Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চাকরি করায় ছুরিকাঘাত, চোখ হারালেন আফগান নারী পুলিশ


১০ নভেম্বর ২০২০ ২৩:০৭

৩৩ বছর বয়সী আফগান নারী খাতেরা। চাকরি করছেন দেশটির পুলিশ বাহিনীতে। আর সে কারণেই ছুরিকাঘাতে অন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাকে। হাসপাতালে যখন জ্ঞান ফেরে, তখন আর কিছু দেখতে পারছিলেন না। চিকিৎসকরা চোখে থাকা ব্যান্ডেজের কথা বললেও খাতেরা মনে মনে জানতেন, তিনি আর কখনোই দেখতে পারবেন না।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার আগে শেষ যে দৃশ্য তিনি মনে করতে পারেন তা হলো তিন মোটরসাইকেল আরোহীর আক্রমণের শিকার হচ্ছেন তিনি। ওই তিন ব্যক্তি তাকে ছুরিকাঘাত করেন, গুলিও করেন। হামলার ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি কর্মস্থল আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশের কেন্দ্রীয় পুলিশ স্টেশন থেকে বের হয়েছেন।

খাতেরা ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই হামলার জন্য তালিবান জঙ্গিদের দায়ী করেছে। কিন্তু তালিবানরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো মেয়েটির বাবাকে দায়ী করেছে। তাদের দাবি, ঘরের বাইরে কাজ করার অপরাধে তার বাবাই ভাড়াটে লোক দিয়ে খাতেরার ওপর হামলা করিয়েছেন।

খাতেরার জন্য এই আঘাত শুধু চোখ হারানোর নয়, একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু। কারণ এই চোখ দিয়েই তিনি একটি স্বাধীন ক্যারিয়ারের স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন ‍পূরণের পথেও এগিয়ে গিয়েছিলেন। কয়েক মাস আগেই নিয়োগ পেয়েছিলেন গজনি পুলিশের অপরাধ বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে।

‘যদি অন্তত একবছরও কাজ করতে পারতাম’,এই আক্ষেপ এখন খাতেরার কণ্ঠে। তিনি গণমাধ্যমকে বলছেন, ‘স্বপ্নের চাকরিটা মাত্র তিন মাস করতে পারলাম চাকরি। একবছরও যদি চাকরিটা করার সুযোগ পেতাম, তাহলেও কোনো আফসোস থাকত না।’

এদিকে, আফগানিস্তানের মানবাধিকারকর্মীদের ধারণা— নারীদের ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া তালিবানরাই এই আক্রমণ করে থাকতে পারে। এর আগেও তারা চাকরিজীবী নারীদের নানাভাবে সহিংস হয়রানি করেছে। খাতেরা একজন পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার কারণেও তার ওপর তালিবানরা হামলা করে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আফগানিস্তানের প্রচারক সামিরা হামিদি বলেন, ‘আফগান নারীরা সবসময়ই বিপদজ্জনক অবস্থায় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে সহিংসতাগুলো পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে নারীর অধিকার নিয়ে যে দুর্দান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে অবশ্যই তালেবানদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি ব্যাহত হওয়া উচিত না।’

ছোটবেলা থেকেই খাতেরার স্বপ্ন ছিল বাড়ির বাইরে কাজ করা। তবে বছরের পর বছর বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও কোনো ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিয়ের পর স্বামীর সমর্থন পেতে সক্ষম হন। কিন্তু তখনো তার বাবা তার চাকরি করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে গেছেন।

খাতেরা বলেন, ‘অনেকসময় দেখি, কাজে যাওয়ার সময় বাবা আমাকে অনুসরণ করছেন। এমনকি আমার চাকরি করা বন্ধ করতে আশপাশের তালিবানদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন।’

খাতেরার বাবা তালিবানদের কাছে তার এক কপি আইডি কার্ডও সরবরাহ করেছিলেন বলে অভিযোগ মিলেছে। খাতেরা বলছেন, তিনি যেদিন আক্রান্ত হন, সেদিন তার বাবা তাকে একাধিকবার ফোন করেন এবং কোথায় অবস্থান করছেন— সে তথ্যও জানতে চান।

গজনি পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তালিবানরাই এই হামলা ঘটিয়েছে বলে বিশ্বাস তাদেরও। তারা খাতেরার বাবাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছেন। এই হামলার সঙ্গে তিনি কোনোভাবে জড়িত কি না, তা জানার জন্য জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে তাকে। তবে রয়টার্স তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়নি। আর তালেবানদের একজন মুখপাত্র বলেন, তারা এই ঘটনা সম্পর্কে জানলেও তারা হামলায় জড়িত নয়।

এদিকে, খাতেরা তার পরিবারের পাঁচ শিশু নিয়ে কাবুলে আত্মগোপনে আছেন। সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। তবে মানসিকভাবে তিনি অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন। চাকরি হারানোর আক্ষেপ কোনোভাবেই মেটাতে পারছেন না। তবে তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন। কেননা, তার বাবাকে যে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, তার পেছনে খাতেরাকেই দায়ী করছেন তার মা।

খাতেরা চোখ অন্ধ করে দেওয়া ছুরিকাঘাত টপ নিউজ তালেবান পুলিশ কর্মকর্তা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর