চিত্রশিল্পী সোমা’র এগিয়ে যাওয়ার গল্প
৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:১৫
ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
রাজশাহী: পুরো নাম নারগিস পারভিন। ডাকনাম সোমা। রাজশাহীর মেয়ে তিনি। নারীর জীবন-সংগ্রামের ছবি তিনি তুলে ধরেন তার চিত্রকর্মের মাধ্যমে। শুধু স্থানীয় বা দেশের মধ্যেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে মেলে ধরছেন সোমা। অর্জন করেছেন সম্মাননা।
রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের এই শিক্ষককে নিয়ে লিখেছে বিদেশি অনেক পত্রিকা ও ম্যাগাজিন। যার মধ্যে ভারতের যুগশঙ্খ, সাময়িক প্রসঙ্গ, প্রান্তজ্যোতি, দৈনিক ভাস্কর, কালার ক্যানভাস, অ্যাকশন ইন্ডিয়া, মাতৃভূমি, মালায়ামা মনোরমা উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও নেপালের দৈনিক নাগরিক, হিমালয়, দৈনিক নেপাল কলা, কাঠমুন্ডু পোষ্ট, মিউজিক খবর, দ্য রাইজিং পত্রিকাগুলোতেও প্রকাশ পেয়েছে তার সাক্ষাৎকার।
সোমার রং পেন্সিল আর কাগজের সাথে সম্পর্ক শিশু কাল থেকে। তবে ছবি আঁকার মূল যাত্রা শুরু হয় মহানগরীর নওদাপাড়া গালর্স স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়, শিল্প একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার মধ্য দিয়ে। তবে তার বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে হবে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। ভর্তিও করা হয়েছিল। কিন্তু মনিটর আর কি-বোর্ডের সাথে সম্পর্কটা ঠিক জুতসই হয়নি সোমার। শেষ পর্যন্ত মেয়ের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন তার বাবা।
আর তখন থেকেই সোমা নিজেকে তৈরী করতে থাকেন রং-তুলির কারিগর হিসেবে। মহাবিদ্যালয় থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে ভর্তি হবার সঙ্গে সঙ্গে মনের মধ্যে উঁকি দেয় নারীর জীবন সংগ্রাম নিয়ে ছবির আঁকার বিষয়টি। আর এই আগ্রহ সোমা পান তার মায়ের জীবন সংগ্রাম দেখেই। শুরু হয় রং-তুলির আঁচড়ে নারীর জীবন সংগ্রাম ফুটিয়ে তোলা। অংশ নিতে থাকেন বিভিন্ন প্রদশর্নীতে। ছবির ঝুলি নিয়ে দেশ মাড়িয়ে পা রাখতে শুরু করেন বিদেশেও।
এরইমধ্যে সোমা ১৪টি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন। যার মধ্যে ১২টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। বাকি দুটি পেয়েছেন দেশে। সর্বশেষ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে, নেপালে।
দেশে এখন পর্যন্ত জাতীয় চিত্র প্রদর্শনী, ওরিয়েন্টাল, নবিন, রাশেদ, বঙ্গবন্ধু চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন সোমা।
ষড়ং আর্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সোমা। এই প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে আগামী জুনে জাপানে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চিত্র প্রদর্শনী। এর মধ্যে দেশেও একটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সোমা বলেন, ‘আসলে দেশের অধিকাংশ নারীরা তাদের নিজের জীবন সম্পর্কে ঠিকমত পরিচিত না। নিজের ভেতরের লুকিয়ে থাকা প্রতিভাগুলোর সাথে কখনই মুখোমুখি হন না। কারণ পরিবারের সব ইচ্ছেগুলোকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সুপ্ত হয়ে থাকা প্রতিভাগুলোর বহিঃপ্রকাশও ঘটেনা।’
নারী চিত্রশিল্পীদের নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পুরস্কার প্রাপ্ত এই চিত্রশিল্পি বলেন, ‘ছবি আঁকার পরিবেশের ক্ষেত্রটা এখনও পিছিয়ে আছে। মেয়ে শিল্পীদের ছবি আঁকার সময় নানান বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। যেটা পুরুষের ক্ষেত্রে নাই। মেয়েদের সব বিষয় নিয়ে ছবি আঁকা যাবে না। এই ধরনের সমস্যা রয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।’
সেমা মনে করেন, এখন সময় বদলেছে। নারীরা ক্রমেই সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন রাজশাহীতে থেকেও তিনি এখন চিত্রশিল্পী হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। প্রত্যাশা করেন তার অনুজরা আগামীতে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৃথিবীজুড়ে চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে।
সারাবাংলা/এসএম/পিএ