‘বাংলাদেশ কাকে হারালো সেটি বুঝতে সময় লাগবে’
২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ১৫:১০
এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
‘আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল কালোত্তীর্ণ মানুষ। তার সৃষ্টিগুলো সবার থেকে আলাদা এবং সুন্দর। এ দেশ জন্মের পর যে কয়জন মানুষ রাষ্ট্রের ভিতকে মজবুত করেছেন তাদের মধ্যে বুলবুল একজন।’ কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ। এ সময় তারপাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র রাহাত আহামেদও বলে ওঠেন, ‘ঠিক’!
অর্থ কিংবা প্রতিপত্তি নয়, শুধু মাত্র সুরকে মাধ্যম করে একটি মানুষ জনতার কতটা কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন তার সবচেয়ে সুন্দর উদাহরণ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) ভোররাতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মহান এই সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালকের মৃত্যুতে শোকে ঢাকা পরে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। সমসাময়িক সুরকার খুরশীদ আলমও বলছিলেন সেটি।
খুরশীদ বলেন, ‘বাংলাদেশ কাকে হারালো সেটি বুঝতে হলে আরও সময় লাগবে। বুলবুল দেশের জন্য এমন এক সম্পদ যে তার পাশে বসে আপনি তাকে অনুভব করতে পারবেন না। তার না থাকাটাই বলে দেবে তিনি কতোটা জায়গাজুড়ে ছিলেন। কেমন ছিল তার ছায়া। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে বুলবুল নেই।’
বুধবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল এগারোটায় আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জীবিত মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, ছাত্রসহ এদেশের সকল শ্রেণীপেশার মানুষ। এ সময় তার কফিনের পাশে শুরু থেকেই ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ। সারাবাংলার কাছে মঙ্গলবারও শোকপ্রকাশ করেছিলেন এই কণ্ঠশিল্পী। বুধবার বলেছেন, ‘আর একটু পরে বুলবুল ভাইকে কবরে রেখে আসতে হবে ভেবে কষ্ট হচ্ছে।’
এ সময় বুলবুলের একমাত্র সন্তান সামির আহমেদও পাশে ছিলেন। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বুধবার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কফিনে প্রথমে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে, এরপর শ্রদ্ধা জানায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ফুল দিতে আসেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক এম সানাউল হক ও আব্দুল হান্নান। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, মাহবুবুল আলম হানিফ, অসীম কুমার উকিল, শিরীন আখতার শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বুলবুলকে।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, ‘বুলবুল বেশ তাড়াহুড়া করেই বিদায় নিলেন। আমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর ভেবেছিলাম গুণী এই মানুষটিকে বড় করে সংবর্ধনা দেব, সম্মান জানাব। তিনি আমাকে সেই সুযোগটি দিলেন না। আজকে তার মরদেহে ফুল দিতে হল। এটা আমার জন্য অনেক দুঃখের এবং কষ্টের। আমরা কখনোই তার অবদান ভুলব না।’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় এফডিসিতে। সেখানে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট মানুষেরা শেষ শ্রদ্ধা জানান তার প্রতি। বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে হয় বুলবুলের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়ক আলমগীর, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারসহ অনেকে।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং সংগীত পরিচালক। ১৯৭০ দশকের শেষ লগ্ন থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পসহ সংগীত শিল্পে সক্রিয় ছিলেন তিনি। এ কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অন্যান্য অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন বুলবুল।
১৯৭৮ সালে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ ছবিতে সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন বুলবুল। সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আব্দুল হাদি, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, আগুন, কনক চাঁপাসহ বাংলাদেশি প্রায় সকল জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি।
শহীদ মিনারে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধপরাধীর বিচারের সময়েও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হয়েছিলেন বুলবুল। ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন গুণী এই শিল্পী।
সারাবাংলা/টিএস/পিএ
অসীম কুমার উকিল আওয়ামী লীগ আব্দুল হামিদ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল কে এম খালিদ ম. হামিদ মাহবুবুল আলম হানিফ শিরীন আখতার