‘বাংলাদেশে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থাকাই উচিত না’
১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:০০
রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
লাল শাড়ি পরে বউয়ের সাজে ববি। কান বেয়ে নাকে এসে জায়গা নিয়েছে সোনার নোলক। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, আর অফুরন্ত ভালোবাসার জমানো দু’চোখ। চোখ চুঁইয়ে ভালোবাসা যেনো ঝোড়ো হাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছে শাকিব খানের হৃদয়ে। রাজধানীর তেজগাঁও কোক স্টুডিওতে ববি এমন মুগ্ধতা ছড়ানো সাজে ধরা দেন ক্যামেরায়। সেখানে চলছে তার বহুপ্রতীক্ষিত ‘নোলক’ ছবির গানের শুটিং। গোডাউন ঘরে সাজানো হয়েছে বাসর ঘর। ফুল আর শত শত মোমবাতিতে ভরা চারপাশ। সোনালী আলোর আভায় ববি যেনো প্রতিমারুপী এক নায়িকা।
শুটিংয়ের ফাঁকে মেকাপরুমে কথা হয় ববির সঙ্গে। আলোচিত সমালোচিত ‘নোলক’ ছবি নিয়ে তিনি বিস্তারিত কথা বলেছেন। সেই সাথে ক্যারিয়ারে নানাদিক নিয়ে গল্প করেছেন।
- সিনেমার নাম ‘নোলক’ সেজন্যই কি সবসময় নোলক পরে থাকতে হচ্ছে?
সবসময় পরতে হচ্ছে না। নোলক নিয়ে পুরো গল্পটা। ছবিতে নোলকের ওপর আমার আলাদা ভালোবাসা থাকে। একটি নির্দিষ্ট দৃশ্য থেকে শেষ পর্যন্ত নোলক পরে থাকতে হয়।
- ‘নোলক’ নিয়ে যে জটিলতা তৈরী হয়েছে সেটা নিয়ে আপনার অভিমত জানতে চাই। কারণ আপনি এই ছবির একটি অংশ।
পরিচালক নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি সবাই কমবেশি জেনে গেছেন। কাজের সময় পরিচালক আমাকে প্রথমে বলেননি। কারণ তিনি চেয়েছিলেন কাজটি ভালোভাবে শেষ হোক। সব কাজ প্রযোজক করবেন, পরিচালক হিসেবে নাম যাবে রাশেদ রাহার। এভাবেই সব কাজ এগোচ্ছিলো। ছবির কাজ অনেক আগে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। আমি আর শাকিব খান টানা শিডিউল দিয়েছিলাম। রাশেদ রাহার অপেশাদরিত্বের কারণে ছবিটা সময় মতো শেষ করা যায়নি। আমরা শিল্পীরা প্রথম থেকেই দেখছিলাম বেশিরভাগ কাজ প্রযোজক করছেন। রাশেদ রাহা কেবল নামের জন্য ছবিটি করেছেন। সে শুধু সেলফি তোলা আর পরিচিত সাংবাদিকদের দিয়ে নিউজ করাতে ব্যস্ত ছিলেন।
- পরিচালক সমিতি তো সাংগঠনিক নীতিমালা সামনে এনে রাশেদ রাহার পক্ষেই কথা বলছেন। তাহলে পরিচালক সমিতি কি ভুল করছে?
আমার আর শাকিব খানের সব ছবি কিন্তু হিট হয়েছে। ‘নোলক’ ছবি নিয়ে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। খুব ভালো একটি সিনেমা হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এটির হাইপ তৈরী হয়ে গিয়েছে। একজন হাফ ডিরেক্টর, যিনি সবময় অ্যাডিক্ট থাকেন তার কথায় পরিচালক সমিতি এতোগুলো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন-এটা আমি আশা করিনি। অ্যাডিক্টেড একটি মানুষের পায়ে পড়তে সময় লাগে না, মাথায় উঠতেও সময় লাগেনা। পত্রিকায়ও এতো লেখালেখি, বাড়াবাড়ির কোন প্রয়োজন ছিল না।
ব্যাপারটি এমন যে, একটি ভালো ছবির ক্ষতি করার জন্য আমরা উঠেপড়ে লাগি। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, বাংলাদেশে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি থাকা উচিত নয়। যেটা চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে সেটা নিয়ে এতো জটিলতা কেনো? যে পরিচালকের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই সে কিভাবে পরিচালক হন?
ডিরেক্টর একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার জায়গা সবার ওপরে। তাকে নিয়ে চাইলে সবাই নেতিবাচক কথা বলতে পারে না। কিন্তু বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে। এটি নিয়ে আমি খুব আপসেট। আমি অনেক গুনী পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। সেখানে আমাকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়নি।
- পত্রিকায় তো লেখা হচ্ছে ছবি নাকি পরিচালকের কাছ থেকে ‘ছিনতাই’ করা হয়েছে!
এরকম অদ্ভূত ধরনের নিউজের কোন ভিত্তি নেই। আমি প্রচন্ড রকমের অবাক হয়েছি। খবরে পড়েছি ইফতেখার চৌধুরি নাকি ছবিটি পরিচালনা করছেন। এরকম বানোয়াট খবর কিভাবে লেখে আমার জানা নেই। তিনি ভিএফএক্স এর কাজ দেখছেন এই ছবির। কোনভাবেই পরিচালনা করছেন না। অথচ রাহা মিথ্যা বিষয়টাকে ইস্যু করে মিথ্যা নিউজ করাচ্ছে। যদিও এখন তো প্রমাণ হয়েই গেছে যে ইফতেখার চৌধুরি ডিরেকশন দিচ্ছেন না।
- তাহলে আপনি কেনো অভিনয় করলেন?
এই ছবিতে প্রযোজক অনেক টাকা লগ্নি করেছেন। হায়দ্রাবাদে শুটিং করেছেন। সেখানে গিয়ে যদি বলতাম শুটিং করব না, তাহলে প্রযোজক কিন্তু লোকসানের মুখে পড়তেন। এমনিতেই আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে প্রযোজক কম। সেকারণে একজন বিবেকবান শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছি।
- ‘নোলক’– এ ববিকে কোন চরিত্রে দর্শক দেখতে পাবে?
মফস্বল শহরের অভিজাত পরিবারের মেয়ে আমি। আমার নাম থাকে কাজলা। খুব ডানপিটে স্বভাবের। শাকিব খানও খুব ডানপিটে। সবসময় দু’জনের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে। সবসময় একজন অন্যজনকে টেক্কা দিতে চায়। ছোট করতে চায়। হিংসুটে সম্পর্ক থাকে। এরকম চরিত্রে দর্শক ববিকে কখনও দেখেনি। ছবির চরিত্রটি আমার অনেক পছন্দের।
- ববি কি জুটি প্রথায় বিশ্বাসী?
(কিছুক্ষণ ভেবে) জুটি প্রথা নয়। আমি ভালো ভালো কাজ করতে বিশ্বাসী। যখন যার সঙ্গে কাজ করিনা কেনো, দর্শক যেনো দেখেই বলেন ‘দে আর মেড ফর ইচ আদার’। শাকিব, বাপ্পী, সায়মন বা রোশান-সবার সঙ্গে আমার রসায়ন দেখে দর্শক প্রশংসা করেছেন। একজন নায়কের সঙ্গে নিয়মিত ছবি করেই যেতে হবে, এটা হতে পারে না। তাছাড়া জুটি প্রথা সেকেলে। এখনকার সময়ে এসে জুটি নিয়ে বসে থাকলে হবে না।
- আপনি বললেন শাকিব খানের সঙ্গে আপনার সব ছবি হিট। তাহলে তার সঙ্গে আপনাকে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে না কেনো?
এটা আমি বলতে পারব না। এটা পরিচালক, প্রযোজক আর শাকিব খান বলতে পারবেন। শাকিব অনেক বড় মাপের তারকা। তার সঙ্গে আমার পাঁচটি ছবি করা হয়েছে। সামনে আরও বাড়বে যদি শাকিব খান চান।
- শাকিব খান চান! তারমানে নায়িকা নির্বাচনে শাকিব খানের বড় ভূমিকা রয়েছে?
অবশ্যই ভূমিকা রয়েছে। এটা খুব স্বাভাবিক। আমি এতে দোষের কিছু দেখি না। তিনি বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রির সুপারস্টার। সে হিসেবে তার তো প্রভাব থাকবেই। তবে লবিং বা পলিটিক্স করে নায়িকাকে বাদ দিতে হবে এতে আমি বিশ্বাসী নই। যে চিত্রনাট্যে আমাকে ডিমান্ড করে। পরিচালক, প্রযোজক বা দর্শক যেভাবে দেখতে পছন্দ করবেন আমি সেভাবে পর্দায় উপস্থিত হতে চাই। এতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
- প্রযোজক হিসেবেও আপনার অভিষেক ঘটেছে। প্রথম ছবি প্রযোজনায় সফলতা কতটুকু?
সফল বলব নিজেকে। ছবি রিলিজ হওয়ার পর সবাই আমার প্রশংসা করেছেন। উৎসাহ দিয়েছেন। এটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। সম্পূর্ণ নতুন ধরণের গল্পে আমি ‘বিজলী’ নির্মাণ করেছি। এরকম ব্যত্ক্রিম কিছু করার ইচ্ছা ছিল আমার। সেটা আমি করেছি।
- সেক্ষেত্রে ছবির সিক্যুয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা আছে কি?
বাইরে এধরনের ছবি করতে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়। যদিও তাদের অনেক বাজেট থাকে। আমাদের ওরকম বাজেট নেই। সিক্যুয়াল নির্মাণের জন্য সময়ের প্রয়োজন। তবে পরিকল্পনা আছে। সে জন্য বিজলীর ওপেন এন্ডিং ছিল।
- প্রযোজনা তো করলেন। অভিজ্ঞতাও হয়েছে। বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি কি প্রযোজকদের জন্য নিরাপদ?
আমার কাছে প্রযোজনা করা খুব কঠিন কাজ মনে হয়েছে। ছবি মুক্তি দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এখানে সিন্ডিকেট রয়েছে। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা রয়েছেন। যদিও তাদের বিষয়টি আমি এখনও পরিস্কার না। আমি ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের মানুষ হয়েও তাদের বুঝতে হিমিশিম খেয়ে যাচ্ছি। যখন বাইরের কেউ ইনভেস্ট করবে তখন তার জন্য আরও কঠিন মনে হবে। প্রযোজকদের বাঁচাতে হলে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। সেই সাথে ডিজিটাল টিকেট চালু করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে এতো আলেচনা হওয়ার পরও সমাধান হচ্ছেনা। কেনো হচ্ছে না সেটা এক রহস্য!
- ইন্ডাস্ট্রিতে ববি কাউকে প্রতিযোগী মনে করে?
আমি নিজেকেই নিজের প্রতিযোগী মনে করি। প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গেই প্রতিযোগীতা করি। নিজেকে প্রতিযোগী ভাবলে কাজের প্রতি আরও মনোযোগ বাড়ে। ভালো করার চেষ্টা করার তাগিদ থাকে।
- আপনার ক্যারিয়ার যেভাবে এগোচ্ছে তাতে কি আপনি সন্তুষ্ট?
কোন শিল্পী তার ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেনা। আমার ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে মনে হয়, এখন যেখানে আছি ভালো আছি। আবার পরক্ষণে মনে হয় আমার আরও বড় শিল্পী হওয়া উচিত। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।
- জুন মাসের খবর। ‘রক্তমুখী নীলা’ নামের একটি কলকাতার ছবিতে অভিনয় করছেন। ছবিটি কোন অবস্থায় আছে?
সেপ্টেম্বরের ১৯ তারিখ থেকে ছবির শুটিংয়ের কাজ শুরু হবে। ছবিতে আমার বিপরীতে তামিল নায়ক সব্যসাচী অভিনয় করবেন। এছাড়া মুম্বাইয়ের কিছু শিল্পী অভিনয় করবেন। তিনটি ভাষায় ছবিটি ডাবিং করা হবে। সংগীতায়োজন করবেন রাজেশ রোশান। তিনি মুম্বাইয়ের অনেক বড় একজন সংগীত পরিচালক। সবকিছু মিলে ভালো একটি ছবি হবে।
- ছবিটির সঙ্গে কিভাবে যুক্ত হলেন?
কলকাতা থেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আমার আর শাকিব খান অভিনীত একটি ছবির গান দেখে তাদের ভালো লাগে। পরে ছবিটি দেখেছেন তারা। তারপার তারা আমাকে ছবিতে কাস্ট করেন।
ছবি: আশীষ সেনগুপ্ত
সারাবাংলা/আরএসও/টিএস/পিএ
আসিফের সঙ্গে সারাবাংলায় আড্ডা। পুরোটা দেখুন >>>
https://www.youtube.com/watch?v=LtQWltCxTCU&t=36s