সিসে যেন মহল্লার বড় ভাই
২১ জুন ২০১৮ ১৫:০৭ | আপডেট: ২১ জুন ২০১৮ ১৫:৩৫
স্পোর্টস ডেস্ক ।।
এবারের বিশ্বকাপের কুইজের প্রশ্ন হতে পারে এটি-রাশিয়া বিশ্বকাপের সবথেকে কম বয়সী কোচ কে? উত্তরটা হবে-৪২ বছর বয়সী সেনেগালের কোচ অ্যালিও সিসে। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার এই কোচকে দেখে বুঝার উপায় নেই, তিনি একটি জাতীয় দলকে নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছেন। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফেভারিট পোল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে সিসের ছাত্ররা। সেই ম্যাচে সিসেকে ডাগআউটে দেখা গেছে এমনভাবে যেন, মহল্লার বড় ভাই তার ছোটো ভাইদের খেলার মাঠে নামিয়ে দিয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন।
বিশ্বকাপে কোচের দায়িত্ব পালন করা সিসের থেকে বয়সে বড় সার্বিয়ার ম্যালাডেন ক্র্যাস্টাজেক ও বেলজিয়ামের রবার্তো মার্টিনেজ। তাদের দুজনেরই বয়স ৪৪। ক্যামেরার চোখে বিশ্বের অগনিত ফুটবল ভক্ত এবার দেখছেন ডাগআউটে থেকে সিসের দুরন্তপনা, স্টাইলিশ দিক-নির্দেশনা।
২০০২ সালের জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপের কথা হয়তো এখনো অনেকেরই মনে আছে। সেনেগাল প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছে ২০০২ সালে। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথম বিশ্বমঞ্চে অংশ নিয়ে উদ্বোধনী ম্যাচেই তখনকার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে দেয় সেনেগাল। শুধু তাই নয়, সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্তও পৌঁছে গিয়েছিল আফ্রিকান এই দেশটি। সেটিই তাদের প্রথম ও শেষ বিশ্বকাপ। এরপর আর বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠতে পারেনি সেনেগাল। আফ্রিকা মহাদেশের ইতিহাসে মাত্র তিনটি দেশ এখন পর্যন্ত কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে পেরেছে। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ক্যামেরুন, ২০০২ বিশ্বকাপে সেনেগাল এবং ২০১০ বিশ্বকাপে ঘানা খেলেছে শেষ আটে। গর্ব করার মতোই ব্যাপার সেনেগালের জন্য।
সেই আলোচিত বিশ্বকাপে সেনেগালের হয়ে খেলেছিলেন বিশ্বকে চমকে দেওয়া ফুটবলার আল হাজি দিওফ, মুসা এনদায়ি, পাপা বুওবা দিওপ, দেশটির সর্বোচ্চ ম্যাচ এবং সর্বোচ্চ গোলদাতা হেনরি কামারা, টনি সিলভারা। সেই গোল্ডেন টিমের অধিনায়ক ছিলেন সিসে। খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি ছিলেন ডিফেন্ডার, খেলেছিলেন মিডফিল্ডার হিসেবেও। ১৯৯৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত খেলেছেন ক্লাব ক্যারিয়ারে। জাতীয় দলে খেলেছেন ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত। সেনেগালের জার্সিতে ৩৫ ম্যাচ খেলা সিসে ক্লাবের হয়ে খেলেছেন লিলে, সেডান (দুই কিস্তিতে), পিএসজি, মন্টিপিলিয়ার, বার্মিংহাম সিটি, পোর্টসমাউথ, নিমেসের জার্সিতে। ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের ক্লাব গুলোতে মাঠ মাতানো সিসে খেলেছেন ১৫৩টি ম্যাচ।
সিসের হাত ধরে আরেকবার ক্রান্তিকাল পার করেছে সেনেগাল। দ্বিতীয়বারের মতো ফিফা বিশ্বকাপের ২১তম আসরে জায়গা করে নিয়েছে দেশটি। সেনেগাল অনূর্ধ্ব-২৩ এর দায়িত্ব ছাড়ার পর কোচ হিসেবে মূল দলে সিসে দায়িত্ব নিয়েছেন ২০১৫ সালে। ফের একবার গর্জে উঠেছে আফ্রিকা মহাদেশের এ দেশটি। আফ্রিকা থেকে মিশর, মরক্কো, নাইজেরিয়া, তিউনিশিয়া এখনও জিততে না পারলেও প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম জয় পেয়েছে সিসের শিষ্যরা। পোল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে শুরু করেছে বিশ্বকাপ। এবার ফুটবলার হিসেবে সিসে উপস্থিত না থাকলেও সাদিও মানেদের কোচ হিসেবে তিনি রয়েছেন ডাগআউটে। কোচ হিসেবে ২০০২ সালের পর আরেকটি সেরা প্রজন্ম সিসের হাতে। তার বিশ্বাস এবার ইতিহাস গড়ার সময় এসেছে সেনেগালের।
যথেষ্ট ব্যালেন্সড দল এবার সিসের সেনেগাল। একই সাথে অনেকদিন ধরে খেলোয়াড়দের অনুশীলন করিয়েছেন সিসে। যার কারণে দলের বোঝাপড়াটাও চমৎকার। খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছাব্বিশ থেকে সাতাশের মধ্যে। বলতে গেলে সিসের দলে তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার এক অপূর্ব সমন্বয়। সিসে এবার যে দল নিয়ে বিশ্বকাপে গিয়েছেন, বড় কিছুর আশা দেখতেই পারে সেনেগাল। আক্রমণে সাদিও মানে নিজের সেরা সময় কাটাচ্ছেন লিভারপুলে, তুলনা করা হচ্ছে এল হাজি জিওফের সঙ্গে। সাখো, কোয়েটারাও প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত খেলছেন। রক্ষণে নাপোলির কাইদু কুলিবালি এই মুহূর্তে ইউরোপের সেরাদের একজন। বাছাইপর্বে সেনেগাল হারেনি একটা ম্যাচেও, দক্ষিণ আফ্রিকা, বুরকিনা ফাসোর গ্রুপ থেকে হেসেখেলে উঠেছে বিশ্বকাপে।
এবার আফ্রিকার সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা হতে পারে সিসের সেনেগালই। খেলোয়াড়ি জীবনে দেশের জার্সিতে যেভাবে লড়েছেন,কোচ হিসেবে এই দলটাকেও ঠিক সেভাবেই গড়েছেন। নিজের সবকিছু দিয়ে হলেও সেনেগালকে দিয়ে আরেকটি রূপকথার গল্প তৈরি করাতে চেষ্টা করবেন সিসে-সে কথা বলাই যায়।
সারাবাংলা/এমআরপি