Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আমি চাইনা প্রতিনিয়ত পর্দায় আমার উপস্থিতি থাকুক’


১ জুলাই ২০১৮ ১৫:১৭

মোনালিসা

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

মোনালিসা, বাংলাদেশের বহু পুরুষের মনে ঝড় তোলা এক লাস্যময়ী সুন্দরীর নাম। মিষ্টি হাসি, আর অভিনয়ের মিশেলে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন ভক্তদের মনে। তিনি বিশ্বাস করেন, একমাত্র ভালো কাজই পারে একজন অভিনয়শিল্পীকে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখতে। তার মতে, ভালো কাজগুলোর কারণেই ভক্তরা তাকে মনে রাখবেন, যতো দূরেই তিনি থাকুন না কেনো।

মোনালিসা কয়েক বছর ধরে নিউইয়র্কে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সেখানে তিনি চাকরি করছেন একটি বিখ্যাত প্রসাধনী প্রতিষ্ঠানে সম্মানজনক একটি পদে। কয়েকমাস আগে তিনি নাড়ীর টানে দেশের ফিরেছেন। ফিরেই নির্মাতাদের অনুরোধে অভিনয় করেছেন বেশকিছু নাটকে। গতকাল (শনিবার, ৩০ জুন) উত্তরার এক শুটিং বাড়িতে মোনালিসার সঙ্গে দেখা। শুটিংয়ের ফাঁকে তিনি প্রবাস জীবন, অভিনয় জীবন ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনের আগল খুলে কথা বলেছেন সারাবাংলার সঙ্গে।

 

বিজ্ঞাপন
  • মাঝে মাঝে দেশে ফিরছেন। অভিনয় করছেন। আপনার কাছে কি মনে হয়, এই জায়গাটা আগের মতো আছে? বা আপনি কি ঠিক তেমনই আছেন যেমনটা আগে ছিলেন?

সবকিছু পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে মানুষও পরিবর্তন হয়ে যায়। কাজের ধরন পরিবর্তন হয়। এটা ঠিক যে, সবখানেই আগের থেকে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। যে পরিরবর্তন এসেছে সেটা ভালো খারাপ-দুটো মিলিয়ে। এখন ভালো ভালো অনেক কাজ হচ্ছে। অনেক মেধাবী পরিচালক নাটক নির্মাণ করছেন। নতুন নতুন ছেলে মেয়েরা কাজ করছে। এটা আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক। এছাড়া খারাপের দিক যেটা বলতে চাই সেটা হলো, অনেকের মধ্যে কথা দিয়ে কথা রাখার আগ্রহের অভাব রয়েছে। গুছিয়ে কাজ করার প্রবণতা কম।

বিজ্ঞাপন
  • আপনার নিজের উপলব্ধি থেকে জানতে চাই, দেশে ভালো ছিলেন নাকি এখন দেশের বাইরে ভালো আছেন? নিউইয়র্কে আপনার জীবন যাপন সম্পর্কে ভক্তদের আগ্রহ রয়েছে

দেশে থাকার সময়ে আমি খুব ভালো ছিলাম। এখন বিদেশেও খুব ভালো আছি। যেহেতু বাংলাদেশ আমার দেশ সেহেতু এখানে আসলে একধরনের ভালোলাগা অনুভূত হয়। আর নিউইয়র্কে আমি চাকরি করছি। ‘সেফোরা’ কোম্পানির বিউটি অ্যাডভাইজার হিসেবে। সারাক্ষণ ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হয়।

  • বিদেশে থাকা এবং চাকরি নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়েছিলো আপনাকে নিয়ে। এ বিষয়ে কি বলতে চান?

আমি ওখানে যে ক্যারিয়ার বেছে নিয়েছি সেটা সম্পর্কে অনেকে জানে না। জানলেও বিদেশে এই পেশার চাহিদা সম্পর্কে অবগত নয়। কারন আমাদের দেশে এর মূল্যায়ন নেই। আমি যখন প্রথম ‘ম্যাক’-এর সিনিয়র মেক-আপ আর্টিস্ট হিসেবে চাকরি আরম্ভ করেছিলাম তখন গণমাধ্যম আমাকে নিয়ে অনেক হেয় করে লেখালেখি করেছিল। আমি নাকি সেলস গার্ল! এসব পড়ে আমার খুব হাসি পেতো। যদিও আমি এসব পাত্তা না দিয়ে আমার কাজ করে গেছি, এখনও করছি। এটা নিয়ে প্রতিবাদ করিনি, করার প্রযোজনীয়তা অনুভব করিনি। যারা এই বিষয়ে বোঝেই না তাদের সাথে এটা নিয়ে কথা বলা মানে সময় নষ্ট।

  • আপনি যখন বিদেশে পাড়ি জমান, তখন আপনি নাটকে তুমুল জনপ্রিয়। সুন্দর একটা ক্যারিয়ার রেখে হঠাৎ কেনো নিউইয়র্কে পাড়ি জমালেন?

একান্তই ব্যক্তিগত কারনে আমি সেখানে যাই। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে বসবাস আরম্ভ করি। তবে এখানে একটা কথা বলতে চাই, জনপ্রিয়তা কিন্তু একদিনে তৈরী হয়না। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমি আগে যেসব কাজ করেছি সেসব কাজ দর্শকের ভালো লেগেছিলো বিধায় তাদের মনে জায়গা পেয়েছি। দর্শকের মনে যে জায়গাটা তৈরী হয় সেটা সারাজীবনই থেকে যায়। আমি মনে করি আমি যেসব কাজ করেছি সেসব কাজ সারাজীবন দর্শকদের মনে থেকে যাবে।

  • আপনি দেশে ফেরার পর নিশ্চয়ই অনেক নির্মাতাই আপনাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। সব কাজগুলো থেকে কীভাবে নিজের পছন্দের কাজটা নির্বাচন করেছেন?

এবার দেশে আসার পর বিশ থেকে পঁচিশটি নাটকে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছি। সবার সাথে কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এরমধ্যে আমি খুব বাছাই করে দশ থেকে বারোটার মতো নাটকে কাজ করেছি। নাটকে অভিনয় করার ক্ষেত্রে আমি মূলত গল্পটাকে প্রাধান্য দেই। সেই সাথে নির্মাণশৈলী। আমার কাজে যদি মনে হয় এই নির্মাতা ভালো নির্মাণ করতে পারবেন তখন রাজি হই।

  • সেসব নাটকের জন্য দর্শকদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

প্রায় তিন মাস হলো আমি দেশে এসেছি। আমার আসার খবর জানার পর ভক্তরা অপেক্ষায় ছিলেন আমার অভিনীত নাটক দেখার জন্য। তারা আমার নাটক দেখে পছন্দ করেছেন। খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। ফেসবুক, মোবাইলে মেসেজ করে কিংবা দেখা হলে অনেকে নাটকের প্রশংসা করছেন। আমার খুব ভালো লেগেছে এটা ভেবে যে, মানুষ আমাকে এখনও ভালোবাসে। বিদেশে যাওয়ার পরও তারা আমাকে ভুলে যান নি।

  • এই যে, বিরতি দিয়ে দেশে ফিরে নাটকে অভিনয় করছেন, এতে করে আপনার ভক্ত-দর্শকদের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন বলে মনে হয় না?

এটা ঠিক, দর্শকদের সাথে কিছুটা দূরত্ব তৈরী হচ্ছে। তারা আমাকে পাচ্ছে না। আমিও তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারছি না। তবে প্রতিনিয়ত পর্দায় আমার উপস্থিতি থাকুক এটা আমি চাই না। মানুষ আমাকে কম কম দেখুক, মিস করুক এটাই আমি চাই।

  • সম্ভাবনা থাকার পরও আপনাকে কখনও চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়নি। কেনো?

আমার কাছে মনে হয় চলচ্চিত্র বিশাল বড় একটি জায়গা। এখানে অনেক প্রস্তুতির দরকার। তবে অনেক ভালো ভালো কাজের প্রস্তাব পেয়েছি আমি। কিন্তু ব্যাটে বলে না মেলার কারণে চলচ্চিত্রে অভিনয় করা হয়ে ওঠেনি। আমি যেরমক চাচ্ছিলাম সেরকম হয়নি। যদিও আমার চলচ্চিত্রে খুব একটা আগ্রহ ছিল না। অভিনয় আর বিজ্ঞাপন আমার ভালোলাগার জায়গা।

  • এখন যদি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে তাহলে অভিনয় করবেন? আর করলে নায়ক হিসেবে কাকে চান প্রথম ছবিতে?

এখন প্রস্তাব পেলে যদি আমার পছন্দ মতো গল্প পাই, ব্যাটে বলে মিলে যায় তাহলে অবশ্যই আমি কাজ করবো। নায়ক হিসেবে নির্দিষ্ট কাউকে চাইনা। গল্প যে নায়ককে ডিমান্ড করবে সেই নায়কের সাথে অভিনয় করবো।

  • ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে চাই। বিবাহ বিচ্ছেদ আপনার জীবনে কতোটা প্রভাব ফেলেছে?

আমাকে কোনভাবেই প্রভাব ফেলেনি। যদি বিষয়টি নিয়ে আমি বেশি বেশি ভাবতাম তাহলে প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা ছিল। কাজকে নিয়ে আমি এতোটাই ব্যস্ত থাকি যে, আমি এটা নিয়ে ভাবার সময় পাইনি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা আমার জন্য ইতিবাচক।

  • নতুন করে সংসারী হওয়ার ইচ্ছা হয় কি?

এটি নিয়ে এখন চিন্তা করছি আবার করছি না। এখন আমি ভীষণ ব্যস্ত আমার কাজ নিয়ে। তবে এরমধ্যে যদি কাউকে ভালো লেগে যায়, পছন্দের সেই মানুষকে পেয়ে যাই তাহলে পুনরায় সংসার জীবনে পা রাখার পরিকল্পনা আছে।

  • এবার বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে কথা বলতে চাই। আপনি কোন দলের সমর্থক? এবার কারা চ্যাম্পিয়ন হতে পারে?

আমি ব্রাজিলের ডাই-হার্ট ফ্যান। ব্রজিলের সবাই আমার প্রিয় খেলোয়াড় তবে নেইমার আমার অনেক পছন্দের। নেইমার অনেক পাগলাটে খেলোয়াড়। ওর খেলার কৌশল মনোমুগ্ধকর। ওর এই ক্রীড়াশৈলী দেখতে আমার ভালো লাগে। আর অবশ্যই ব্রাজিল এবার চ্যাম্পিয়ন হবে।

ছবি: আব্দুল্লাহ আল মামুন এরিন

সারাবাংলা/আরএসও/পিএ

মোনালিসা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর