একটা মুহূর্তেই সব বদলে গেল। আলো নিভে গেলো স্টেজে, চারপাশে নিস্তব্ধতা, এরপরই ঝলমলে আলো আর জনস্রোতের গর্জন— ‘লাভ ইউ গুরু!’ কে এই গুরু? তিনি নগর বাউল জেমস। আর এই মুহূর্তটা হয়ে রইল ইতিহাস।
২৯ জুন, লস অ্যাঞ্জেলেস—বাংলাদেশ মেলার দ্বিতীয় ও শেষ দিনে ছিল শুধু একটাই নাম মানুষের মুখে মুখে: মাহফুজ আনাম জেমস। গিটারের ঝংকার, কণ্ঠের খামখেয়ালি আর হাজারো মানুষের বুকের ভেতরের অনুভূতির সাথে তাল মিলিয়ে জেমস যেন আবারও প্রমাণ করলেন, কেন তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা রকস্টার।
শুরুটা হয় এক অন্যরকম আবহে। ভার্জিল মিডল স্কুল মাঠে আলোর ঝলকানি আর ধ্বনিত হল ‘গুরু আসছেন’। মুহূর্তেই যেন নতুন প্রাণ পেল হলিউড শহর। কেউ মোবাইল ক্যামেরা অন করলেন, কেউ গলা ছেড়ে চিৎকার, আবার কেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে—শুধু অনুভব করলেন প্রিয় শিল্পীর স্পন্দন।
গান শুরু হতেই দেখা গেল মানুষের ঢল—কেউ গাইছেন, কেউ নাচছেন, কেউ কাঁদছেন। একেকটা গানে ফিরে আসছে কারও কৈশোর, কারও ভালোবাসা, কারও আবার ভাঙা সম্পর্কের স্মৃতি। এই জেমস, যিনি শুধুই গান করেন না—মন ছুঁয়ে দেন।
জেমস তার বহুল জনপ্রিয় গানগুলোই গাইলেন।
‘বেদনারা’ গাইতেই দেখা গেল দর্শকের চোখ ভিজছে, ‘দুঃখিনী দুঃখ করোনা’ গাইলে হাততালি আর স্লোগানের জোয়ার, আর ‘লেখা’ গাইবার সময় পুরো মাঠ যেন একসাথে গেয়ে উঠলো—একটা সার্বজনীন আবেগে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এই আয়োজন শুধু একটি মেলা নয়, এটি ছিল শেকড়ের টানে হৃদয়ের উৎসব। স্থানীয় বাংলাদেশি ব্যান্ড ‘মাইলস’ এবং শিল্পী গোষ্ঠী ‘উত্তরণ’-এর পরিবেশনা দিয়ে মেলার সূচনা হলেও, শেষ দিনের জোয়ারটা ছিল পুরোটাই জেমসের নামে নিবেদিত।
বিশাল উন্মুক্ত মাঠে বিনামূল্যে সবার জন্য কনসার্ট উন্মুক্ত করে ইতিহাস গড়েছে আয়োজকরা। প্রবাসী তরুণ-তরুণীরা এমন একটি বড় মঞ্চে প্রিয় শিল্পীকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পেয়ে যেন আবেগে আপ্লুত।
জেমস শুধু গান করেন না—তিনি অনুভব করান। তার কণ্ঠে যখন গিটার বেজে ওঠে, তখন সময় থেমে যায়। সেই জাদু আবারও তৈরি হলো লস অ্যাঞ্জেলেসের মুক্ত আকাশের নিচে।
অনেকেই বললেন, ‘এটা শুধু কনসার্ট ছিল না, এটা ছিল একটা ক্যাথারসিস। আমরা কেঁদেছি, গেয়েছি, ভালোবেসেছি। জেমস যেন আমাদের জীবনেরই একটা অধ্যায়।’
প্রবাসে থেকেও, ভিনদেশের আকাশের নিচেও, এক টুকরো বাংলাদেশ যেন বাজল ‘নগর বাউল’-এর সুরে। এই কনসার্ট প্রমাণ করে দিল—জেমস এখনো ততটাই প্রাসঙ্গিক, ততটাই ভালোবাসার, যতটা ছিলেন নব্বইয়ের দশকে।