Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বড়পর্দায় পথচলার চ্যালেঞ্জ নিতে চাই’


১৬ জুলাই ২০১৮ ১৬:১৫

মুমতাহিনা টয়া

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

 

কাজল কালো চোখে তোমার কিসের যেনো ছায়া, বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে বাড়ায় শুধু মায়া- মুমতাহিনা টয়াকে দেখে এমন ছন্দময় লাইন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা অমূলক নয়। তিনি যে শুধু সৌন্দর্যের মায়া ছড়িয়েছেন তা নয়, অভিনয়ের মাধ্যমেও অন্যরকম মায়ার ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করেছেন। সেকারণেই হয়তো শোবিজে প্রতিষ্ঠা পেতে বেশি সময় লাগেনি তার। মাত্র সাত বছরের ক্যারিয়ারে ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ বনে গেছেন তিনি। তবে এবার টয়া আসছেন নতুন পরিচয়ে। বোকাবাক্সের গণ্ডি পেরিয়ে নাম লিখিয়েছেন সেলুলয়েডে।

বড় পর্দায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা, প্রত্যাশাসহ বিভিন্ন বিষয় জানার তাগিদে হাজির হই রাজধানীর এক অভিজাত রেস্তোরায়। তার খানিক আগে জমা আকাশের মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়েছে এই তল্লাটে। লিপস্টিক কর্ষিত গাঢ় লাল অধরোষ্ঠে স্বাগত জানান টয়া। কথা হয় তার সঙ্গে। মনের আগল খুলে তিনি গল্প করেছেন মুক্তিপ্রতীক্ষিত নিজের প্রথম ছবি ‘বেঙ্গলি বিউটি’ নিয়ে। বলেছেন তার নানা অজানা কথাও।

 

  • প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় অভিনয় করেছেন কোনরকম  প্রত্যাশার চাপ অনুভব করছেন কি?

প্রত্যাশার চাপ ছিল অনেকবেশি। ছোটপর্দায় মানুষ আমার অভিনয় দেখেছেন, এবার তারা আমাকে বড় পর্দায় দেখবেন।  ছোটপর্দায় অনেক ছোট ছোট ভুল সহজে ঢাকা সম্ভব হয়। বড়পর্দায় ভুলগুলো ঢাকা যায়না। নিজের জায়গা থেকে শতভাগ ভালোভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছি। নিজে যতোটুকু অভিনয় পারি, সেটুকুসহ  নতুন করে অভিনয় শিখেছি। মানুষ যখন দেখবে তখন কেমন লাগবে? কি বলবে তারা? এসব নিয়ে যেমন চিন্তা আছে তেমন এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করছে, কারণ প্রথবার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। নিজেকে বড় পর্দায় দেখবো, এটা ভাবেতেই অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।

বিজ্ঞাপন
  • বেঙ্গলি বিউটি সাথে কিভাবে যুক্ত হলেন?

আমার কাছে ছবিটির চিত্রনাট্য আসে গতবছরের জানুয়ারিতে। প্রথমে পরিচালক রাশান নূর ছবির গল্পটি বলার জন্য যোগাযোগ করেন। গল্প শোনানোর পর আমাকে চিত্রনাট্য দেয়া হয়। গল্পটা আমার কাছে পিরিওডিক্যাল মনে হয়েছে। সত্তর দশকের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সাথে একটি নিটোল প্রেমের গল্প এগিয়ে যায়।

একজন মেডিকেল ছাত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। যে রেডিও শুনতে পছন্দ করে। তখনকার সময়ে ওয়ার্ল্ড মিউজিক নামে বাংলাদেশ বেতারে গানের অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। ঐ অনুষ্ঠানের একজন উপস্থাপকের কথা শুনে প্রেমে পড়ে যাই। খুব অন্তর্মুখী থাকি আমি। তবে আমার ভিতরের জগতটা অনেক বড়। আমার পছন্দের জগৎটা সম্পূর্ণ আলাদা।

  • সিনেমায় আপনি অন্তর্মুখী, কিন্তু বাস্তবে টয়া কেমন?

চলচ্চিত্রের চরিত্রের সঙ্গে আমার বাস্তব জীবনের কোন মিল নেই বলা যায়।  আমি আমার ভালোলাগা-মন্দলাগার সব অনুভূতি প্রকাশ করি। আমার চেহারায় সেটা ফুটে ওঠে। যা চলচ্চিত্রের চরিত্রটির ভেতর দেখা যাবে না।

  • ছোটপর্দা নাকি বড়পর্দাকোন জায়গাটা বেশি চ্যালেঞ্জের?

চ্যালেঞ্জ অবশ্যই বড়পর্দায়। ছোটপর্দায় সাত বছর কাজ করে ফেলেছি। তাই ছোটপর্দায় এখন যে চ্যালেঞ্জ আসুক না কেনো আমি সহজভাবে নিতে পারি। কিন্তু বড়পর্দায় পথচলা মাত্র শুরু করলাম। এটা এখন চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে। কারণ বড়পর্দার দর্শক আলাদা। কাজের ধরন আলাদা থাকে। যতোই দিন যাবে যতোই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে শিখবো।

  • তাহলে কি বলতে পারি বড়পর্দায় নিয়মিত হচ্ছেন?

অবশ্যই। সব অভিনয়শিল্পী চায় চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে। তাদের স্বপ্ন থাকে বড় পর্দায় অভিনয় করার। আমারও একই স্বপ্ন। আমি চাই নিয়মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে। যদিও আমি যে ধরনের গল্প পছন্দ করি সেধরনের গল্পে চলচ্চিত্র নির্মাণ খুব কম হয়। তবুও যদি কোন ভালো গল্পের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পাই তাহলে কাজ করবো।

বিজ্ঞাপন
  • বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছোটপর্দা থেকে বড় পর্দায় গিয়ে সফল হওয়া অভিনেত্রীর উদাহরণ কম সেক্ষেত্রে আপনি কেনো চলচ্চিত্রে নিয়মিত হতে চাইছেন?

জয়া আহসান কিন্তু এখন দেশের বাইরে কাজ করছেন। তার ‍ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিলো মডেলিং থেকে। কে কোথায় মানিয়ে নিতে পারে সেটা নিজের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। যোগ্যতা থাকলে নাটক কিংবা চলচ্চিত্র- দুই জায়গাতেই ভালো করা সম্ভব। এখন এর উদাহরণ কম, তবে ভবিষ্যতে উদাহরণের সংখ্যা বাড়বে।

  • যেখানে টেলিভিশন খুললেই আপনাকে সহজে দেখা যাচ্ছে সেখানে কেনো আপনাকে মানুষ বড়পর্দায় টাকা খরচ করে দেখতে যাবে?

ছোটপর্দায় আমি অনেক কাজ করেছি। সেসবের মধ্যে অনেক হিট কাজ আছে যা মানুষ পছন্দ করেছে। নাটক, মিউজিক ভিডিও কিংবা শর্টফিল্ম- সব জায়গাতে তারা আমাকে গ্রহণ করেছে। এখন চলচ্চিত্রে অভিষেক হচ্ছে আমার। আমার বিশ্বাস যারা আমার অভিনয় পছন্দ করেন তারা প্রেক্ষাগৃহে আমার ছবি দেখতে যাবেন। তাছাড়া ভিন্নধর্মী কিছু না হলে আমি সেই কাজটা করিনা। বড় কথা হলো দর্শক আমাকে সত্তর দশকের এক তরুণীর চরিত্রে দেখতে পারবেন। সত্তর দশকের আমাকে দেখতে হলে অবশ্যই প্রেক্ষাগৃহে আসতে হবে।

  • রাশান নূর– এর পরিচালনা সম্পর্কে জানতে চাই

রাশান নূরের পরিচালনা একদম ব্যতিক্রম। তিনি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসি। সেখানকার সংস্কৃতির আবহে বড় হয়েছেন। তাই তার পরিচালনার ধরন সেখানকার মতো। তিনি খুব সময় মেনে ঠিকঠাক রিহার্সেল করিয়ে শুটিং করেছেন। এমনকি ড্রেস ও কস্টিউম রিহার্সেলও করিয়েছেন। সাধারণত বাংলাদেশে এভাবে রিহার্সেল করে শুটিং করতে দেখা যায়না। তিনি আমাকে অনেক ছবি, প্রামাণ্যচিত্র দেখতে দিয়েছেন। সবকিছু পুরোপুরিভাবে আয়ত্তে আনার পর শুটিং করা হয়েছে। যেহেতু তিনি পরিচালনা করছেন সেহেতু তিনি পরিচালনা সম্পর্কে জানেন। আমাদের কাছ থেকে সঠিক অভিনয় বের করে নিয়েছেন।

  • পরিচালনার পাশাপাশি তিনি আপনার সহশিল্পী হিসেবে অভিনয় করছেন অভিনেতা হিসেবে তিনি কেমন?

অভিনেতা হিসেবে তিনি বেশ ভালো। তাকে আমি গত দুই বছর ধরে চিনি। প্রথম যখন  পরিচয় হয়েছিল তখন তিনি অন্য একটি ছবির চরিত্রে ছিলেন। এর এক বছর পর যখন তার সঙ্গে আবার দেখা হলো তখন তাকে আলাদা এক মানুষ হিসেবে দেখেছি। চরিত্রের জন্য তিনি তার শারিরীক ভাষা পরিবর্তন করতে পারেন। রাশান নূর নিজের জায়গা থেকে ভালো করার চেষ্টা করেছেন।

  • বেঙ্গলি বিউটি ট্রেলারজুড়ে সুন্দরী টয়াকে দেখানো হয়েছে তাহলে এইবিউটিবলতে কি আপনাকে নাকি বাংলার সৌন্দর্যকে বোঝানো হয়েছে?

এই ছবিতে কাজ করে আমি যতোটুকু বুঝেছি তাতে মনে হয়েছে ‘বেঙ্গলি বিউটি’ বলতে আমাকে বোঝানো হয়েছে। এছাড়াও বিউটি বলতে বাঙালির সংস্কৃতি, আদব কায়দা, সভ্যতা, ঐতিহ্য- এর সবকিছু তুলে ধরা হয়েছে।

ছবি: অাশীষ সেনগুপ্ত

সারাবাংলা/আরএসও/পিএ

বেঙ্গলি বিউটি মুমতাহিনা টয়া

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর