একজন শিল্পীর সঙ্গে দেশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত? ভালোবাসা, সম্মান আর শ্রদ্ধা—এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু যখন তা না মেলে, তখন কোনো শিল্পীই একসময় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন— ভালোবাসার পথে হেঁটেও নিজের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে। এমনই এক গল্প গায়ক ও সংগীত পরিচালক আদনান সামির।
এক সময় পাকিস্তানের গর্ব ছিলেন আদনান সামি। তার গান উপমহাদেশের দুই পারেই সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে— ‘লিফ্ট করাদে’, ‘তেরে বান্না পিয়া’, ‘সানু এক পল চেইন না আয়ে’ বা ‘কাভি তো নজর মিলাও’—এসব গান ভারত-পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনের অনন্য উদাহরণ। কিন্তু আজ, তার নাম উঠলে পাকিস্তানের একাংশ যেন অস্বস্তিতে পড়ে যায়।
২০১৫ সালে ভারতের নাগরিকত্ব নেন আদনান সামি। সেসময় পাকিস্তানে সরকারিভাবে কোনো সম্মান না পাওয়া, রাজনৈতিক জটিলতা এবং বৈরী ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাকে। বলিউড বাবলকে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে আদনান সামি স্পষ্ট করেই জানালেন — তার সমস্যা সাধারণ মানুষের সঙ্গে নয়, বরং পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে। বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর সংগীত করার পরেও ওদের (পাকিস্তান সরকারের) কাছ থেকে কোনো স্বীকৃতি পাইনি। উপরন্তু নানা চ্যালেঞ্জ আর অসহযোগিতার মুখে পড়তে হয়েছে।’
তবে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে তার ‘প্রাক্তন প্রেমিকা সিনড্রোম’ মন্তব্যটি। আদনান বলেন, ‘পাকিস্তানিরা যে রোগে আক্রান্ত, সেটি হলো প্রাক্তন প্রেমিকা সিনড্রোম। ধরুন, আপনার প্রাক্তন প্রেমিকা জানেন যে তিনি আপনাকে আর পাবেন না, তবু আপনাকে অন্য কারো সঙ্গে দেখলেই তার রাগ হয়। এখানেও তেমনটাই ঘটছে।’
এই মন্তব্যে অনেকেই মজা পেয়েছেন, কেউ কেউ আবার ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আদনান ছিলেন পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন—পাকিস্তানের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা আজও অটুট। তিনি শ্রোতা হিসেবে পাকিস্তানিদের শ্রদ্ধা করেন, কেবল রাষ্ট্রযন্ত্রের ভূমিকা তাকে আঘাত দিয়েছে।
ভারতের হয়ে নাগরিকত্ব নেওয়ার পর আদনান সামি পান পদ্মশ্রী সম্মাননা। ভারতে তার সংগীত ক্যারিয়ার পেয়েছে নতুন গতি। এপার-ওপার মিলিয়ে ভক্তদের ভালোবাসা তিনি সবসময় আগলে রেখেছেন।