Saturday 07 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্মৃতির শহরে নিথর দেহে ফিরলেন রকস্টার


২০ অক্টোবর ২০১৮ ১৩:১১ | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:৩৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম ব্যুরো ।।

চট্টগ্রামের প্রকৃতি যেন থমকে আছে। চাপা কান্নার আওয়াজ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। প্রিয় মানুষ হারানোর ব্যথা বন্দর নগরীর মানুষদের সইতে হচ্ছে। এ ব্যথা যে সইবার নয়। তবু সইতে হয়। ব্যথা বুকে নিয়েই ভোর থেকে তারা অপেক্ষা করছিল সদ্য ওপারে পাড়ি জমানো কিংবদন্তি রক সংগীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার জন্য।

শনিবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১০ টা ৫৫ মিনিটে আইয়ুব বাচ্চুর নিথর দেহ ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটে শাহ আমানত বিমান বন্দরে এসে পৌঁছায়। চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাসিরউদ্দিন কফিনাবৃত মৃতদেহটি গ্রহণ করেন। বেলা আনুমানিক ১২ টার সময় রক লিজেন্ডের মৃতদেহ শহরের মাদারবাড়িতে তার নানাবাড়িতে নিয়ে যাওয়া যাওয়া হয়। মূহুর্তেই আত্মীয় স্বজন ও অগণিত ভক্তদের কান্নায় ভারী হয়ে ওছে সেখানকার পরিবেশ।

বিজ্ঞাপন

এই নানাবাড়িতে শৈশবের সময় কেটেছে আইয়ুব বাচ্চুর। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এক এলাকা থেকে অন্য এলাকা। দুরন্তপনায় মেতে থাকতেন সবসময়। নিজের সেই শৈশবের বাড়িতে ফিরলেন প্রাণহীন হয়ে। কেউ কি ভাবতে পেরেছিল এভাবে এতো দ্রুত ফিরবেন তিনি? ঘুণাক্ষরেও হয়ত কেউ ভাবেননি।

আইয়ুব বাচ্চুর মামা আলিম লোহনিও ভাবতে পারেননি। ভাগ্নের অসময়ে চলে যাওয়া তাকে শোকস্তব্দ করে দিয়েছে। ভাগ্নের ছোটবেলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা জুতার ব্যবসা করি। ছোটবেলায় বাচ্চুকে আমি জুতার দোকানে বসাই। কিন্তু দোকান বা ব্যবসা করার মতো ছেলে সে ছিল না। বিকাল হলেই সে বিভিন্ন কৌশলে দোকান থেকে বেরিয়ে গান বাজনার সঙ্গে যুক্ত বন্ধুদের সঙ্গে গান নিয়ে মেতে থাকত। তারপর সে একসময় ঢাকা চলে যায়। নিজের প্রতিভা আর ইচ্ছাশক্তির দ্বারা সে বাংলাদেশের কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন।’

সোলস ব্যান্ডের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী আইয়ুব বাচ্চুর ছোটবেলার বন্ধু। তিনি বন্ধুর মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। তিনি বন্ধু সম্পর্কে বলেন, ‘আমি ফিলিংস ব্যান্ডে গীটার বাজাতাম, বাচ্চুও ফিলিংসে ছিল। পরে সে সোলসে চলে যায়। পরে সে আমাকেও সোলসে যেতে বললে আমিও চলে যাই। আমি ওকে একদিন গান গাইতে বলি। কারণ ওর গলা ভালো ছিল। কিন্তু তখনকার জনপ্রিয় শিল্পীদের যুগে নিজে এগোতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দিহান ছিল! আমি ওকে সাহস যোগাই। তারপরের কথা তো সবার জানা।’

এদিকে আইয়ুব বাচ্চুর আরও এক বন্ধু সুব্রত চৌধুরী রনি দাবি করেন, তাকে যেন মরোণত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত করা হয়। কারণ তাকে জীবদ্দশায় সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি বলে তিনি মনে করেন।

নানাবাড়িতে পৌঁছানোর পর রকস্টারের মৃতদেহ নানার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান আত্মীয় স্বজনরা মৃতদেহ দেখার পর দুপুরে দুইটার দিকে নিয়ে যাওয়া হবে স্থানীয় জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রঙ্গণে। সেখানে জনসাধারণের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য রাখা হবে। বাদ আসর নামাজের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হবে।

প্রিয় সংগীতশিল্পীকে দেখার জন্য মাদারবাড়িতে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে  হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছে। পুলিশ উৎসুক জনতার ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

সারাবাংলা/আরডি/আরএসও/টিএস

আইয়ুব বাচ্চু চট্টগ্রাম মাদারবাড়ি