ঢাকা: গ্রুপে সদস্য বাড়ানোর জন্য আলতু-ফালতু লোক দলে না ঢুকানোর পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের পেছনে তো লোক লেগেই আছে। লেগেই থাকবে। ছাত্রদল যত অপকর্ম করে গেছে সেটা নিয়ে কথা নেই। কিন্তু ছাত্রলীগের একটু কিছু হলেই বড় নিউজ।
বুধবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এদিন ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের আদর্শিক সংগ্রামের নানাদিক তুলে ধরেন। তিনি ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছয় বছর দেশে আসতে পারিনি। জিয়াউর রহমান আমাকে আসতে দিতে চায়নি। বাধা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের যখন সভাপতি নির্বাচিত হলাম তখন আসলাম। কিন্তু আমাকে ৩২ নম্বরের বাড়িতেও ঢুকতে দেয়নি। আমি যে একটা মিলাদ পড়ব, নামাজ পড়ব- সেটারও সুযোগ কিন্তু জিয়াউর রহমান দেয়নি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্বভার নিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে ঘুরে ঘুরে সংগঠনকে শক্তিশালী করার প্রসঙ্গ স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের পর আমরা ক্ষমতায় এসেছি। প্রথম একটা টার্ম গেছে। দ্বিতীয়বার এসে এখন এই থার্ড টার্ম পর্যন্ত অন্তত বাংলাদেশের উন্নতি আমরা করতে পেরেছি। আজ বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি। যেটা জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।’
ডেল্টপ্ল্যানের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ কেমন হবে? ২১০০ সালের বদ্বীপ বা ডেল্টা প্ল্যান- সেটাও প্রণয়ন করে দিয়েছি। যারা আগামীতে আসবে, তারা এটা অনুসরণ করলে এই বাংলাদেশের অভিযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না।’
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সংগঠনটির সাংগঠনিক অভিভাবক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনার ধাক্কা, তার ওপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। আমি ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানাই। যখন ধান কাটার লোক পাওয়া যাচ্ছিল না, খবর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা নেমে গেছে, ধান কেটেছে। কৃষকের ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সময় যেখানে লাশ ফেলে আত্মীয়-স্বজন চলে যায় সেখানে আমাদের ছাত্রলীগসহ দলের নেতাকর্মীরা তাদের লাশ কাঁধে নিয়ে দাফন-কাফন করেছে। আমি আগেই বলেছি, ছাত্রলীগ সব কাজে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে। এই অগ্রগামী সংগঠন হিসেবে সবার আগে নির্দেশ দিয়েছি ছাত্রলীগকে। ছাত্রলীগ যখন মাঠে নেমেছে তাদের সঙ্গে সঙ্গে অন্য সংগঠনগুলোও নেমেছে। কিন্তু ছাত্রলীগই আগে নেমেছে।’
ছাত্রলীগকে এভাবেই মানবতার সেবা করে যেতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাশাপাশি সব থেকে বেশি দরকার লেখাপড়া শিখতে হবে। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি চাই। কারণ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসবে। তার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে আমাদের আজকের প্রজন্ম বা প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিজেদের প্রস্তুত করবে। কারণ, এখন প্রযুক্তির যুগ। তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, বিজ্ঞানের যুগ। এর সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা-দীক্ষায় উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।’ সেইভাবে নিজেদের তৈরি করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ চালাতে গেলে শিক্ষার প্রয়োজন আছে। দেশ চালাতে গেলে জ্ঞানের প্রয়োজন আছে, ইতিহাস জানার প্রয়োজন আছে এবং দূর-দৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে। ভবিষ্যতে এই দেশের জন্য আমরা কী করব- সেই চিন্তাভাবনা থাকতে হবে। আর সেটা না থাকলে দেশের কোনো দিনেই উন্নতি হবে না।’
তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তো ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি, বোমাবাজি। আমরা সেখান থেকে অন্তত ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। শিক্ষার বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে এসে আধুনিক শিক্ষা যাতে হয় সেদিকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া বললেন যে, ছাত্রদল দিয়েই নাকি আওয়ামী লীগকে সিদা (সোজা) করে দেবে। অর্থ্যাৎ তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে। এটা তো জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। আমি ছাত্রলীগের হাতে কাগজ-কলম-বই তুলে দিলাম যে, আগে লেখাপড়া শিখতে হবে। কারণ শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতিকে কেউ সেবা দিতে পারে না। ছাত্রলীগের মূলনীতিতে শিক্ষা কিন্তু এক নম্বরে আছে। কাজেই শিক্ষার দিকে সবাইকে নজর দিতে হবে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ও শান্তি যাতে বজায় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। গতকাল সংসদে যেহেতু একটা প্রস্তাব এসেছিল। আমি ভাষণ দিয়েছি। সেখানে অনেক তথ্য দিয়েছি। তাই সকল ছাত্রছাত্রীদের বলব, বাংলাদেশের প্রত্যেককেই কিন্তু সাশ্রয়ী হতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। তাই আমাদের আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। আমরা আগে থেকেই যদি সাবধানে থাকি তাহলে অবস্থা সামাল দিতে পারব।
এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে কিন্তু আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। পয়সা দিয়েও খাবার কেনা যাবে না। সেক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের খাবার নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। আমাদের ছাত্রলীগ যেমন ধান কাটায় সাহায্য করেছে, দরকার হলে ধান রোপণেও সাহায্য করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ছাত্রলীগ জাতির পিতার হাতে গড়া। আমি জানি ছাত্রলীগ সম্পর্কে অনেক অনেক কথা লেখা হয়। এত বড় একটা সংগঠন। কিছু কিছু তো ভেতরে ঢুকে যায়। ঢুকে নিজেরাই গোলমাল করে। বদনামটা ছাত্রলীগের ওপরে পড়ে। ছাত্রলীগকে বলি, সংগঠন করার সময় গ্রুপে সদস্য বাড়ানোর জন্য এইরকম আলতু-ফালতু লোক দলে ঢুকাবে না। তাতে নিজেদের বদনাম। দলের বদনাম। দেশের বদনাম।’
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। সভায় আরও বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ, ঢাকা উত্তর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়।