‘জিৎ-এর গান টিভিতে দেখলেই নাচ শুরু করতাম’
১৯ জুলাই ২০১৮ ১৮:২৬
রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
বিদ্যা সিনহা মিম যেন ক্রমেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। দেশের ভূ-খণ্ড পেরিয়ে তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন সীমান্তের ওপারেও। সম্প্রতি তিনি অভিনয় করেছেন টালিগঞ্জের চলচ্চিত্রে। ‘সুলতান: দ্য সেভিয়ার’ শিরোনামের ছবিটিতে তিনি অভিনয় করেছেন জিৎ-এর বিপরীতে। ঈদুল ফিতরে ছবিটি কলকাতায় মুক্তি পেলেও, বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে শুক্রবার (২০ জুলাই)।
ছোটবেলার পছন্দের নায়কের বিপরীতে কাজ করে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত মিম। তার গভীর শান্ত বাদামী চোখ যেন সেই তৃপ্তির জানান দেয়। প্রিয় নায়কের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা, নিজের চরিত্রসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে মিম গল্প করেছেন সারাবাংলার সঙ্গে।
- আপনি কলকাতার সুপারস্টার জিৎ-এর বড় একজন ভক্ত। এবার সেই জিৎকে নিয়ে প্রথমবার নিজ দেশের প্রেক্ষাগৃহে হাজির হচ্ছেন। কোন উত্তেজনা কাজ করছে?
ছবিটি নিয়ে আমার ভেতর এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করছে। জিৎ-এর সঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি। শুটিং করার সময় আমি জিৎকে বলেছিলাম যে, তোমার কোনো গান টেলিভিশনে দেখলেই আমি নাচ আরম্ভ করে দিতাম। ছোটবেলার প্রিয় নায়কের সঙ্গে কাজ করেছি সেটা ভাবতেই খুব ভালো লাগছে।
- সেই সাথে বাড়তি কোন চিন্তা কাজ করছে কী?
সেরকম কোন বাড়তি চিন্তা হচ্ছে না। কারণ কিছুদিন পর পর আমাদের একটি করে ছবি আসে। তবে মনে হয় কিছু কিছু ছবিতে অভিনয় করে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। এই সিনেমায় কাজ করে আমারও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আমার ধারণা দর্শক আমাকে আর জিৎকে গ্রহণ করবে।
- যতোটা জেনেছি আপনি এই ছবিতে আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই ধরনের চরিত্রে আপনি প্রথম। সেই জায়গা থেকে এই চরিত্রটি কতোটা আলাদা?
প্রথমবারের মতো আমি আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। সেই অর্থে চরিত্রটি আমার জন্য একদমই আলাদা। আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করাটা সেরকম চ্যালেঞ্জের মনে হয়নি আমার কাছে। বরং ভালো লেগেছে। উপভোগ করেছি। কারণ এটা সিরিয়াস কোন চরিত্র নয়। একটা মজার চরিত্র।
- নিজের চরিত্র সম্পর্কে নিজের মূল্যায়ন জানতে চাই।
আসলে নিজের অভিনয়ের বিষয়টা নিজে কখনও বলা যায় না। এটা বলতে পারবেন পরিচালক এবং দর্শকরা। তবে আমার মনে হয়েছে আমি ভালো করেছি।
- এটি একটি তামিল ছবির রিমেক। শুটিংয়ের আগে কি ছবিটি দেখেছেন? আপনার চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তাকে কোনরকম অনুকরণ করার চেষ্টা ছিল কি নিজের ভেতর?
আমি ছবিটি দেখেছিলাম। কিন্তু আমার চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তাকে অনুকরণ করার কোন চেষ্টা করিনি। আমি আমার মতো করে অভিনয় করেছি।
- ছবির গল্প গড়ে উঠেছে ভাই-বোনের সম্পর্ক কেন্দ্র করে। সেখানে আপনার অভিনয় করার জায়গা নাকি খুব কম ছিল?
এই ছবির মূল তামিল সংস্করণে যিনি কাজ করেছেন তিনি কিন্তু অনেক বড় তারকা। তিনি যেহেতু এই চরিত্রটিতে কাজ করতে পেরেছেন সেহেতু আমার সমস্যা থাকার কথা না। ছবিতে আমার যতোটুকু দৃশ্য জুড়ে থাকা দরকার আমি ততোটা দৃশ্যে আছি। আসলে এই ছবির গল্পটা এমন যে চাইলেই চরিত্র বড় করা যায়না। গল্প অনুযায়ী বলবো আমার চরিত্র ঠিক আছে।
- কলকাতায় দ্বিতীয়বারের মতো শুটিং করলেন। নিজের অভিনয় দক্ষতা আগের থেকে উন্নত হয়েছে বলে কি মনে করেন?
আমি সবসময় বলি সিনিয়রদের সঙ্গে কাজ করলে অভিনয়ের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় জানা যায়, শেখা যায়। ছবিতে অনেক সিনিয়র সহশিল্পী ছিলেন যাদের অভিনয় দেখেছি। তারা কিভাবে সংলাপ বলেন, এক্সপ্রেশন দেন- সব খেয়াল করেছি। আগামীতে আমার অভিনয়ে তার প্রতিফলত দেখতে পারবেন আশাকরি।
- কলকাতার একটি দৈনিকে সাক্ষাৎকারে দুই বাংলার কাজের কিছু পার্থক্যের কথা বলেছেন। যেমন– দেশে শুটিং ভ্যান না পাওয়া, কলটাইম অনুযায়ি শুটিং শুরু না হওয়া । বাইরের পত্রিকায় এমন অভিযোগ দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে কতোটা ইতিবাচক?
আমার কখনও মনে হয় না যে, সেখানে আমি এমন কিছু বলেছি যাতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। কারণ আমাকে যখন বাংলাদেশে একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় তখন আমি একই কথা বলি। আমাদের যখন আউটডোর শুটিং থাকে, তখন আমাদের একটি মেক-আপ ভ্যান খুব দরকার। মেক-আপ ভ্যান না থাকায় শিল্পীদের অনেক কষ্ট হয়। নিজেদের গাড়ীকে মেক-আপ ভ্যান বানাতে হয়।
আর কলটাইমের ব্যাপারটা হলো, সব শুটিং স্পটে এমনটা হয়না। অনেক নির্মাতাদের সাথে কাজ করেছি যারা ঠিক সময়ে শুটিং শুরু করেন। এমন অনেক ছবিতে আমি কাজ করেছি যেখানে আমি সেটে গিয়েছি সকাল সাতটায় কিন্তু শুটিং শুরু হয়েছে দুপুর তিনটায়।
- বাংলাদেশের সুপারস্টার শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন আবার কলকাতার সুপারস্টার জিৎ-এর বিপরীতে অভিনয় করলেন। এদের মধ্যে কোন সুপারস্টারকে এগিয়ে রাখবেন?
তারা দুইজন দুই দেশের। তাদের একসাথে মিলানো ঠিক হবে না। শাকিব খানের যেমন বাংলাদেশের পাশাপাশি কলকাতায় জনপ্রিয়তা রয়েছে। জিতেরও তেমন বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা রয়েছে। সুপার স্টার হিসেবে তারা দু’জনই এগিয়ে। নিজ নিজ জায়গায় তারা সেরা। আমি সৌভাগ্যবান যে এই দুই সুপারস্টারের বিপরীতে অভিনয় করতে পেরেছি।
- দেশের বাইরে তো সবসময় অভিনয় করা সম্ভব না। দেশে যদি কাজের সুযোগ কমে যায় তাহলে যে কারো ক্যারিয়ারের জন্য সেটা খারাপ বলে সবাই মনে কেরেন। পর্দায় আপনার উপস্থিতি কমে এসেছে। এতে আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
শঙ্কা প্রকাশ করার কোন কারণ নেই। আমি যখন দেশের বাইরে কাজ করি তখন কোন না কোন ছবির জন্য কাজ করি। একটি ছবির কাজে ব্যস্ত থাকলে ছোট পর্দায় উপস্থিতি কমে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে এই নয় আমার ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়বে। ভালো কাজ করার জন্য কিছু স্যাক্রিফাইজ করতে হয়।
- সমালোচকদের সমালোচনা কিভাবে গ্রহণ করেন?
সমালোচনা আমি খুব ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করি। সমালোচনা না করলে ভুল ত্রুটি ধরা পড়বে না। সমালোচনা করার ফলে আমি বুঝতে পারি কোথায় আমার ভুল হচ্ছে। আগামীতে যেনো একই ভুল না হয় সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকি।
ছবি: আশীষ সেনগুপ্ত
সারাবাংলা/আরএসও/পিএ