আদালত চত্বরে ৭ বছর, তবু আশা ছাড়েননি ক্যাথরিন মাসুদ
১৩ আগস্ট ২০১৮ ২০:১৪
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ এবং এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরের পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা মামলা সাত বছরেও নিষ্পত্তি না হওয়ায় হতাশা জানিয়েছেন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ।
মিশুক মুনীরের ক্ষতি পূরণ চেয়ে করা মামলায় তিন দিন এসে সাক্ষ্য দিতে না পারায় সোমবার (১৩ আগস্ট) হাইকোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সারাবাংলাকে এই হতাশার কথা জানান তিনি।
ক্যাথরিন মাসুদ বলেন, আজ আমার সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। প্রথমে ৮ তারিখ ঠিক ছিল। সেটা পিছিয়ে পরে আবারও ১২ তারিখ নতুন দিন দেওয়া হয়। এরপর ১৩ তারিখ করা হলো। কিন্তু আজও সাক্ষ্য গ্রহণ নেওয়া হয়নি। আমি বলবো আমরা একটু হতাশ। তারপরও দ্রুত প্রক্রিয়ার মধ্যে সমাধান হবে এমনটি আশা করছি।’
আরও পড়ুন : স্মরণে তারেক-মিশুক
তারেক মাসুদের মামলাটি আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মামলা আপিল শুনানির জন্য প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আশা করছি সেটাও যাতে দ্রুত শেষ হয়।’
তিনি বলেন, ক্ষতিপূরনের এ মামলাটি একটি চ্যালেঞ্জ। কেননা এ মামলার মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করছি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনের। যাতে অন্যরাও ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।
আজকের দিনকে শোকের দিন উল্লেখ করে ক্যাথরিন মাসুদ বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সড়কে প্রাণ হারাচ্ছে। শত শত পরিবার কষ্টভোগ করছে। দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে পুরো পরিবারকেই কষ্ট করতে হয়। সেই কারণেই এ মামলায় ক্ষতিপূরনের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদালতের মাধ্যমে এটা তাড়াতাড়ি সমাধান হবে এমনটি প্রত্যাশা করছি। সুবিচার পাবো সেটিও আশা করছি।’
পরে মিশুক মুনীরের পরিবারের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার বিলকিস আক্তার মিলি সারাবাংলাকে জানান, আজ এ মামলায় ক্যাথরিন মাসুদের স্বাক্ষ্য গ্রহনের জন্য দিন ঠিক করা ছিল। কিন্তু অপরপক্ষ থেকে সময় চাওয়ায় স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা আদালতের কাছে বলেছি, যেহেতু ক্যাথরিন মাসুদ ১৫ তারিখ আবার আমেরিকায় চলে যাবেন এই কারণে তার স্বাক্ষ্য গ্রহনের প্রার্থনা করি। কিন্তু বাস মালিকপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহানের প্রস্তুতি না থাকায় স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি।
পরে আদালত এ মামলায় আগামী ১৬ অক্টোবর পুলিশের জবানবন্দি গ্রহনের জন্য দিন ঠিক করে মুলতবি করেছেন।
আরও পড়ুন : তারেক মাসুদ, রানওয়ে ও রুহুলের গল্প [ভিডিও স্টোরি]
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের এই দিন মানিকগঞ্জের ঘিওরে সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ ৫ জন নিহত হয়।
এ ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জে মোটরযান অর্ডিন্যান্সে ১২৮ ধারায় বাস মালিক, চালক ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুটি মামলা করেন।
পরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে জনস্বার্থে হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করলে মামলা দুটি হাইকোর্টের চলে আসে। দীর্ঘ শুনানি শেষে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাসমালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেন বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করায় মামলাটি আপিলে শুনানির অপেক্ষায় আছে। অন্যদিকে, মিশুক মনিরের মামলাটি হাইকোর্টের বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামিমের বেঞ্চে শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন-
‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে গেছে’
সারাবাংলা/ এজেডকে/জেডএফ