টাকা ফেরত না এলে সিনেমা বানিয়ে কি লাভ? : ইলিয়াস কাঞ্চন
২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:১১
রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
জীবনের ছয় দশকের বেশি সময় পার করে ফেলেছেন বাংলাদেশের সব্যসাচী চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। আজ (২৪ ডিসেম্বর) পদার্পণ করলেন ৬৩ বছরে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের সব থেকে ব্যবসা সফল ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ ছবিতে। ছবিটি তাকে পৌঁছে দেয় খ্যাতির চূড়ায়।
ইলিয়াস কাঞ্চনের মতে তার জীবন একটি উপন্যাসের পাতা। ঘটনাবহুল জীবন নিয়ে নির্মাণ করা যাবে একাধিক সিনেমা। সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে তিনি নিজের জীবন এবং চলচ্চিত্র নিয়ে মন খুলে কথা বলেছেন।
- জীবনের ৬২ বছর পেরিয়ে গেল আজ। এই দীর্ঘ জীবনে আপনার উপলব্ধির কথা বলুন।
প্রত্যেক মানুষেরই পৃথিবীতে কিছু না কিছু করে যাওয়া দরকার। শুধু আসলাম আর গেলাম- তাতে পৃথিবীর কোনো লাভ হলো না। এটা উচিত নয়। সামর্থ্য থাকলে মানুষের জন্য কিছু করে যাওয়া উচিত। অনেক সময় পার করে ফেলেছি। আমি যদি আরও আগে বুঝতে শিখতাম তাহলে মানুষের জন্য কল্যাণকর কিছু করতে পারতাম। সবার কিন্তু মানুষের কল্যাণে কাজ করার উপলব্ধি হয় না। আমার হয়েছে। তবে দেরিতে। আমি একদিন চলে যাবো। তবে যতোদিন বেঁচে থাকব ততোদিন মানুষের জন্য কাজ করে যাবো ক্লন্তিহীনভাবে।
- আপনার কাছে জীবন মানে ?
জীবন খুব মূল্যবান জিনিস। জীবন একটাই। এই এক জীবনকে কাজে লাগাতে হবে। কেবল জীবিত থাকাকালীন সময় মানুষ কাজ করতে পারে। আবার জীবনের একটা সময় পর জীবন ভোঁতা হতে থাকে। তখন তাকে অন্যের ওপর নির্ভর হয়ে চলতে হয়। এক জীবনে সুখ থাকে। দুঃখ থাকে। থাকে না পাওয়ার বেদনা।
আরও পড়ুন : ‘সার্ভাইভিং ৭১’-এর প্রথম ঝলক আসবে ২৬ মার্চ
- নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন আর ব্যক্তি ইলিয়াস কাঞ্চন- দুইয়ের মাঝে কোন পার্থক্য ?
নায়ক এবং ব্যক্তি ইলিয়াস কাঞ্চনের মধ্যে পার্থক্য আছে বলবো না, সম্পর্ক আছে। আমার আজকের এই জীবনটাকে একটি চিত্রনাট্য মনে হয়। একের পর এক সিকোয়েন্স পার করে এখানে এসে পৌঁছেছি। আমি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কাজ করছি। এই কাজটি করার জন্য একটি ক্ষেত্র তৈরী করতে হয়। সেই পরিবেশটা তৈরী করার জন্য হয়ত আমি চলচ্চিত্রে এসেছিলাম। ধরুন, আগে রাস্তায় কিছু হকার ডুগডুগি বাজিয়ে লোক জড়ো করতো। তারপর তারা জড়ো হওয়া মানুষের সামনে নিজেদের পণ্য বিক্রি করতো। আমার কাছে মনে হয় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছি। সেই ভালোবাসার কারণেই আমি ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন এতোদূর নিয়ে আসতে পেরেছি। বলা যায় আমার ব্যক্তি জীবন, চলচ্চিত্র জীবন- একই সুঁতোয় গাঁথা।
- চলচ্চিত্র অভিনয় থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা, যা আপনার জীবনকে অন্য মাত্রা দিয়েছে!
আমি ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা পেয়েছি চলচ্চিত্র থেকে। সিনেমায় আমার চরিত্রের কাজই ছিল সবসময় মানুষের উপকার করা। বিপদে সাহায্য করা। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। এগুলো কিন্তু আমার জীবনের মধ্যে একাত্ম হয়ে গিয়েছে।
- অনেক সিনেমায় অনেক নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। তাদের মধ্যে থেকে কোন নায়িকা পছন্দের?
আমি সবসময় ভালো ছবি করার চেষ্টা করেছি। এটা আমার নিজের স্বার্থের ব্যাপার। সে হিসেবে বলতে পারেন আমি স্বার্থপর (হাসি)। আমি যদি একটি ভালো সিনেমা করি তাহলে সবাই আমার পিঠ চাপড়াবে। বাহবা দেবে। আমার পারিশ্রমিক বাড়বে। সেই সঙ্গে আমার সমসাময়িক নায়কদের থেকে নিজেকে এগিয়ে আসতে পারবো। সব নায়িকা আমার কাছে সমান ছিল। সত্য বলতে কাজটাকেই আমি প্রাধান্য দিয়েছি।
আরও পড়ুন : নানা আয়োজনে সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিন
- বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা কি আপনাকে ভাবায়?
ইন্ড্রাস্ট্রি আমাকে ইলিয়াস কাঞ্চন বানিয়েছে। সেকারণে সিনেমা নিয়ে ভাবতে হয়। কিন্তু দেশের সিনেমা সেভাবে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। ভালো গল্পের সিনেমা হচ্ছে না। সেই একই গল্পে এখনো ছবি হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে গল্পের ধরন বদলাতে হয়। আগে যে নায়ক-নায়িকার প্রেম হতো। তাদের বিচ্ছেদ হলে মানুষ কেঁদে বুক ভাসাতো। এখন সে আবেগ নেই। মানুষের এখন সিনেমার প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। তারা অর্থের পেছনে ছুটছে। এমনকি মানুষ টাকার কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে টাকার ভেতর মানুষ বিনোদন খুঁজে পাচ্ছে।
তাছাড়া আগে মানুষ চাইলে যে কোন সময় প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখতে পারতো। এখন সিনেমা দেখতে গেলে তো পুরো দিনটি মাটি হয়ে যায়। সিনেমা হলে যেতে আসতেই তো সময় চলে যায়। সিনেমা হলে যেতেই যদি দুই তিন ঘন্টা লাগে তাহলে সিনেমা দেখার মুড থাকে না। এর ফলে মানুষ হাতের মোবাইল ফোনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। অনলাইনে তারা ইচ্ছামতো অনুষ্ঠান দেখছে। সিনেমা হলে যাওয়ার আর প্রয়োজন পড়ছে না।
- স্বপ্নের কোন স্বপ্নের চরিত্রে অভিনয় করার আক্ষেপ আছে?
কোন চরিত্রই শিল্পীকে পূর্ণতা দেয় না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে তার স্বপ্নের চরিত্রের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। হলিউড, বলিউডের অনেক ছবি দেখলে মনে হয়, ওরকম চরিত্রে যদি অভিনয় করতে পারতাম! তবে ঐ চরিত্রে অভিনয় করলেই যে আমার তৃপ্তি আসবে সেটাও কিন্তু না।
- দুটি সিনেমা পরিচালনা করেছেন। সামনে কি পরিকল্পনা আছে কোনও?
সিনেমা বানালে যদি টাকা ফেরত না আসে তাহলে বানিয়ে কি লাভ? সিনেমা তৈরীর পরিবেশ নেই। হল সংখ্যা কমছে। তাছাড়া আমার এখন অনেক দায়িত্ব। দাদা হয়েছি, নানা হয়েছি। সন্তানদের কথাও তো ভাবতে হবে।
আগে যারা সিনেমা বানাতেন তারা প্রকৃতপক্ষে সিনেমার লোক ছিলেন। তারা সিনেমা বুঝতেন। এখন যারা সিনেমা বানাচ্ছেন তারা বিভিন্ন উপায়ে টাকা পয়সার মালিক হয়ে যাচ্ছেন। সেই টাকা খরচের মাধ্যম হিসেবে সিনেমাকে বেছে নিচ্ছেন। নিজেদের ইমেজ ক্লিন করার জন্য সিনেমার আশ্রয় নিচ্ছেন। এটা যে শুধু বাংলাদেশে হয় তা নয়। হলিউড কিংবা বলিউডেও হচ্ছে।
সারাবাংলা/আরএসও/পিএম
আরও পড়ুন :
. নতুন নায়িকা আনছেন সালমান খান
. ‘আন্দাজ আপনা আপনা’ সিক্যুয়ালে রণবীর সিং
. টেলি সামাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল
. দুই কীর্তিমানের প্রয়াণে এফডিসিতে শোকসভা