বছর গেলো ইলেকশনে-উদ্বেগে-অস্থিরতায়
২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:৪৭
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
টেলিভিশনের ’১৭ সাল শুরু হয়েছিলো গত বছরের শেষ দিকে তুঙ্গে ওঠা আন্দোলনের রেশ মাথায় নিয়ে। ‘এফটিপিও’র ব্যানারে জমায়েত হয়েছিলেন টিভি নাটকের অভিনেতা-নির্মাতা-প্রযোজক-কলাকুশলীরা। তাদের প্রথম এবং প্রধান দাবিটিই ছিলো- ‘বেসরকারি চ্যানেলগুলোতে বাংলায় ডাবকৃত বিদেশি সিরিয়াল বা অনুষ্ঠানের প্রচার বন্ধ করতে হবে।’ সঙ্গে ছিলো আরও চারটি এবং পরবর্তীতে নতুন করে যুক্ত হয় আরও আটটি দাবি। এর আগে চ্যানেলের সামনে প্রতিবাদ-অবস্থান, শহীদ মিনারে সমাবেশ, ভার্চুয়াল আন্দোলন- এসব ঘটনা টিভিপাড়ার পরিবেশকে করে তুলেছিলো অস্থির। তবে সে আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়ে বছরের চাকা কিছুদূর গড়াতেই, মাস দু’য়েকের মধ্যেই।
টিভিপাড়া ব্যস্ত হয় নতুন উৎসবে- ১০ ফেব্রুয়ারির অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে। একটা অস্থির সময় শেষে এ নির্বাচনটি হয়ে উঠেছিলো টিভি অভিনয়শিল্পীদের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার উপলক্ষ। নিজেদের নেতৃত্ব বাছাই করতে মাঠে সক্রিয় থাকেন অভিনয়শিল্পীরা। প্রতিশ্রুতির বাহারি মোড়ক উন্মোচনের উৎসব শেষে বিজয়ের মুকুট পরেন শহীদুল আলম সাচ্চু- সভাপতি ও আহসান হাবিব নাসিম, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে।
এরপর যেন খুব দ্রুতই নিজেদের ঘর গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় নামে টেলিভিশন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। মাস দুই পরেই তাই হাজির হয় আরেক রঙিন আয়োজন- টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন। মামুনুর রশিদ, সভাপতি ও ইরেশ যাকের, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দুই বছরের জন্য দায়িত্ব নেন। এ দুই নির্বাচনে তারাই ছিলেন সামনের সারিতে, ‘এফটিপিও’র আন্দোলনে যাদের ছিলো প্রত্যক্ষ ভূমিকা।
জয়-পরাজয়ের এ ‘খেলা’ জমে উঠলেও, পেছনে পড়ে যায় এফটিপিও’র দাবিগুলো। শিল্পী-নির্মাতা-কলাকুশলীরা যে দাবিগুলো আদায়ের শপথ নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন, প্রথমবারের মতো এক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করেছিলেন; বছর শেষে এসে সেগুলো আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পায়নি।
ফলে বছরের শেষদিকে এসে আমরা দেখি কিছু সমঝোতার চিত্র। ‘টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ, ক্রয় ও প্রচারের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট/এজেন্সির হস্তক্ষেপ ছাড়া চ্যানেল অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে’- দাবি নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকা বেশ কিছু আন্দোলনকারী শিল্পীকে দেখা যায় ‘এজেন্সি’র কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে।
টিভিপাড়ায় আরেকটি আলোচিত দিন ছিলো ২ আগস্ট। কলকাতার অভিনেতা পরমব্রতর বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় জিডি করেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি এবং টিভিকেন্দ্রিক ১৩টি সংগঠন ‘এফটিপিও’র সদস্য সচিব গাজী রাকায়েত। ‘সরকারি অনুমোদন এবং দেশের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই পরমব্রত বাংলাদেশে কাজ করছেন’- এমনটিই ছিলো গাজী রাকায়েতের অভিযোগ। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা চলে বেশ কিছুদিন। শিথিল হতেও সময় লাগে না।
টিভি নাটকের মান নিয়ে উদ্বেগ জারি ছিলো বরাবরের মতো এ বছরও। অভিনয়শিল্পী-নির্মাতারা ‘বাজেট কম, বিজ্ঞাপন বেশি’ মর্মে পুরনো অভিযোগ নিয়েই আঙ্গুল তুলেছেন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর দিকে। পাল্টা অভিযোগের খেলায় চ্যানেলগুলোও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে গল্পের মান এবং অভিনয়শিল্পী-নির্মাতাদের আন্তরিকতাকে।
মাঝ থেকে আলোচনায় উঠে এসেছে বেশকিছু ওয়েবসিরিজ। টিভি চ্যানেলের অনেকটা বিকল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে ইউটিউব এবং এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাপস। স্বাধীনভাবে কাজ করার এবং লগ্নিকৃত অর্থ নিরাপদে ফেরত পাবার নিশ্চয়তায় অনেকেই তাই ওয়েবসিরিজ নির্মাণের দিকে ঝুঁকেছেন। আগ্রহী হয়েছেন দর্শকও। ফলে টিভি চ্যানেলের বাইরের প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত ‘ফেলুদা’ কিংবা তুরস্কের ধারাবাহিক ‘মাহমুত ও মারিয়াম’-এর বাংলা ডাবিং পেয়েছে দর্শকপ্রিয়তা।
একইসঙ্গে এ উদ্বেগটিও দাঁড়িয়ে গেছে যে, ভবিষ্যতে টিভি ফিকশন আরও প্রতিযোগিতা এবং সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে নাতো!
সারাবাংলা/কেবিএন/পিএম