Sunday 29 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৪ বছরের উজ্জ্বল যাত্রায় মাহিরা খান, পর্দায় জীবনের প্রতিচ্ছবি

এন্টারটেইনম্যান্ট ডেস্ক
২৯ জুন ২০২৫ ২০:০৮

পাকিস্তানি বিনোদন অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নাম মাহিরা খান। টেলিভিশনের পর্দা থেকে চলচ্চিত্রের জগৎ—সর্বত্রই তার উপস্থিতি শক্তিশালী, পরিপূর্ণ। ১৪ বছর আগে যে পথচলার সূচনা হয়েছিল, ২০২৫ সালে এসে সেটিই এক অনন্য ইতিহাস। মাহিরা নিজেই ইনস্টাগ্রামে লেখেন, ‘আজ আমার যাত্রার ১৪ বছর পূর্ণ হলো। আমি ঠিক সেই আকাশের নিচে বসে আছি, যেখানে একসময় স্বপ্ন দেখতাম, পরিশ্রম করতাম, প্রার্থনা করতাম। আজ কৃতজ্ঞতায় মাথা নত করছি।‘

এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মাহিরা বারবার এমন সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যেগুলো নারীর দুর্বলতা, আত্ম-অন্বেষণ, সাহস ও আত্মমর্যাদার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। ভিন্ন ভিন্ন রূপে তিনি যেমন নারীর সংবেদনশীল দিক তুলে ধরেছেন, তেমনি দৃঢ়তার প্রতীকও হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

‘বোল’ (২০১১): তারকাখ্যাতির শুরু

মাহিরার প্রথম বড় পর্দার অভিষেক হয় শোয়েব মংশূরের আলোচিত ছবি ‘বোল’ দিয়ে। এখানে তিনি আয়েশা চরিত্রে ছিলেন—এক নম্র, হাসিখুশি ও সহনশীল বোন, যিনি সহিংস পারিবারিক পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখেন। এই চলচ্চিত্র মাহিরার তারকাখ্যাতির ভিত গড়ে দেয়।

‘হামসফর’ (২০১১): রাতারাতি জাতীয় প্রিয় মুখ

‘হামসফর’ মাহিরার ক্যারিয়ারে এক যুগান্তকারী টিভি সিরিজ। ফাওয়াদ খানের সঙ্গে তার অনবদ্য রসায়ন দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী ছাপ ফেলে। খিরাদের চরিত্রে মাহিরা একজন নিরীহ, শিক্ষিত, সাধারণ মেয়ে থেকে হয়ে ওঠেন এক সংগ্রামী মা—যিনি প্রতারণা, বিচ্ছেদ ও অবহেলা সহ্য করেও নিজের ও সন্তানের অধিকারের জন্য মাথা তুলে দাঁড়ান।

‘শেহরে যায়াত’ (২০১২): আত্ম-অন্বেষণের গল্প

উমেরা আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই সিরিজে মাহিরা ছিলেন এক আত্মকেন্দ্রিক ভাস্কর ফালাকের ভূমিকায়। বাহ্যিক সৌন্দর্যে মোহগ্রস্ত এই চরিত্র প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নিজের ভেতরে ফিরতে শুরু করে— সত্তা, অহং ও আধ্যাত্মিকতার খোঁজে। সমীনা পীরজাদার সঙ্গে দারুণ স্ক্রিনস্পেসে তিনি এক নতুন আত্ম-উপলব্ধির গল্প বলেন।

‘বিন রোয়ে’ (২০১৫): ভালোবাসা, হিংসা ও মুক্তির ছায়াচিত্র

হুমায়ুন সাঈদের বিপরীতে মাহিরা অভিনয় করেন সাবা চরিত্রে— এক আবেগপ্রবণ তরুণী, যার ভালোবাসা একসময় ঈর্ষায় রূপ নেয়। পরবর্তীতে সেই ভালোবাসা পরিণত হয় অনুতাপ ও আত্ম উপলব্ধিতে। এটি মাহিরার অন্যতম আবেগঘন ও জটিল চরিত্রগুলোর একটি।

‘ভারনা’ (২০১৭): প্রতিবাদের ভাষা

‘ভারনা’-তে মাহিরা এমন এক নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি ধর্ষণের শিকার হন এবং বিচার ও প্রতিশোধের লড়াই শুরু করেন। সারার সাহসিকতা ও প্রতিবাদী কণ্ঠ পাকিস্তানি সিনেমায় বিরল এক শক্তি হয়ে ওঠে। সিনেমাটি নিষিদ্ধের মুখে পড়লেও, গণপ্রতিরোধে মুক্তি পায় এবং নারীর বাস্তব সংকট নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেয়।

‘লাভ গুরু’ (২০২৫): নতুন যুগের প্রেমকাহিনি

ঈদুল আজহায় মুক্তিপ্রাপ্ত মাহিরার সাম্প্রতিক ছবি ‘লাভ গুরু’ আবারো তাকে নিয়ে এসেছে ফোকাসে। হুমায়ুন সাঈদের সঙ্গে তার জুটি আবারো প্রশংসা কুড়িয়েছে। যদিও গল্প ও অভিনয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলছে, তবু প্রধান চরিত্রদের রসায়ন দর্শককে মুগ্ধ করছে।

পর্দার বাইরে সাহসী কণ্ঠস্বর

অভিনয়ের বাইরেও মাহিরা মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার কণ্ঠ। নারী অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সামাজিক ইস্যুতে তিনি সবসময়ই সচেতন ভূমিকা রেখে চলেছেন।

১৪ বছরের এই যাত্রায় মাহিরা শুধু একজন অভিনেত্রী নন, হয়ে উঠেছেন সংস্কৃতির এক প্রতীক। সাহস, সংবেদন, আত্মজ্ঞান ও নারীর প্রতিবাদের গল্প তিনি পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছেন বারবার। পাকিস্তানের বিনোদন জগতে তার ভূমিকা এখনো বিস্তৃত হচ্ছে— নতুন আলো, নতুন বার্তা নিয়ে।

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

পাকিস্তানি বিনোদন অঙ্গন মাহিরা খান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর