Saturday 15 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইপিএলকে টেক্কা দিতে সৌদির ৫০০ মিলিয়নের লিগ

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
১৫ মার্চ ২০২৫ ২৩:২১

প্রতীকি ছবি

ভারতের আইপিএল, বাংলাদেশের বিপিএল, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ, পাকিস্তানের পিএসএল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিপিএল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএল টি-টোয়েন্টি কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ-টোয়েন্টি; বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগের ছড়াছাড়ি। এর সাথে বিভিন্ন দেশের টি-টেন লিগগুলো আছেই। বছরজুড়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ফাঁকা সূচি কাজে লাগিয়ে মাঠে গড়ায় এসব লিগ। বিশ্বের নানান দেশের ক্রিকেটাররা ভিড় জমান সেসব লিগে, এমনকি একজন ক্রিকেটার প্রায় সমান্তরালেও খেলে থাকেন বিভিন্ন লিগে। সবগুলো লিগের মধ্যে ব্র্যান্ড ভ্যালু, ক্রিকেটের কোয়ালিটি, তারকার ক্রিকেটের মেলা, অর্থকড়ি, চাকচিক্য মিলিয়ে এগিয়ে কেবল ভারতের আইপিএল। কদিন পরেই মাঠে গড়াবে লিগটির আঠারোতম আসর।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যেই আজ (শনিবার) ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ আর ‘দ্য এজ’র খবর, আইপিএলকে টেক্কা দিতে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্রিকেট লিগ আনছে সৌদি আরব। সৌদি আরব আর ক্রিকেট; ভিন্ন মেরুর দুই জিনিসই বটে। হ্যাঁ, বিশাল অঙ্কের আর্থিক চুক্তির বিনিময়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমার, সাদিও মানে, করিম বেনজেমা-সহ ইউরোপের আরও কিছু তারকা ফুটবলারদের সৌদি প্রো লিগে টেনে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে বটে। এর সাথে গলফ, ফর্মুলা ওয়ান রেস কিংবা ২০৩৪ ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়াটাও আলোড়ন ফেলেছে। কিন্তু ক্রিকেটে আলাদা লিগ চালু করে ফেলবে সৌদি আরব, তাও আইপিএলকে পাল্লা দিতে! বেশ নড়েচড়েই বসতে হয় এই কথা শুনে। চলুন একটু খুঁটিনাটি জেনে আসা যাক-

বিজ্ঞাপন

সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের অধীনে ‘এসআরজে স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টের’ তত্ত্বাবধানে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের নতুন লিগ আনতে চাচ্ছে সৌদি আরব। যেখানে থাকবে আটটি দল। টুর্নামেন্টের ফরম্যাট হবে টেনিসের চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের আদলে। বছরজুড়ে যেভাবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ইউএস ওপেন, উইমম্বলডন ও ফ্রেঞ্চ ওপেন খেলা হয়, ঠিক সেভাবে বিশ্বের চারটি ভিন্ন জায়গায় লড়বে আট দল। আর যার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে সৌদি আরবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মধ্যে ফাঁকা সময় দেখেই লিগটি চালু করতে চান আয়োজকরা।  এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে আইসিসির সাথে আলোচনা চলছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ফ্র্যাঞ্চাইজি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ক্রিকেট খেলুড়ে শীর্ষ দেশগুলো থেকে একটি করে দল চাইবে আয়োজকরা। অস্ট্রেলিয়া থেকে একটি দল থাকার সম্ভাবনা প্রবল। ক্রিকেটের নতুন ও বড় বাজার তৈরি করতে নারী ও পুরুষদের আলাদা লিগের কথাও ভাবছে তারা।

প্রস্তাবিত এই লিগ মাঠে নামাতে বছরখানেক ধরে গোপনেই কাজ করে যাচ্ছেন নিল ম্যাক্সওয়েল, যিনি নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়ার হয়ে খেলেছেন পেশাদার ক্রিকেট। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করছেন। একইসাথে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনে ও ক্রিকেট নিউ সাউথ ওয়েলসের সাবেক বোর্ড সদস্য। সেই পরিচিতি ও যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে লিগকে আলোর মুখ দেখাতে চাইছেন ম্যাক্সওয়েল। যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারদের সবাই কমবেশি ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত। ম্যাক্সওয়েলের মস্তিষ্কপ্রসূত লিগের পৃষ্ঠপোষকতা করবে এসআরজে স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট। এই সংস্থার নেতৃত্বে আছেন আরেকজন অস্ট্রেলিয়ান ড্যানি টাউনসেন্ড, যিনি অস্ট্রেলিয়ার সাবেক সকার এক্সিকিউটিভ।

পরিকল্পনার সাথে আরও যুক্ত টুর্নামেন্টের আয়ের উৎস, যার বিশাল একটা অংশ উঠে আসে সম্প্রচার সত্ত্ব থেকে। সেই ভাবনাও দূর করার উপায় আছে প্রস্তাবিত লিগটির। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের শীর্ষ ব্রডকাস্টিং চ্যানেলেরও আংশিক স্বত্ব কিনে নিয়েছে সৌদির পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড; যেখান থেকে আদৌতে  আসে এসআরজে স্পোর্টসের যাবতীয় আর্থিক তহবিল।

ব্রডকাস্টিংয়ের হ্যাপা মেটানোর ব্যবস্থা না হয় করে রেখেছে আয়োজকরা। কিন্তু ক্রিকেটারদের আর্থিক প্রাপ্তি কেমন হবে? অঙ্কটা এখনও জানা যায়নি, যেহেতু প্রাথমিক অবস্থায় আছে লিগটি। তবে তাদের লক্ষ্য ক্রিকেটারদের জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা। ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর আয় নির্ভর করে আইসিসি থেকে পাওয়া অর্থের ওপর। যার প্রায় পুরোটাই প্রায় আসে সম্প্রচারস্বত্ব থেকে। সম্প্রচারস্বত্ত্বের সিংহভাগ আইসিসি আয় করে ভারতের ক্রিকেট বাজার থেকে। অর্থাৎ না চাইলেও আইসিসি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারতের ওপর নির্ভরশীল, সাথে যুক্ত আছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো বড় দলও। ক্রিকেটে যারা ‘বিগ থ্রি’ নামেই পরিচিত।

‘বিগ থ্রি’র সেই চক্র ভেঙে সৌদি আরব চাইছে নতুন রাজস্ব মডেল বানাতে। আইসিসি থেকে পাওয়া অর্থ অনেকাংশেই অপ্রতুল হয় নেদারল্যান্ডস-কানাডার মতো ছোট দলগুলোর জন্য। তাই প্রস্তাবিত লিগ থেকে আয়কৃত অর্থ পাবে ছোট দেশগুলো। আইসিসির ফান্ড ছাড়াও এটা হতে পারে তাদের জন্য বিকল্প আয়ের উৎস। ক্ষেত্রবিশেষে ‘অলাভজনক’ ক্রিকেট ছেড়ে গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টে খেলতে আগ্রহী হবে ছোট দলগুলো, এমনই আশা আয়োজকদের।

এখন অপেক্ষা আইসিসি এবং  ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী তিন বোর্ডের অনুমোদনের। যদিও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দেবেন আইসিসির নতুন চেয়ারম্যান ও বিসিসিআইয়ের সাবেক সেক্রেটারি জয় শাহ। এই গ্র্যান্ড স্ল্যাম লিগ হতে পারে ক্রিকেটের গেম চেঞ্জার; একইসাথে জয় শাহর সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক। কীভাবে? আর্থিকভাবে আইসিসি এবং ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো তো লাভবান হবেই, সাথে ক্রিকেটের বিশ্বায়নেও রাখতে পারে বড় ভূমিকা। ভারতের ক্রিকেটাররা আইপিএল ছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো লিগে খেলার সুযোগ পান না। সেক্ষেত্রে ভারতের নামিদামি তারকারা যদি এই লিগে খেলার সুযোগ পান, সেক্ষেত্রে মিডিয়া, স্পন্সর, বড় ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে ক্রিকেট ঘেষা সকল প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ জন্মাবে সেদিকে।

অবশ্য এই লিগ অনুমোদন পেলে সৌদি আরবের বিনিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠবে, হতে পারে সমালোচনাও। বিশ্বমঞ্চে জোর আলোচনা আর গুঞ্জন আছে, ফুটবল, গলফ কিংবা ফর্মুলা ওয়ানের সম্মিলিত অঙ্কটা আসছে সৌদি আরবের পাবলিক ফান্ড থেকে। প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে অভিযোগও আছে কেবল সুনাম ছড়ানোর জন্যই রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবহার করে ক্রীড়াঙ্গনে বিনিয়োগ করছেন তিনি। একে বলা হচ্ছে সালমানের ‘স্পোর্টসওয়াশিং’

ফুটবলে এশিয়া কিংবা বিশ্বকাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সৌদি আরব এখনও আইসিসির সহযোগী সদস্য। তবে ক্রিকেট নিয়ে যে তাদের বড় পরিকল্পনা আছে, সেটা কিছুটা হলেও বোঝা গেছে এবারের আইপিএলের দুই দিন ব্যাপী মেগা নিলামের আয়োজক হওয়ার পর। মধ্য প্রাচ্যের এই দেশটির ক্রিকেট কাঠামো বলতে সেই অর্থে এখনও গড়ে উঠেনি। তবে দারুণ বিভিন্ন শহরে  আড়ম্বরে চলছে মাঠ নির্মাণের কাজ। কে জানে, হয়তো আইপিএলের মতো বড় লিগকে পাল্লা দিতে সেটাও তাদের পরিকল্পনারই অংশ।

সারাবাংলা/জেটি

আইপিএল আইপিএল ২০২৫ আইসিসি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর