
শেষদিকে নাসিম শাহ আর হারিস রউফের ধুন্দুমার হিটিংয়ে আসা কয়টা ছক্কা অবশ্য বিনোদন দিয়েছে দর্শকদের। হারিস একাই মেরেছেন তিনটা ছক্কা, নাসিমের ব্যাট থেকে এসেছে একটি। তিনটি করে উইকেট নেন ও’রোর্ক ও স্যান্টনার। বাবরের পর তৈয়ব তাহির ও হারিসের উইকেট নেন কিউই অধিনায়ক স্যান্টনার।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে প্রত্যাশিত শুরু না পেলেও উইল ইয়াং আর টম ল্যাথামের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচে ফেরে নিউজিল্যান্ড। ৪০ রানের মধ্যে ডেভন কনওয়ে আর কেইন উইলিয়ামসনকে হারালে দুজন মিলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে তোলেন ১২৬ বলে ১১৮ রান। ইনিংস ওপেন করতে নেমে ১২ চার ও এক ছক্কায় ১১৩ বলে ১০৭ রানের ইনিংস খেলে ইয়াং ফিরেছেন নাসিম শাহর বলে ক্যাচ দিয়ে। ইয়াংয়ের বিদায়ের পর নিউজিল্যান্ড বাকি পথটা পার হয়েছে ল্যাথামের ব্যাটে। পঞ্চম উইকেটেও রান তুলেছেন ঝড়ের বেগে। ফিলিপসের সাথে ৭৪ বলে ১২৫ রানের জুটিতেই ম্যাচে ফেরে কিউইরা।
এই জুটি গড়ার পথেই নিজের অষ্টম সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ল্যাথাম। ১০ চার ও তিন ছক্কায় ১০৪ বলে ১১৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন এই বাঁহাতি ব্যাটার। সব মিলিয়ে পঞ্চম কিউই ব্যাটার হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেঞ্চুরি করেছেন ল্যাথাম। তালিকার চতুর্থ অবস্থানে ইয়াং।
ইয়াং একটু রয়েসয়ে খেললেও ল্যাথাম আর ৩৯ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলা ফিলিপস রীতিমতো তাণ্ডব বইয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানি বোলারদের ওপর। দুটি করে উইকেট পেলেও বেশ খরুচে ছিলেন দুই পেসার নাসিম ও হারিস। নাসিম ১০ ওভার বল করে ৬৩ রান দিলেও হারিস খরচ করেছেন ৮৩ রান। শাহীন শাহ আফ্রিদিও সেরা ছন্দে ছিলেন না। কোটার ১০ ওভারে ৬৮ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট শূন্য।
সারাবাংলা/জেটি
আইসিসি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল পাকিস্তান ক্রিকেট দল