বাপ্পির পর আওয়াজ তুললেন অমৃতাও
২০ জানুয়ারি ২০১৯ ১৩:৫৮
এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
আব্দুল আজিজকে ‘দুঃখিত’ বলে গতকাল থেকেই ব্যাপক আলোচিত হচ্ছেন বাপ্পি চৌধুরী। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে যৌথ প্রযোজনা বিরোধী আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষের বাংলা চলচ্চিত্র পাড়াও এখন সরগরম। এরই মাঝে মুখ খুললেন আরও একজন নায়িকা। জাজের কর্ণধার আব্দুল আজিজের সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বার্তা দিয়েছেন ‘গেইম’ খ্যাত নায়িকা অমৃতা খান।
অমৃতা খান লিখেছেন, ‘একজন চলচ্চিত্রের শিল্পী হিসেবে মনে করি আব্দুল আজিজ ঠিকই ছিলেন।’
যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে আন্দোলনের সময় বাপ্পির মতো অমৃতা খানও জাজ মাল্টিমিডিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। চলচ্চিত্র পরিবারের ব্যানারে বিক্ষোভ প্রকাশ করা শিল্পী ও কলাকুশলীদের মতো ‘যৌথ প্রতারণা’ বন্ধ করার দাবীও করেছিলেন তিনি। সেসময় একরকম সফলও হয়েছিলেন তারা। কারণ এই আন্দোলনের হাত ধরেই প্রণয়ন করা হয়েছিল যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালা।
নতুন নীতিমালা প্রণয়ণের পর যৌথ নির্মাণ কমলে- আকস্মিক ভাবে কমে যায় দেশীয় প্রযোজনাও। ফলে এফডিসি কেন্দ্রীক অনেক শিল্পী-কলাকুশলীরা কাজ হারাতে শুরু করেন দ্রুত। এমনকি চলতি বছরটিও শুরু হয়েছে আমদানি করা সিনেমায়। আর একারণেই বাপ্পি-অমৃতার মতো শিল্পীরা সরে আসছেন তাদের আগের অবস্থান থেকে। বলছেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের ভবিষ্যতের জন্য হিতে বীপরীত হয়েছে ওই আন্দোলন।’
বাপ্পি ও অমৃতার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান সারাবাংলাকে বলেছেন, ‘শিল্পীদের বক্তব্য তাদের নিজস্ব, এর দায়ও তাদের। এখানে আমি কিছু বলতে পারব না। শিল্পীরা স্বাধীন। তারা কি বলবে সেটা আমরা নির্ধারণ করে দিতে পারব না। তবে সমিতির সভাপতির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে এ ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত জানাব।’
আরও পড়ুন : ‘পাড়াতে মাঝরাতে’ পূজা-অদ্রিতের নাচ
‘দেশীয় প্রযোজনা কেন বাড়েনি?’ এমন প্রশ্নের জবাবে জায়েদ বলেন, ‘বিভিন্ন কারণেই সিনেমা নির্মাণ বাড়েনি। নির্বাচন গেল, হলের মেশিনে সমস্যা, সার্ভারে সমস্যা আর আগে যিনি মন্ত্রী ছিলেন তিনি বাংলাদেশি সিনেমার প্রতি একটা অনীহা দেখাতেন, হলগুলো পরিবেশ ভালো না। এখন নতুন মন্ত্রী এসেছেন, ফারুক ভাই এমপি হয়েছেন আশা করি নতুন বছরে বাংলা সিনেমার নির্মাণ বাড়বে।’
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার অবশ্য বাপ্পি-অমৃতার মন্তব্যকে গুরুত্বই দিতে রাজি নন। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেছেন, ‘এই মন্তব্য যদি ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল রানা, ফারুক কিংবা শাকিবও করতেন তাহলে একটা কিছু বলা যেত, বাপ্পিকে নিয়ে কি বলব!’
গুলজার আরও বলেন, ‘ওর ছবি চলে না, কিন্তু দশ লাখ টাকা চায়। ছবি নির্মাণ বাড়বে কি করে? ও কি দশ লাখ টাকার নায়ক? ঠিক মতো শুটিংয়ে আসে না। প্রযোজক-পরিচালকদের ভোগায়! ওর নামে আমরা তিন চারটা বিচার সালিশ করেছি। এসব করলে ছবির সংখ্যা বাড়বে কি করে? ও টাকা নিয়ে ঘোরায়, আমরা বিচার করে টাকা আদায় করে দিয়েছি। এদের মন্তব্যে আমাদের কিছু যায় আসে না।’
জায়েদ-গুলজার নয়, পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দিচ্ছে বাপ্পি-অমৃতার পক্ষেই। কারণ গত দশ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালেই সবচেয়ে কম দেশীয় সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এমনকি নতুন বছরেও যে একটি মাত্র দেশীয় নির্মাণ প্রেক্ষাগৃহে এসেছে সেটিও চার বছর আগের নির্মাণ। একটি সিনেমা আছে আমদানিরও। আসছে সপ্তাহের মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘প্রেম আমার ২’ ছবিটিও যৌথ প্রযোজনার। ফলে দেশীয় নির্মাণ দেখতে হলে দর্শককে এখন অপেক্ষা করতে হবে ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ পর্যন্ত। কারণ সেদিন মুক্তি পাবে তৌকীর আহমেদের ‘ফাগুন হাওয়ায়’।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের রোজার ঈদের সময় ‘নবাব’ ও ‘বস ২’ ছবি দুটির প্রদর্শন বন্ধের জন্য আন্দোলন শুরু হয়। যৌথ প্রযোজনার নামে ছবিতে ‘প্রতারণা’ বন্ধের দাবিতে চলচ্চিত্র পরিবারের ব্যানারে সেসময় বিক্ষোভ প্রকাশ করেন শিল্পী ও কলাকুশলীরা। পরে সেই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে চলচ্চিত্রের মোট ১৮টি সংগঠন।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপস্থিত শিল্পীদের মধ্যে তখন ছিলেন নায়ক ফারুক, রিয়াজ, বাপ্পি, সাইমন, ইমন, জায়েদ খান, খল অভিনেতা মিশা সওদাগর, নায়িকা অঞ্জনা, পপি, পরীমনি, অমৃতা খান, মৌমিতা মৌ, নিঝুম রুবিনাসহ আরও অনেকে। পরিচালকদের মধ্যে অংশ নেন মুশফিকুর রহমান গুলজার, মালেক আফসারি, বদিউল আলম খোকনসহ অনেকে।
সারাবাংলা/টিএস/পিএ
আরও পড়ুন : মুক্তির অপেক্ষায় জাহিদের ‘সিতারা’
অমৃতা খান আব্দুল আজিজ জাজ মাল্টিমিডিয়া জায়েদ খান বাপ্পি চৌধুরী মুশফিকুর রহমান গুলজার যৌথ প্রযোজনা