জিকোর দেশের মানুষদের ঢাকায় ‘জিকো’ দর্শন
২২ জুন ২০১৮ ১৪:২৮ | আপডেট: ২২ জুন ২০১৮ ১৬:২৩
।।মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর।।
ক্লেটন কনসারভানি, ইগোর আবরেইউ ও তাদের ক্যামেরা ক্রু মিখায়েল বেনটো। এই তিন ব্রাজিলীয় সংবাদকর্মী এখন বাংলাদেশে। বিশ্বকাপ ফুটবল এলেই বাংলাদেশে ব্রাজিলকে নিয়ে যে মাতামাতি শুরু হয়, তা তারা শুনেছেন। এবার এসেছেন স্বচক্ষে দেখতে। আর তা নিয়ে খবর বানাতে। সেসব খবর নিতে নিতেই তারা শুনলেন বাংলাদেশে একটি নাম খুব শোনা যায়- জিকো।
জিকো, ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার। ১৯৮২ ও ‘৮৬র সবচেয়ে শক্তিশালী দলটি নিয়ে বিশ্বকাপে গিয়েছিল ব্রাজিল দল। সেই দলের মধ্যমণি ছিলেন জিকো। ’৮২ র বিশ্বকাপে ইতালির সঙ্গে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছিলো জিকোর ব্রাজিল। তবে তখনও আশা বাঁচিয়ে রাখে ’৮৬র বিশ্বকাপ জেতার। কিন্তু কপালের লিখনে সে বিশ্বকাপ জয়ও হলো না জিকোর। কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের ৮৬ মিনিটে প্যানাল্টি মিস করেন জিকো। বাকরুদ্ধ দর্শক, বাকরুদ্ধ বিশ্ব। জিকো যে ফ্রি কিকেরই জাদুকর, কীভাবে প্যানাল্টি মিস করলেন তিনি!
‘৮৬র পরে ‘৯০র বিশ্বকাপ। এর আগে স্বাভাবিক নিয়মেই অবসরে যান জিকো। ফলে বড় কাপ সবই অধরাই রয়ে যায় তার। অন্য কেউ হলে কী হতো তা বলা মুশকিল কিন্তু খ্যাতি কখনও পিছু ছাড়েনি জিকোর। হোয়াইট পেলে নামে খ্যাত এই ফুটবলারের নামটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের দেশে দেশে। আর সেই থেকে বাংলাদেশেও জিকো নামটির প্রচলন। এবং এখন খুব শোনা যায়। ১৯৮২ থেকে ’৮৬ র যুগে জন্ম নেওয়া অনেক ছেলের নামই তাদের বাবা-মা রেখেছেন- জিকো।
ব্রাজিলের পেলে, রোমারিও, বেবেটো, ডুঙ্গা, রোনালদো, রিভালদো, রোনালদিনিওর মতো বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার রয়েছেন। তাদের নামগুলো শোনা যায় না। শোনা যায় জিকোরই নাম। কোনও কাপ ছাড়াই কিংবদন্তী জিকো। খোদ পেলেই বলেছেন, “আমার পরে যদি কেউ আমার মতো ফুটবল খেলেছে সে হচ্ছে জিকো।”
ঢাকায় আসা সাংবাদিকত্রয় গত ২০ জুন রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন। সেখানেই তারা জানতে পারেন বাংলাদেশে জিকোর ছড়াছড়ি। কথাটা খুব মনে ধরে ইগোরের। সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের জিকোদের নিয়ে স্টোরি করবেন। ২১ জুন তারা খুঁজে পান বাংলাদেশের তরুণ লেখক ও জনপ্রিয় ফেসবুকার রাসয়াত রহমান জিকোকে।
রাসয়াত রহমান জিকো লেখালেখির পাশাপাশি একজন পুরোদস্তুর ব্যাংকারও। কাজ করেন একটি রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকের শিল্প ঋণ বিভাগে।
বাংলাদেশের এই জিকোকে পেয়ে দারুণ খুশি ক্লেটন, ইগোর আর মিখায়েল।
হোটেল ওয়েস্টিনেই কথা হয় তাদের। সম্পূর্ণ কথোপকথন রেকর্ড করা হয় গ্লোবো টিভির দর্শকদের জন্য। ক্লেটন জিকোকে প্রশ্ন করলেন, তোমার নাম কী? স্কুল শিশুরা যেভাবে নাম বলে সেভাবেই চিৎকার দিয়ে জবাব- “আমার নাম রাসয়াত রহমান জিকো।”
লম্বা সময় ধরে চলে ক্লেটন আর জিকোর আলাপন। ক্লেটন জানতে চান আপনার নাম জিকো কেন? জিকো জবাব দেন, কারণ আমার বাবা ব্রাজিলের জিকোর বড় ভক্ত ছিলেন। তিনি তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে আমার নাম রেখেছেন জিকো।
৯০’র দশকে জন্ম নেওয়া আরও অনেক জিকো পাওয়া যাবে খুঁজলেই। রাসয়াত রহমান জিকো তার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্ট দেখাতে সক্ষম হন অন্তত আধাডজন জিকোকে। মাজহারুল ইসলাম জিকো, রিদওয়ান কবির জিকো, হাবিব হাসান জিকো… আরও কত জিকো।
ফুটবলার জিকোকে কেবল নামেই নয়, তাকে হৃদয়েও ধারণ করেন এই বাংলাদেশি জিকো। জিকো কবে কোন খেলায় কী করেছেন, এরপর কী হলো… সেসব তার জানা।
ক্লেটন অবশ্য এই ফাঁকে জানান ব্রাজিলের জিকো শিগগিরই বাংলাদেশে আসছেন। এতে জিকো তার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং বলেন সুযোগ পেলে তিনি দেখা করবেন জিকোর সঙ্গে।
এছাড়ওে ক্লেটন নিজের সঙ্গে আনা ব্রাজিলের জার্সি যাতে ব্রাজিলের সব খেলোয়াড়ের অটোগ্রাফ আছে সেটি পরতে দেন বাংলাদেশের জিকোকে। সেই জার্সি পরেও দারুণ খুশি রাসয়াত রহমান জিকো।
তবে তার চেয়েও বেশি খুশি ব্রাজিলীয় তিন সাংবাদিক। হয়তো এই ভেবে যে, এসব কনটেন্টে ‘গ্লোবো এসপোর্টসে’র জন্য একটি ভালো স্টোরি হবে।
সমগ্র লাতিন মুল্লুকেই গ্লোবোর বেশ জনপ্রিয়তা। আর বাংলাদেশে জনপ্রিয় লাতিন দুই দেশ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা।
সেসব নিয়ে খবর বানাতেই ব্রাজিল থেকে এই তিন সাংবাদিক এসেছেন বাংলাদেশে। বিশ্বকাপ শুরু হলেই এখানে বাড়িতে বাড়িতে ব্রাজিলের পতাকা ঝোলে। গায়ে গায়ে থাকে ব্রাজিলের জার্সি। সেই খবরই ব্রাজিলের মানুষদের কাছে পৌঁছাতে বাংলাদেশে এসেছেন তারা। তার পাশাপাশি ব্রাজিলীয়রা জানতে পারবে বাংলাদেশের জিকোদের কথাও।
ব্রাজিলের সাংবাদিকের চোখে নেইমারদের ভবিষ্যৎ
সারাবাংলা/এমএ/এমএম