বাংলা নাট্যকলার আদিম ঐতিহ্য, শেকড়ের সংস্কৃতি আর খুলনা অঞ্চলের লোককথার প্রাণশক্তি নিয়ে আবার মঞ্চে ফিরছে নাটক ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’। ঢাকা পদাতিকের ৩৫তম প্রযোজনা হিসেবে এটি মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে আজ (১৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে।
দীর্ঘ বিরতির পর পদাতিকের এই প্রযোজনা শুধু একখণ্ড নাটক নয়—এ যেন বাংলার ঐতিহ্য, বুদ্ধির জয়গান ও লোকসংস্কৃতির সরস পুনর্জন্ম।
নাটকটির কেন্দ্রে রয়েছে পাইচো চোর, এক বুদ্ধিমান ও চতুর চোর, যিনি সমাজের নানা রকম বাধা ও প্রতিরোধকে জয় করে এক পর্যায়ে চুরি করেন রাজকন্যাকেই। কিন্তু এটি নিছক চুরির গল্প নয়। বরং এক ধরনের প্রতীকী বিদ্রোহ, যা কৌতুকের ছলে প্রশ্ন তোলে রাজনীতি, সমাজ ও ক্ষমতার কাঠামো নিয়ে।
পাইচোর চরিত্রটিকে গল্প বলার ঢঙে সাজানো হয়েছে। একজন কথক তার কাহিনি বর্ণনা করেন এবং একই সঙ্গে মঞ্চে পাইচোর নানা কৌশলী ও কৌতুকপূর্ণ কার্যকলাপ দর্শকদের সামনে মেলে ধরে পুরো আখ্যানকে।
নাটকটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী চপল, যিনি দীর্ঘদিন ধরে শেকড়নির্ভর নাটক নির্মাণে নিবেদিত। তিনি এ নাটকে শুধুমাত্র বিনোদনের উপাদান রাখেননি, বরং একটি জীবন্ত লোকগাঁথার কাঠামোয় বুনেছেন রাজনৈতিক ব্যঙ্গ, মানবিক অনুভূতি এবং বুদ্ধির ব্যবহারে সমাজ জয়ের গল্প।
নাটকটির আরেকটি বড় আকর্ষণ এর অভিনয়শিল্পীদের বহর। মঞ্চে থাকছেন: কাজী শিলা, শ্যামল হাসান, সালাউদ্দিন রাহাত, কিরণ জাকারিয়া, কাজী সম্রাট, আলামিন স্বপন, সুমন ঘোষ, জয়া, সজল, সিরাজুম মনিরা ইকরা, মীর ফারজানা আক্তার নীপা, বর্ণালী আহমেদ সেতু, চন্দ্রিমা মল্লিক তন্দ্রা, কবির বাউল, শংকর কুমার মণ্ডলসহ আরও অনেক। প্রতিটি চরিত্র নিজস্ব ছন্দে ফুটে উঠবে গানের ছন্দ, কথকতার গাম্ভীর্য, এবং হাস্যরসের নাট্যভাষায়।
‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’-তে থাকছে বাংলার আদিরূপ নাট্যরীতির ব্যবহার—
যেমন:
কথকতা (ন্যারেটিভ থিয়েটার)
লোকসংগীত
মুখাভিনয় ও শরীরভাষা
সরল অথচ ব্যঞ্জনাময় মঞ্চসজ্জা
এই নাটক শুধু অভিনয় নয়, এটি এক ধরনের সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা, যেখানে দর্শক ফিরে যান বাংলার গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে, মাটির গন্ধে, চাতুর্যের হাসিতে।
বাংলাদেশের মঞ্চনাট্য অনেকটা শহুরে কনটেন্ট বা বিদেশি অনুবাদনির্ভর হয়ে পড়লেও, ঢাকা পদাতিকের মতো দলগুলো শেকড় থেকে উঠে আসা উপাদান দিয়েই নতুন করে বাংলা নাটককে প্রাণ দিচ্ছে। ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’ তার একটি উদাহরণ।
যারা বাংলা লোকসংস্কৃতি ভালোবাসেন, নাটকপ্রেমী বা শিল্পকলা অনুরাগী—তাদের জন্য মিস করা যাবে না এমন এক সন্ধ্যা।