কাঙ্খিত গোলটি পেয়ে গেছে জার্মানি, এখন শুধুই এগিয়ে যাওয়া
২৫ জুন ২০১৮ ১৯:৪৫ | আপডেট: ২৫ জুন ২০১৮ ২০:০৮
।। মাহমুদ মেনন, নির্বাহী সম্পাদক ।।
নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে জার্মানি যখন সুইডেনের সঙ্গে ১-১… আর ম্যাচ গড়িয়ে শেষ মিনিটে… তখন সকলের মনের গভীরে এই ভাবনা স্পষ্ট…. গেলোবারের চ্যাম্পিয়নদের পাততারি গোটাতে হচ্ছে গ্রুপ পর্বেই। আর তখনই টনি ক্রুসের গোলটা ভক্ত-অনুসারী দর্শকদের আনন্দের বন্যায় ভাসালো।
গোল হয়েছে খেলা শেষের অতিরিক্ত সময়েরও সবশেষ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে। আর সে ফ্রি-কিকের কৌশলটি ছিল অনন্য সাধারণ। স্বস্তি যে কেবল জার্মান শিবিরেই নামলো তা নয়… গোটা বিশ্বের তাবত ফুটবল প্রেমীর কেউ একজনও হয়তো এখনও চান না… কিংবা প্রত্যাশা করেন না… ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা বাদ পড়ে যাক শুরুতেই। শত হোক জার্মানি একটি জায়ান্ট দল আর তারা বাদ পড়লে বিশ্বকাপের অনেক সৌন্দর্য যেমন হারিয়ে যাবে… তেমনি প্রতিযোগিতাও স্তিমিত হয়ে আসবে। যৌলুস হারাবে এই আসর, সে কথাও অনেকেই মানেন।
এটা সত্য জার্মানরা আগেই বলতে শুরু করেছেন, এমন দলের বাদই পড়া উচিত ছিলো। প্রথম ম্যাচে হারার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ড্র করে মাঠ ছাড়ার উপক্রম হলে… অভিমানী দেশবাসী সে কথা বলতেই পারে। কিন্তু ক্রুসের গোল পাল্টে দিলো সকল সমীকরণ। এখন জার্মানি তার স্ব-শক্তিতে ফেরত এসেছে।
সেটা অবশ্য শনিবারের ম্যাচেই টের পাওয়া গেছে। ম্যাচে ১-০ পিছিয়ে পড়ার পর যে জার্মানিকে ফুটবল ভক্তরা দেখেছে… মূলত সেটাই জার্মানি। এক জোট হয়ে আক্রমন শানানো, অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া এসবইতো ফুটবলের মূল নীতি। জার্মানি সেই নীতি মেনেই খেলেছে।
বুধবার (২৭ জুন) গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে জার্মানির প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া। সহজ প্রতিপক্ষ এ কথা বলা যাবে না, তবে এটা ভেবেই নেওয়া যায় কোরিয়াকে হারাতেই পারবে জার্মানি আর নকআউট পর্বেও যাচ্ছে তারা। গত ম্যাচে যেভাবে নিজেদের ফর্মে ফিরেছে এই ইউরোপীয় দলটি সেভাবে চলতে থাকলে আর খেলার মান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখলে…বিশ্বকাপের এই আসরেও তারা যাবে অনেক দূর। সেটা করতে জার্মানির যোগ্যতা ও মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রশ্নই ওঠে না।
তবে এটা সত্য এবারের বিশ্বকাপে টিকে গেলে পরের ম্যাচগুলোতে তাদের খেলার মান বাড়ানোর কোনও বিকল্প নেই। শনিবারের ম্যাচটিতে কিন্তু একটা গোছানো শুরুই আমরা দেখেছি জার্মান দলে। কিন্তু অ্যান্টোনিও রুডিগের প্রথম ভুলটি করে ফেলার পর গোটা দলটিকে ঠিক বিপদগ্রস্ত লাগছিলো। হঠাৎ করেই দলের কাঠামো আর খেলার পরিকল্পনা যেনো উবে গেলো। ভাগ্য বললেও অত্যুক্তি হবে না… কারণ ম্যানুয়েল নয়্যার যেভাবে ডান দিকে ঝাপিয়ে পড়ে গোলবারের বাইরে বলটিকে পাঠালেন তা না পারলে নয়্যারকে দুষবার কিছু ছিলো না…। আর সে গোলটি হয়ে গেলে জার্মানি নিজেকে আবিষ্কার করতো ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা দল হিসেবে। তাতে এবারের বিশ্বকাপের ইতিহাস ভিন্নভাবেই লিখতে হতো।
বাঁচোয়া যে দ্বিতীয়ার্ধের গোড়ার ভাগেই মার্কো রেউস খেলায় সমতা নিয়ে এলেন। আর তারপর থেকেই সব কিছুই যেনো স্বাভাবিক হয়ে এলো। জার্মানিও ফিরে এলো তার নিয়মিত ফর্মে। একের পর এক আক্রমণ শানালো। ম্যাচের শেষ মিনিটে হলেও ক্রুস দেখিয়ে দিলেন বড় বড় ঘটনায় তিনিই আসল ব্যক্তিটি, যাকে প্রয়োজন। বিশেষ করে দল কিন্তু তখন দশ জনের। জেরোমি বোটেং তার কিছুটা আগেই লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে। এমন একটি সময়ে মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রেখে… শান্ত ভাবখানা বজায় রেখে জয়সূচক গোলটি করা কম খেলোয়াড়ের পক্ষেই সম্ভব। ক্রুস সেটা করে দেখিয়েছেন।
বুধবারে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জার্মান দলে পরিবর্তন আসবে বড় ধরনের। বোটেং খেলতে পারছেন না লাল কার্ডের বদৌলতে। ম্যাটস হিমুয়েল ইনজুরি নিয়ে প্রথম থেকেই সাইডবারে… এবার বুঝি তাকেই নামতে হবে। সেবাস্টিয়ান রুডিকে শনিবারের স্কোয়াডে আকস্মিক সিদ্ধান্ত নামিয়েছিলেন জোয়াকিম লো… কিন্তু তারও বুঝি আর পরের ম্যাচটি খেলা হবে না। বিশ্বের কোটি চোখে দেখেছে ম্যাচের প্রথমার্ধেই রুডির নাক ভাঙ্গার দৃশ্য।
মেসুত ওজিলকে অবশ্য ফের দেখা যেতে পারে। সুইডেনের বিপক্ষে তাকে কেনো নামানো হলো না… সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এখনো জার্মানবাসীর অজানা। বড় ম্যাচে ওজিল থাকবেন না এটা সাধারণত হয় না। জার্মানি বিশ্বকাপ আসরের যতটা ভেতরে ঢোকে ওজিল ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন দলের জন্য এমনটাই কিন্তু হয়ে আসছে।
যা কিছুই হোক… শনিবারের শেষ মূহূর্তের জয় জার্মানিদের মুড বদলে দিয়েছে। জার্মানির স্কোয়াড নিয়ে কারো সন্দেহমাত্র থাকার কথা নয়। বেশ কয়েকজন রয়েছে যারা অভিজ্ঞ… আর তাদের খেলার সর্বোচ্চটা এখনো দেওয়া বাকি। সুতরাং আসছে ম্যাচগুলোতে আমরা এক ভিন্ন জার্মনিকে দেখতে পাবো।
একটি গোল সব কিছু পাল্টে দিতে পারে… জার্মানি সেই কাঙ্খিত গোলটি পেয়ে গেছে… এখন শুধুই এগিয়ে যাওয়া।
সারাবাংলা/এমএম