Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘হিমু চোখের সামনে ঘোরাফেরা করছে’


২ জানুয়ারি ২০১৮ ১৮:৩৭

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপনডেন্ট

সারাবাংলার ফোনকলটা যখন বাংলাদেশ থেকে কলকাতা গিয়ে পৌঁছালো ক’দিন আগে, ক্লান্ত দুপুর তখন। টানা দশদিন অফুরন্ত কাজের পর একদিন বিশ্রাম পেয়েছেন সেদিনই। জ্যোতিকা জ্যোতি বিছানা ছেড়ে উঠলেন। ভিডিও কনফারেন্সে দেখা দিলেন- নীল হুডি, ওপরে আরও একটা কালচে হাফহাতা জ্যাকেটে। গলা কাঁপছে। ঠান্ডা কি একটু বেশিই পড়ছে কলকাতায়?

ঠান্ডা তিনি নিজেই লাগিয়ে বসে আছেন। যতোটা বেশি শরীরে, তারচে বেশি মনে। জ্বর জ্বর বোধ হচ্ছে সারাক্ষণ। ঘুম কমতে কমতে প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। ‘ঘুম হচ্ছে না উত্তেজনায়। এতো ভালো কেন হচ্ছে- এই উত্তেজনায় ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। শুটিংয়ের ঘোরে সারাক্ষণ মনে হচ্ছে জ্বর চলে আসবে’- জ্যোতিকা জ্যোতি কারণ দর্শানোর অজুহাতে আমাদেরকে রাজলক্ষ্মী-যুগে ঠেলে দেন।

রাজলক্ষ্মী তার নির্ঘুম রাতের কারণ। প্রত্যাশার সাগরে একটু করে ডুবতে-ভাসতে থাকার কারণ। দেশ ছেড়ে, মা-মাটি ছেড়ে মাসের পর মাস বিভুঁইয়ে পড়ে থাকার কারণ। তার নাচের রিহার্সেল আরও খানিকটা বিলম্বে ঠেলে দিয়ে জ্যোতির কাছ থেকে এই যে সারাবাংলা আধঘণ্টা কেড়ে নিলো, সেটার কারণও ওই রাজলক্ষ্মী।

শরৎকাহিনীর রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্তকে, নতুন করে এবং পরিবর্তিত আবহে, পর্দায় আনছেন প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য। কলকাতার এই নির্মাতা এপারেও সমান পরিচিত ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ দিয়ে। তার রাজলক্ষ্মী হয়েই এখন দিন কাটাচ্ছেন জ্যোতিকা জ্যোতি। কলকাতার পথে-ঘাটে-বাড়িতে দশ দিন শুটিং করে ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবির ইউনিট এখন মেদেনীপুরের পুরুলিয়ায়। গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর কাজ হবে ওখানেই। এরপর গন্তব্য- সুন্দরবন!

বিজ্ঞাপন

যেভাবে রাজলক্ষ্মী হয়ে ওঠা

প্রদীপ্তর সঙ্গে পরিচয়টা আগেই হয়ে গিয়েছিলো জ্যোতির। প্রদীপ্তর কাজ জ্যোতি দেখেছেন। বিভিন্ন সময়ে কলকাতার ফেস্টিভ্যালগুলোর স্ক্রিনে ‘অনিল বাগচীর একদিন’ আর ‘জীবনঢুলি’তে জ্যোতিকে দেখে নিয়েছেন প্রদীপ্ত। তাই রাজলক্ষ্মীকে হণ্যে হয়ে খোঁজার প্রয়োজন পড়েনি। বছরখানিক আগে থেকেই আলাপ মোটামুটি এগিয়ে ছিলো জ্যোতির রাজলক্ষ্মী হয়ে ওঠার ব্যাপারে।

একজন হিমু চোখের সামনে সারাক্ষণ

‘ঋত্বিক কেমন?’ প্রশ্নের পর জ্যোতি ক্যামেরা আরও কাছাকাছি এনে টেবিলে বসলেন। হয়তো ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে কাটানো এ ক’দিন থেকে ফ্ল্যাশব্যাকে ঘুরে এলেন মুহূর্তেই। হাসলেন। ‘ও পুরোপুরি একটা হিমু। মনে হচ্ছে হিমু চোখের সামনে সারাক্ষণ ঘোরাফেরা করছে’- জ্যোতির বয়ানের সূত্র ধরে এটাও জানা হয়ে গেলো, হুমায়ূন আহমেদের হিমু চরিত্রের সঙ্গে ঋত্বিক বেশ ভালোভাবেই পরিচিত। ছবিটি নিয়ে, চরিত্রগুলো নিয়ে জ্যোতির ভাবনা পুরোপুরি মিলে যায় ঋত্বিকের সঙ্গে। জ্যোতির মতে, ‘একটা ম্যাজিক তৈরি হয়ে গেছে।’

‘এখনও কোনো শট এনজি হয়নি’

সৃষ্টি হওয়া সেই ম্যাজিক্যাল এলিমেন্ট কাজে লাগছে প্রতি মুহূর্তে, প্রতি শটে। দশদিনের শুটিং শেষে তাই জ্যোতির উচ্ছ্বসিত সারমর্ম, ‘আমাদের কোনো শট এখনও এনজি হয়নি।’ শুটিংয়ের বেশ আগে থেকে, যখন জ্যোতি কলকাতা ছিলেন, প্রতি মুহূর্তে নার্ভাসনেস ক্লান্ত করতো তাকে। তীব্র ভয়। আর প্রত্যাশা পূরণের চাপ।
তবে চাপ অনেকটাই (জ্যোতির ভাষায়- এইটটি পার্সেন্ট) মাথার চুল বেয়ে নেমে যায় প্রথম দিনের শুটিংয়ের পর। ২০ ডিসেম্বরের পর। পরদিন যে সকালটা আসে, ফুরফুরে, উদ্বেগহীন।

বিজ্ঞাপন

যদিও জ্যোতির মনে হয় ‘এ জীবনে আমার খুঁতখুঁতানি শেষ হবে না’, তবুও প্রতি শট শেষে পরিচালকের মুখের নয়া বিশেষণ ‘জোস তো’- তার মনে ও মগজে উত্তেজনা ঢালছে প্রতিদিন।

মাকে ফোন করা হয়নি তিন দিন

‘বাড়ির খাবার আর বাংলাদেশের হাওয়া বাতাস খেতে মন আনচান করে! মাকে চুমু খেতেও!’ শুটিংয়ের অবসরে, কাঁটাতারের ওপারে বসে, মাঝেমধ্যেই মন উতলা হয় জ্যোতির। মাকে ফোন করেন তখন। শুটিংয়ের ব্যস্ততা, ক্লান্তি, নির্ঘুম রাত আর হালকা অসুস্থতার ঘোরে মায়ের সঙ্গে কথা হয়নি তার, তিন দিন। তবে চরিত্রটির জন্য জ্যোতি যেমন মেলে দিয়েছেন নিজেকে। মা-ও তার, তেমনি, উৎসর্গ করেছেন প্রতিদিন কন্যার ছোঁয়া পাবার আবদার। রীতিমতো নির্দেশ আছে মায়ের পক্ষ থেকে, জ্যোতির জন্য- শুটিং শেষ না করে মাথায় যেন দেশে ফেরার ভাবনাও না আসে!

সারাবাংলা/কেবিএন

ঋত্বিক চক্রবর্তী জ্যোতিকা জ্যোতি রাজলক্ষ্মী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর