Sunday 08 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বারেক সাহেবের ত্যাগের মহিমা


২৮ মার্চ ২০১৯ ১১:৪৩ | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ১১:৪৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্লাবের আড্ডায় সেদিন গোপাল ভাঁড়ের পুরনো চুটকিটা শুনে অনেক দিন পর অনেক হাসলেন বারেক সাহেব। প্রাণ খুলে হাসেন না অনেক দিন। ক্লাবের আলো-আঁধারির পরিবেশটা বোধ করি গোপাল ভাঁড়ের চুটকির আমেজটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। ইদানিং বারেক সাহেবের খুব একটা হাসা হয়ে ওঠে না। হাসতে যে মানা ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। কিন্তু হাসি আসলে তো হাসবেন। হাসি আসবে কোত্থেকে? সামনে-পিছনে, ডানে-বামে কোথাওতো হাসার কোন কারণ দেখেন না তিনি। চারপাশে অন্ধকার। একেকটা দিন যায় চোখের সামনে উড়ে বেড়ানো সরষে ফুলগুলো গুণতে গুণতে। গোনা তবু শেষ হয় না।

এখন থেকে প্রায় দুই যুগ আগের কথা। ক্ষমতায় তখন তারা। ভাবসাব এমন দাঁড়িয়েছিল মনে হতো ক্ষমতা যেন তাদের বাপ-দাদার তালুক। সূর্য উত্তরে উঠতে পারে তাও সম্ভব, কিন্তু তাদের ক্ষমতা হাতছাড়া হবার সম্ভাবনা ছিল যেন অসম্ভব। দলের লোকজন ক্ষমতাটাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ভেবে বসেছিলেন। কত কথাই না তখন শুনেছেন বারেক সাহেব। ‘সব সিস্টেম করা আছে। জনগণ-ফনগন দরকার নেই। ক্ষমতায় রাখবে উত্তর আর দক্ষিন পাড়ার বাসন্দিারা। অতএব, নো চিন্তা!’ হাওয়ায় ভেসে-ভেসে দেশের টাকা হাওয়া করার উৎসবে মেতে উঠেছিল দলের আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই। আর নেতৃত্বে ছিলেন খোদ দলের ভবিষ্যৎ কর্ণধার।

বিজ্ঞাপন

বারেক সাহেব তখনও চোখে অন্ধকারই দেখতেন। কিন্তু তার বুক ফাটলেও মুখ ফোটেনি। বরং একসময় নিজেও গা ভাসিয়েছিলেন হাওয়া-হাওয়া প্রতিযোগিতায়। ভেবেছেন, ‘আমার বাপের কি? লুটছে না-টা কে? অতএব আমিই বা বাদ যাব কেন?’ ‘হাওয়া মে উড়তা লাল দোপাট্টার’ পিছনে ছুটতে গিয়ে কখন যে কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই সবকিছু হাওয়া গেল এখনও বুঝে উঠতে পারেননা বারেক সাহেব।

তারপর থেকে শুধুই উল্টো দিকে চলা। লাগামহীন উল্টো দিকে হাঁটা। ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যায় বারেক সাহেবের। কত কিছু করে, মানুষকে আবজাব কতকিছু বুঝিয়ে দলটাকে তিলে-তিলে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা। কত দিনকেই তো রাত বানাতে হয়েছে। রাজাকারকে বানাতে হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা। বানাতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী এমনকি রাষ্ট্রপতিও। রাজাকার মন্ত্রীতো হয়েছে ভুরি-ভুরি। দেশের একটার পর একটা প্রজন্মকে শেখাতে হয়েছে মিথ্যা ইতিহাস। তবেই না ক্ষমতায় আসা আর টিকে থাকা। বাপের এত কষ্টে গড়া সাম্রাজ্যটাকে অপদার্থ ছেলেরা এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিল- ভাবা যায়?

বারেক সাহেবের খারাপ লাগে এতকিছুতেও তো কারো কোন শিক্ষা হচ্ছে না। ৩০০ আসনে হাজারের কাছাকাছি প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে দেদারসে মনোনয়ন বাণিজ্য করলে ফলটা যে কি দাঁড়ায় ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা বেলাতেই বোঝা শেষ। ডাকসুতেও একই বেহাল দশা। শুধু ‘নর-নারী আর নুরু নিয়ে’ লোকে মেতেছিল বলে ইজ্জত তাও কিছুটা বেঁচেছে। কেউ খেয়াল করেনি একসময় ক্যাম্পাসে-ক্যাম্পাসে দাঁপিয়ে বেড়ানো তাদের ছাত্র সংগঠনের জনপ্রিয়তা যে কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু তাতে কারো কোনো মাথাব্যাথা আছে বলেতো মনে হচ্ছে না।

নৌকায় চড়ে রাজ্য ভ্রমণে বেড়িয়েছিলেন কৃঞ্চ নগরের মহারাজ। হঠাৎ প্রকৃতির ভীষণ ডাকাডাকি। কিন্তু সাড়া দেবার সুযোগই পাচ্ছেন না মহারাজ! যে ঘাটেই নৌকা ভেড়াতে বলেন তিনি, কোথাও বাঘ তো কোথাও ভালুকের কথা বলে বাঁধ সাধে গোপাল ভাঁড়। মহারাজের যখন প্রাণ যায় যায় তখন মিলল গোপালের ক্লিয়ারেন্স। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে মহারাজ আবার নৌকায় উঠতেই গোমড় ফাঁস করলো গোপাল। মহারাজকে ‘ত্যাগের মহিমা’ বোঝাতে গিয়েই এত কৌশলী গোপাল!

ক্লাবে বসে গোপাল ভাঁড়ের এই চুটকিটা শুনতেই হঠাৎ মনে হয় বারেক সাহেবের, ‘দলের সবাইকে বোধ করি ত্যাগের মহিমায় পেয়ে বসেছে।’ দলের যে লোকগুলোর এখনও যৎকিঞ্চিত জনপ্রিয়তা আছে, সাহস করে যারা উপজেলায় দাঁড়িয়েছিলেন, দল তাদের ত্যাগ করছে। আর একসময় হাওয়া বাণিজ্য করে যে হাওয়া ভবন পার্টি-দলকে এই তলানিতে এনে ঠেকিয়েছেন তারা উল্টো দল বেঁধে দলকেই ত্যাগ করছে। ‘ভালই বলেছিলো গোপাল ভাঁড়’, ভাবেন বারেক সাহেব। ‘মহারাজ না বুঝলেও গোপাল দর্শন ভালই বুঝেছে তার দলের লোকজন’।

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর