পানামাকে বিধ্বস্ত করে শেষ ষোলোতে ইংল্যান্ড
২৪ জুন ২০১৮ ১৯:১১ | আপডেট: ২৪ জুন ২০১৮ ২০:০২
।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।
এবারের আসরের অন্যতম ফেভারিট ইংল্যান্ড। ‘জি’ গ্রুপের ম্যাচে ইংলিশরা মুখোমুখি হয় পানামার। ৬-১ গোলের বিশাল জয়ে শেষ ষোলোতে জায়গা নিশ্চিত করলো ইংলিশরা, বিদায় নিতে হলো প্রথমবার খেলতে আসা পানামাকে। ইংল্যান্ডের জার্সিতে অধিনায়ক হ্যারি কেইন হ্যাটট্রিক করেন। জন স্টোনস দুটি, জেসে লিনগার্ড একটি করে গোল করেন। পানামার হয়ে একমাত্র গোলটি করেন ফিলিপ ব্যালয়।
আগের ম্যাচে তিউনিসিয়াকে হারানোয় টানা দুই ম্যাচ জিতে ৬ পয়েন্ট তুলে নিয়েছে হ্যারি কেইনের দল। অন্যদিকে, বেলজিয়ামের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হেরে অনেকটা পিছিয়ে মাঠে নামে নবাগত পানামা। নিঝনি নভগোরদ স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হয় বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায়। এই গ্রুপ থেকে বেলজিয়ামের পর ইংল্যান্ড নকআউট নিশ্চিত করলো, পানামার সঙ্গে বিদায় নিতে হলো তিউনিসিয়াকে।
ম্যাচের শুরুতেই ইংলিশদের রক্ষণ চিঁড়ে আক্রমণ করেছিল পানামা। পঞ্চম মিনিটে ইংলিশ বক্সে ফাঁকায় বল পেলেও পোস্টের অনেকটা বাইরে দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন আনিবাল গোদয়। অষ্টম মিনিটে লিড নেয় ইংল্যান্ড। সেট পিস থেকে উড়ে আসা বলে হেড করেন জন স্টোনস (১-০)। ম্যানচেস্টার সিটির ২৪ বছর বয়সী ডিফেন্ডারের হেড করা বল পানামার গোলরক্ষক পেনেডোকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়।
১৬ মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগ এসেছিল পানামা শিবিরে। বার্সানেসের জোরালো শট রুখে দিতে সমস্যা হয়নি এভারটনে খেলা ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডের। ১৯ মিনিটের মাথায় পানামার বক্সে ফাউল করা হয় লিগগার্ডকে। পেনাল্টি লাভ করে ইংল্যান্ড। দলের অধিনায়ক হ্যারি কেইন শট নিয়ে দলকে ২-০ গোলে এগিয়ে নেন। ৩২ মিনিটের মাথায় রাহিম স্টারলিংকে ফাউল করলে ফ্রি-কিক পায় ইংল্যান্ড। কিয়েরন ত্রিপারের উড়িয়ে মারা শট থেকে হেড করেন হ্যারি ম্যাগুয়ের। বল গিয়ে পানামার জালের উপরের অংশে পড়ে। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে ইংল্যান্ডের তৃতীয় গোলটি করেন জেসে লিনগার্ড (৩-০)। স্টারলিংয়ের অ্যাসিস্ট থেকে পানামার ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ২৫ বছর বয়সী মিডফিল্ডার লিনগার্ড। বল পানামার গোলরক্ষক পেনেডোকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়।
ম্যাচের চতুর্থ আর নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন জন স্টোনস। ৪০ মিনিটের মাথায় ইংল্যান্ড ৪-০ গোলের লিড নেয়। ৪৩ মিনিটে আরও একটি পেনাল্টি লাভ করে ইংল্যান্ড। শট নেন অধিনায়ক কেইন। রাশিয়া বিশ্বকাপে চার নম্বর গোল করলেন কেইন। তার গোলে ৫-০ গোলের লিড নেয় ইংলিশরা। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে এই স্কোর নিয়েই মাঠ ছাড়ে ইংল্যান্ড।
বিরতির পর স্টারলিংয়ের জোরালো শট রুখে দেন পানামারা গোলরক্ষক পেনেডো। ৬২ মিনিটের মাথায় হ্যারি কেইন হ্যাটট্রিক করেন। তার ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট পানামার জালে জড়ালে ৬-০ গোলের লিড নেয় ইংলিশরা। এরপরই মাঠ থেকে উঠে যান ইংলিশ দলপতি কেইন। তার জায়গায় মাঠে নামেন জ্যামি ভার্ডি আর একই সময়ে লিনগার্ডের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন ফ্যাবিয়ান ডেলফ।
৬৪ মিনিটের মাথায় পানামার তারকা মাইকেল মুরিলোর দারুণ শটে পরাস্থ হন ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড। তবে, শেষ মুহূর্তে বল ক্লিয়ার করে দলকে রক্ষা করেন জন স্টোনস। ৭৩ মিনিটে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন জর্ডান হেন্ডারসন। ফ্রি-কিক থেকে উড়ে আসা বল হেড করেন ম্যাগুয়ের, সেখান থেকে বল পান ফাঁকায় দাঁড়ানো হেন্ডারসন। ইংলিশদের দলপতির দায়িত্ব পাওয়া হেন্ডারসনের জোরালো শট পানামার গোলবারের ঠিক বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
৭৫ মিনিটের মাথায় পানামার সুযোগ ছিল ব্যবধান কমানোর। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেড করেন ডেভিস, সেখান থেকে কোণায় দাঁড়ানো রোমান তোরেস বল পেয়েও গোলবারের বাইরে শট নেন। ৭৮ মিনিটে ফিলিপ ব্যালয়ের গোলে ব্যবধান কমায় পানামা (৬-১)। রিকার্ডো অ্যাভিলার দারুণ শটে বল পান ব্যালয়, সেখান থেকে পায়ের আলতো টোকায় ইংলিশদের জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি। ৮২ মিনিটের মাথায় পানামার ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন স্টারলিং, তবে পোস্টের গাঁ-ঘেষে বল চলে যায়। ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে ৬-১ ব্যবধানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা।
প্রতিবারই কাগজে কলমে শিরোপা জেতার মতো দল নিয়ে বিশ্বকাপে গেলেও হোঁচট খেয়ে ফিরতে হয় ইংল্যান্ডকে। তাই ইংলিশদের বিশ্বকাপ অভিযান মানেই আক্ষেপ আর হতাশার প্রতিশব্দ। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ জয়টাই শুধু ঝুলি ভারী করে আছে। তবে এবার কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের দলটা অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও একেবারেই যে খারাপ তা বলা যাবে না। একঝাঁক তরুণকে নিয়ে সাজানো ইংলিশদের আছে স্টারলিং, ডেলে আলীরা আর দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব পাওয়া হ্যারি কেইন।
তিউনিসিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে উজ্জ্বল ছিলেন কেইন। ম্যাচের শুরুতে একবার আর ম্যাচ শেষের ঠিক আগে আরেকটি গোল করেন তিনি। তার জোড়া গোলেই সেই ম্যাচে তিউনিসিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ মিশনটা ভালভাবেই শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে ১৪ বার অংশ নিয়ে দুইবার সেমিফাইনাল এবং একবার ফাইনাল খেলে ১৯৬৬ সালে শিরোপা জিতেছিল ইংলিশরা। বিশ্বকাপে ১৯৫০ সালে প্রথম এবং ২০১৪ সালে শেষবার অংশ নিয়েছিল তারা।
অন্যদিকে, উত্তর আমেরিকার দেশ পানামা এবারই প্রথম বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে। প্রথম ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে বড় ব্যবধানে (৩-০) হেরে যায় তারা। ইংলিশদের বিপক্ষে এই ম্যাচেও পিছিয়েই ছিল উত্তর আমেরিকার দেশটি। রাশিয়া অভিযানে বেশিদূর যাওয়ার মতো গোলাবারুদ তাদের নেই। গোলপোস্টের নিচে থাকা জেইমি পেনেডো পানামার ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়ে নিজের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রেখেছিলেন। কোচ হার্নান গোমেজের দলটির উদ্দেশ্য অভিজ্ঞতা অর্জন, তাই পুরো বিশ্বকাপে চাপ ছাড়াই খেলছে পানামা।
সারাবাংলা/এমআরপি