গান থেমে গেলে নীরবতা নেমে আসে— কিন্তু কিছু কণ্ঠ এমন থাকে, যেগুলো নীরবতার মাঝেও প্রতিধ্বনিত হয়। ভারতের জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গর্গ ঠিক তেমনই একজন শিল্পী, যার গান যেমন কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল, তেমনি তার অকালমৃত্যু রেখে গেছে গভীর শূন্যতা ও প্রশ্ন।
প্রায় তিন মাসের দীর্ঘ তদন্ত শেষে আড়াই হাজার পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিলের খবরে আবারও আলোচনায় ফিরে এসেছে জুবিনের নাম। এই খবর শুধু একটি আইনি অগ্রগতির সংবাদ নয়— এটি এক জনপ্রিয় শিল্পীর জীবনের শেষ অধ্যায়ের করুণ বাস্তবতা, বিশ্বাসভঙ্গ আর ন্যায়বিচারের প্রতীক্ষার গল্প।
চার্জশিটে যাদের নাম উঠে এসেছে, তাদের বেশিরভাগই ছিলেন জুবিনের খুব কাছের মানুষ— ম্যানেজার, সহশিল্পী, এমনকি পরিবারের সদস্যও। জনপ্রিয়তার ঝলমলে আলোয় দাঁড়িয়ে থাকা একজন শিল্পীর পেছনের এই অন্ধকার দিক যেন ভক্তদের আরও বেশি স্তব্ধ করে দিয়েছে। যাদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেওয়া, যাদের ওপর ভরসা— সেই সম্পর্কের ভাঙনই সবচেয়ে বেদনাদায়ক।
চার্জশিটের খবর প্রকাশের পর জুবিনের সমাধিতে ভক্তদের ফুল হাতে হাজির হওয়া যেন প্রমাণ করে— শিল্পী চলে গেলেও ভালোবাসা যায় না। অন্যদিকে স্ত্রীর কান্নাভেজা কণ্ঠে উঠে আসে একজন মানুষের ব্যক্তিগত শোক, যে শোক কোনো শিরোনামে পুরোটা ধরা পড়ে না। তার কথায় ফুটে ওঠে জুবিনের মানুষ হিসেবে পরিচয়— যিনি সময়, অর্থ আর মন দিয়ে অন্যদের পাশে দাঁড়াতেন।
এই ঘটনার তদন্তে আসাম রাজ্য সরকারের সক্রিয় ভূমিকা এবং মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি মন্তব্য বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দিয়েছে। বিদেশে ঘটে যাওয়া একটি মৃত্যুকে ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানানো এবং বিচারিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার এই প্রচেষ্টা ভক্তদের মধ্যে কিছুটা হলেও আশার আলো জ্বালিয়েছে।
জুবিন গর্গ আর নতুন কোনো গান গাইবেন না— এ সত্য নির্মম। কিন্তু তার কণ্ঠ, তার সুর, তার স্মৃতি থেকে যাবে প্লেলিস্টে, মঞ্চে, আর মানুষের মনে। চার্জশিট, আদালত, বিচার— সবকিছুর বাইরেও তিনি রয়ে যাবেন একজন শিল্পী হিসেবেই।