বাংলা গানের সুরের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম সাবিনা ইয়াসমিন। যার কণ্ঠ শুনলেই মনে হয়— সুর যেন প্রাণ ছুঁয়ে যায়, হৃদয়ের গভীরে গেঁথে যায় আবেগের স্পর্শ। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মুগ্ধ করে রাখা এই কিংবদন্তি শিল্পীর আজ জন্মদিন।
১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরায় জন্ম নেওয়া সাবিনা ইয়াসমিন শুধু একজন সংগীতশিল্পী নন, তিনি বাংলা গানের ইতিহাসের জীবন্ত কিংবদন্তি। তার সুরেলা কণ্ঠ ১৯৬০-এর দশক থেকেই চলচ্চিত্র ও সংগীতাঙ্গনকে মাতিয়ে রেখেছে। মাত্র নয় বছর বয়সে বাংলাদেশ বেতারে প্রথম গান করেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ চলচ্চিত্র দিয়ে প্লেব্যাকের জগতে যাত্রা শুরু হয় তার। সেই শুরু, তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক কালজয়ী গান উপহার দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন কোটি মানুষের প্রিয় কণ্ঠশিল্পী।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার কণ্ঠে গাওয়া দেশাত্মবোধক গান মুক্তিকামী মানুষকে সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সেইসব গান আজও ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। যুদ্ধের সময়ে যেমন তিনি ছিলেন শিল্পীর ভূমিকায়, স্বাধীনতার পর তেমনি তিনি হয়ে ওঠেন বাংলা সিনেমার সোনালি যুগের অপরিহার্য কণ্ঠ। শাবানা, ববিতা, কবরী কিংবা সুচন্দার ঠোঁটে ফুটে ওঠা অসংখ্য জনপ্রিয় গানের পেছনে ছিলেন সাবিনা ইয়াসমিনের অনবদ্য কণ্ঠ।
তার ক্যারিয়ারের অর্জনের তালিকা যেমন দীর্ঘ, তেমনি গৌরবময়। ১৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ অসংখ্য স্বীকৃতি তার ঝুলিতে। তিনি একমাত্র শিল্পী যিনি পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে অবিরত গেয়ে গেছেন এবং সমান জনপ্রিয় থেকেছেন। এমনকি আধুনিক গান, লোকগীতি কিংবা গজল— প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি নিজস্ব স্বকীয়তা রেখে গেছেন।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, পাশের দেশ ভারত থেকেও তিনি পেয়েছেন সমান ভালোবাসা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার কণ্ঠস্বর ছড়িয়ে পড়েছে। আজও যখন তার কোনো পুরনো গান বেজে ওঠে, তখনো নতুন প্রজন্ম মুগ্ধ হয়ে শোনে।
জন্মদিনে এই সুরের পাখিকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা। বাংলা গানের ভুবনে তার অবদান চিরকাল অমলিন হয়ে থাকবে। তিনি আমাদের হৃদয়ের শিল্পী, আমাদের গানের রানি।