Thursday 16 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিষয়টি ‘আর্জেন্ট’-ই না!


৪ জুলাই ২০১৮ ১৮:২২ | আপডেট: ৪ জুলাই ২০১৮ ১৯:০৩

।। অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ।।

আমি লিখি মনের আনন্দে। লিখি অনিয়মিত, এলেবেলে, যা খুশি তা। পড়েন হয়তো কেউ কেউ, কখনো কখনো, পড়েন না হয়তো অনেক বেশি। এতে অবশ্য আমার লেখার উৎসাহে কমতি পরেনা। সুযোগ পেলেই লিখি। এই যেমন এখন লিখছি ঢাকার জ্যামে বসে। আমার লেখালেখির পরিধিটাও সীমিত। খুব বেশি কিছু নিয়ে লিখি না। গত বই মেলায় যখন আমার প্রবন্ধ সংকলনটি প্রকাশিত হলো তখনও এ নিয়ে আমার প্রকাশকের কুঞ্চিত ভ্রু দেখেছি। লিখি না বলে বরং বলা উচিত লিখতে চাই না। এমনিতেই ছাইপাশ যা খুশি লিখে পাঠকদের যে অত্যাচার করছি তার পরিধিটা আর বাড়াতে চাই না। তবুও মাঝে মধ্যে না লিখে পারি না। টুকটাক লিখে ফেলি এটা-সেটা নিয়ে। এই যে লম্বা ভূমিকা, তার কারণ এই লেখাটিও তেমনি একটা বিষয়ে। এটা আমার লেখালেখির নিয়মিত পরিধির বাইরে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে উম্মাদনা তুঙ্গে গিয়ে এখন কিছুটা নিন্মগামী। প্রিয় দলের বিদায়ে ম্রিয়মান এদেশের অগনিত ফুটবল ভক্ত।

১৯৭১’র ডিসেম্বর মাস- বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধ তখন তুঙ্গে। ভারত সবেমাত্র যুদ্ধে সরাসরি যোগ দিয়েছে, যদিও ২৬ মার্চ থেকেই তারা প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনী আর বাঙ্গালী শরনার্থীদের সামরিক এবং বেসামরকি সহায়তা প্রদান করে আসছিল।

৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান বিমান বাহিনী এক যোগে ভারতের বেশ কিছু বিমান ঘাটিতে বিমান হামলা চালালে ভারতের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। গঠিত হয় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ড। মিত্র বাহিনীর প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণে পিছু হটেছে পাকিস্তানিরা, পতন হয় একের পর এক পাকিস্তানি অবস্থানের। পাকিস্তানের পরাজয় যখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, এমনি সময়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতির একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করে। এ প্রস্তাবটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কোন উল্লেখ ছিল না। যুদ্ধের কারণ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙ্গালী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ‘অপকর্মকে’ দায়ী করা হয়েছিল। প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছিল ভারতীয় সেনা বাহিনীকে ২৬ মার্চ পূর্ববর্তী আন্তর্জাতিক সীমান্তে ফিরে যেতে হবে আর পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের অংশই রয়ে যাবে। বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের এই প্রস্তাবের উপর আলোচনার সুযোগ দেয়া হয়নি। জাতিসংঘে তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শ্রী সমর সেন তখন খেদভরে নিরাপত্তা পরিষদে বলেছিলেন, ‘প্রস্তাবটির উপর বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে বক্তব্য রাখার সুযোগ না দেয়া আর ডেনমার্কের যুবরাজ ছাড়া হ্যামলেটের মঞ্চায়ন একই কথা’। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোতে মার্কিন প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

এরপরই নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়ন এ বিষয়ে একটি পাল্টা প্রস্তাব উত্থাপন করে। এতে যুদ্ধের কারণ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বরতাকে দায়ী করা হয়। এবার প্রস্তাবটিতে ভেটো দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।

ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষনে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত হয় পাকিস্তানের সমর্থনে মার্কিন মদদপূষ্ট দ্বিতীয় প্রস্তাবটি। না, এটি উত্থাপক যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্স নয়। এ দুটি দেশই মার্কিন মিত্র হওয়া সত্ত্বেও নিরাপত্তা পরিষদে তাদের ভেটো তো প্রয়োগ করেইনি, বরং প্রতিবারই ভোট দানে বিরত ছিল। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল নিরাপত্তা পরিষদের এমন একটি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র যার সাথে আমাদের চালচুলোর সম্পর্ক ছিল না কোন দিনই, এখনও নাই। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে লোকে দেশটির নাম জানে, তবে ও দেশের কেউ আমাদের চেনে কিনা সন্দেহ! তাদের আনন্দে আমরা আনন্দিত হই, মিছিল করি আর তাদের ব্যর্থতায় কাটে আমাদের বিনিদ্র রজনী। আমাদের ঘরে ঘরে, ছাদে ছাদে আর আমাদের শরীরে শোভা পায় তাদের পতাকা, তবে আমি নিশ্চিত জানি আমাদের পতাকা তো দূরে থাক, তাদের কেউ চেনেও না আমাদের মাশরাফি-সাকিবদের। দেশটির নাম আর্জেন্টিনা!

সেদিন আর্জেন্টিনা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের সমর্থনে যে প্রস্তাবটি এনেছিল, এক সপ্তাহর মধ্যে দ্বিতীয় সোভিয়েত ভেটোতে তা যদি বাতিল না হত তাহলে আজকের বাংলাদেশ থাকতো না। এ ভূখন্ডে আজও উড়তো পাকিস্তানের পতাকা। নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত যে কোন প্রস্তাব জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের মেনে চলা বাধ্যতামূলক। সংগত কারণেই প্রস্তাবটি পাশ হলে ভারতকে পূর্ব পাকিস্তান তার বাহিনী প্রত্যাহার করে নিতে হতো, আর এক কোটি বাঙ্গালী আজও পশ্চিমবঙ্গ আর ত্রিপুরার শরনার্থী শিবিরে ‘রোহিঙ্গা’ জীবন যাপন করত।

বর্নবৈষম্যবাদনীতির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দীর্ঘদিন ছিল একঘরে। তাদের সাথে বছরের পর বছর ক্রিকেট খেলেনি কেউ, যতদিন না তারা নাকে খত দিয়ে সরে এসেছে তাদের সেই নীতি থেকে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইসরাইলকে খেলতে হয় ইউরোপের গ্রুপে। প্যালেস্টাইনের অসহায় মানুষগুলোর প্রতি ইসরাইলি বর্বরতার এই হচ্ছে এশিয়ার জবাব। আমি জানি বিষয়টি অনেকের কাছে ‘আর্জেন্ট’-ই না! তবুও মনে হয় ওদের প্রতি আমাদের জবাবটাও একটু অন্য রকম হওয়া উচিত ছিল।

সারাবাংলা/পিএম

বিজ্ঞাপন

নিখোঁজ শিশুর মরদেহ মিলল ডোবায়
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৫৩

বন্ধুকে দেখতে ছুটে গেলেন শাহরুখ
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪৯

আরো

সম্পর্কিত খবর