Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ কার আশীর্বাদপুষ্ট?

সজীব ওয়াফি
৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৩৪

বছরের শেষ সময়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান। অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো নির্বাচনটি তেমন একটা আলোচনায় আসেনি। যদি ভুল না করি গুরুত্বপূর্ণ একটা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়ে গেলো, এটা রাজধানী কিংবা দেশের অন্য প্রান্তের সাধারণ নাগরিকেরা জানেনই না। কোথাও কোন সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, এজেন্ট বের করে দেওয়া, জাল ভোট বা একজনের ভোট আরেকজনে দেওয়া অথবা নির্বাচন পরবর্তী হামলা-পাল্টা হামলার অভিযোগ আসেনি। আসেনি নির্বাচনের পূর্বে কারো পোস্টার-ফেস্টুনস নষ্ট করার অভিযোগ। অবাক করা বিষয় হচ্ছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা মার্কার প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। লাঙ্গল প্রতীক বিজয়ী হলেও ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের ‘হাতপাখা’।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত আছে। রংপুরে তারা নির্বাচন করেনি। তবে কিছু কিছু জায়গাতে বিএনপির প্রভাবশালী দু’একজন নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে নির্বাচন করতে গিয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকার যাদের একজন। সেখানেও দেখা গেলো হাতপাখার বাতাস দেওয়ার প্রবণতা। বর্তমান সময়ে এসে কি নির্বাচন হচ্ছে সেটা বলার প্রয়োজন নেই, সকলেই জানি। ২০১৫ এবং ২০২০ সালের ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তো সকলে দিনের আলোতেই দেখেছে। নির্বাচন শেষ করে রাতে ফলাফলের একটা সংখ্যা ধরিয়ে দেওয়া হলো। সেই নির্বাচনগুলোতেও দেখা গেলো প্রাপ্ত ভোটে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিরকে পেছনে ফেলে তৃতীয় হয়েছে। ক্রমেই তাদের শক্তিকে দ্বিগুণ দেখানো হলো। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অভিযোগ আছে দিনের ভোট রাতে হওয়ার। যেখানে বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলোর মতো আদর্শিক পুরোনো পার্টির সমন্বয়ে একটা জোট নির্বাচনী কাঠামোর অর্থের কারণে সারাদেশে প্রার্থী দিতে পারল না। কিন্তু ইসলামি আন্দোলন যারা শতভাগ নিজেদের ভেতর থেকে এককভাবে সারাদেশের ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে বসে আছে!

বিজ্ঞাপন

সাম্প্রতিক সময়ের ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সমাবেশ লক্ষ্য করলে দেখা যায় তাদের উপস্থিতি তুলনামূলক বেড়েছে। চমৎকার ব্যাপার যে, সভা সমাবেশ করতে সরকারবিরোধী ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোও নানান বিধিনিষেধে পড়েছে, গ্রেফতার হয়েছে, রক্ত ঝরিয়েছে; কিন্তু ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ কোনো ধরনের সামান্যতম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়নি। তারা সভা করতে যখন যে জায়গা চেয়েছে সেটাই পেয়েছে। গুলিস্তান-মতিঝিলের ব্যস্ততম সড়কে সমাবেশ ছড়িয়ে পড়েছে, জনগণের চলাচলে ভোগান্তি হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকার কর্তৃক এমন বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার নূন্যতম মন্তব্যও আসেনি। বরং সরকারের নানা পর্যায় থেকে বাহবা পেয়েছে। বিপরীতে বাম-প্রগতিশীল সংগঠনগুলো প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ রক্ষা ও জাতীয় ইস্যুতে ছোট-বড় যত কর্মসূচি করেছে হয় পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হয়েছে; নয়তো সরকার দলীয় সংগঠনের হামলা-মামলার মুখোমুখি হয়েছে। বাম জোটের নেতাদের গলা টিপে ধরা হয়েছে মিছিল চলাকালীন। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকদের উপর কারণে অকারণে হামলে পড়েছে অসংখ্যবার। বিএনপিকে তো রেখেছে আদালতের বারান্দায়। আর একটা একটা করে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে দলীয় কর্মীদের লাশ।

সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার এবং বৃহৎ আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতা যার মূলনীতি। বিপরীতে ছিলো ধর্মের নামে মওদুদীবাদীদের নিজ ভূখন্ডের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে পাক হানাদার বাহিনীর ধর্ষণ লুটপাট অগ্নিসংযোগে সমর্থন দেওয়া। পর্দার আড়ালে ছিল ভুট্টো-ইয়াহিয়ার ক্ষমতার লড়াই। ধর্মের জয়ঢাক কেবল ওপর ওপর। তারা কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিল না। বাংলাদেশ ধর্মীয় মোড়কে আবদ্ধ হবে নাকি গণতন্ত্রের পথে হাটবে সে মিমাংসা হয়ে গিয়েছিলো রক্তক্ষয়ী নয় মাসের যুদ্ধেই। মনে রাখা উচিত এই দেশ কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে বর্গা দিতে স্বাধীন হয় নাই। অবস্থাদৃষ্টে এটা পুরোপুরি দৃশ্যমান যে, এই ভূখন্ডে যারাই নানান নামে নানা কৌশলে মৌলবাদ কায়েম ন্যস্ত আছে, ওরা আসলে ইসলাম নয়, নিজেদের হাতে শুধুমাত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে মরিয়া। ইসলাম সে তো শান্তির ধর্ম, সকল মানুষের কল্যাণের জন্য। ইসলাম হক কথা বলে, ন্যায্যতার পক্ষে লড়াই করে। কারও পদলেহন করার নাম ইসলাম নয়। ধর্ম বলে শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগের তার ন্যায্য পাওনা পরিশোধের কথা। সরকারের ভুল নীতি, বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতি, অতিমুনাফাখোর, আড়তদার এবং মজুদারদের কারণে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের হা-পিত্যেশ অবস্থা। স্বল্প পারিশ্রমিকে কারখানা শ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিক, শিল্প শ্রমিকদের সংসার টেকানোই দায়। শ্রমিকের ন্যায্য পারিশ্রমিকের দাবিতে ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে খাওয়া এই দলগুলো কখনো জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে? সুন্দরবনের মতো, সিআরবির মতো প্রাণ পরিবেশ ধ্বংসের প্রকল্প যখন হাজির হয় তখন তাদের খোঁজ মিলে না। তাদের খোঁজ মিলে না, ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টের ন্যায় সকল কালাকানুন বাতিলের আন্দোলনে। তাদের উপস্থিতি কেবল দান-সদগায়ে, কতজন মুরিদ বানানো যায় সেই তরিকায়।

বাংলাদেশ একটি গণতন্ত্রিক রাষ্ট্র। বহু ধর্ম, বর্ণ, জাতির সমাবেশ এখানে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। ইসলামি আন্দোলন কি সেটা মানতে পারবে? তাদের পথ তো সেটা বলে না। গত জাতীয় নির্বাচনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের মতো একটা জোটের নির্বাচনী পোস্টার রক্ষা পায়নি, নির্বাচনী প্রচারে কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন। বিএনপি তো ঘেঁষতেই পারেনি। অথচ সারাদেশে নির্বিঘ্নে হাতপাখার পোস্টার দেদারসে ঝুলেছিল। একটা পোস্টারে সরকার দলীয়রা সামান্য টোকা দিয়েছে এমন খবর শোনা যায়নি। আক্রমণ হয়নি তাদের কোনো কর্মসূচিতে। রাজনৈতিক দলগুলো যখন নির্বাচনের উপর অনাস্থা দিয়েছে, জনগণ যখন ভোটকেন্দ্র বিমুখ, সেই সময়েও তারা জাতীয় পার্টির সাগরেদ হয়ে ইসলামি শাসনতন্ত্র কায়েমের নামে নির্বাচনী বৈধতা দিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। এক্ষেত্রে গত জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার নির্বাচনী ব্যয়ের অর্থের উৎস কোথায় জানতে চাওয়া কি অপ্রাসঙ্গিক হবে? তারা কার আশীর্বাদ পেয়েছে? নাকি নির্বাচনকে বৈধতা দিতে এটা সাজানো কোন বিকল্প ছক! জাতীয় পার্টি কি ফেসভ্যালু হারিয়েছে ? মৌলবাদী রাজনীতির উত্থান ঘটিয়ে সরকার কি এই বার্তা দিতে চাচ্ছে যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মৌলবাদ বিরোধীরা আওয়ামী মঞ্চে যেকোনো মূল্যে একত্রিত হোক এবং সরকারের সমস্ত কার্যকলাপ সমর্থন করুক!

সকাল দেখেই কিছুটা অনুমান করা সম্ভব সারাটা দিন কেমন যাবে। যাদের শুরুটাই হয়েছে সুবিধাবাদ দিয়ে তারা যে কি রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তা তো বোঝাই যায়। সত্যি বলতে নীলনদের পানি যেমন নীল নয়, তেমনি ইসলামি আন্দোলনের ভেতরে ইসলাম নাই; আছে কেবল ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা। এরা ঘাপটি মেরে থাকা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতে থাকা শক্তি। এরা মুখে স্বাধীনতার চেতনার কথা বললেও আদতে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করে জামাত-হেফাজতের শিক্ষা নীতি চায়, তারা চায় নারীদের চার দেয়ালে আটকাতে। সরকার নিজেদের পক্ষে সমর্থন পেতে যদি সাজানো ছকে রাজনীতির খেলা খেলে থাকে তা হবে চরম আত্মঘাতী। মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার সাথে তা হবে দ্বিচারিতা। কোন চোরাগলির সমর্থনপুষ্ট হয়ে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ ফ্রন্টলাইনে আসলো তা সময়ই বলে দিবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ টপ নিউজ মুক্তমত সজীব ওয়াফি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর