Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আসছে নতুন প্রযোজক, তবু শঙ্কার মেঘ কাটছে না


১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৬:৩৩

পূর্বাপর
গত কয়েক বছরে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে মন্দাভাব জেঁকে বসেছে। এই মন্দাভাবের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে দাঁড় করানো হয় ‘প্রযোজক সংকট’কে। প্রযোজক বা অর্থলগ্নিকারকের অভাবে দিন দিন ঢালিউডে সিনেমা নির্মাণ কমে আসছে। ওদিকে প্রযোজকরা লগ্নিকৃত টাকা ফেরত আসবে কিনা-তা নিয়ে থাকেন অনিশ্চয়তায়। সেই ভয় এবং মূনাফা না হওয়ায় সিনেমা নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে তারা যোজন যোজন দূরে সরে যান।

তবে আশার কথা হলো, সাম্প্রতিক সময়ে ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ কয়েকজন নতুন প্রযোজক তথা প্রযোজনা সংস্থার আবির্ভাব ঘটেছে। তাদের ভেতর দেশি প্রযোজকের পাশাপাশি আছেন প্রবাসী প্রযোজক।

এসেছে নতুন প্রযোজক
নতুন প্রযোজকের তালিকায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এনামুল হক আরমান এক সঙ্গে দশটি সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় আসেন। তার প্রযোজনা সংস্থা দেশবাংলা মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারের সবকটি ছবিতে শাকিব খানের অভিনয় করার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে গেলো ঈদে ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ ছবিটি মুক্তি পায়। শাকিব খান ও বুবলী অভিনীত ছবিটি সেভাবে ব্যবসায়িক সফলতা পায়নি। তবে থেমে না থেকে ‘আগুন’ নামে একটি সিনেমা প্রযোজনা করছেন তিনি। যার শুটিং চলছে। শাকিব খানের সঙ্গে এই ছবিতে জুটি বেঁধেছেন নবাগত জাহারা মিতু।

সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘মায়াবতী’ সিনেমার প্রযোজক আনোয়ার আজাদ একজন কানাডা প্রবাসী। আর আগে ‘মুখ ও মুখোশ’ সিনেমা প্রযোজনা করলেও ‘মায়াবতী’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি নজরে এসেছেন। ছবির প্রচারণায় তার সরব উপস্থিতির কারণে তাকে প্রযোজক হিসেবে আলাদা করে চেনা গেছে। এই প্রযোজকের ‘গন্তব্য’ নামে আরও একটি ছবি মুক্তির তালিকায় আছে। এই প্রযোজক আগামীতে আরও বেশ কয়েকটি সিনেমা প্রযোজনা করবেন বলে জানা গেছে।

চলতি বছর এপ্রিলে কানাডা প্রবাসী কয়েকজন ব্যক্তির যৌথ চেষ্টায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সিনেবাজ ফিল্মস’ নামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাম ইসলাম ও চেয়ারপার্সন জোৎস্না ইসলাম। সিনেবাজ ফিল্মসের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নির্মাতা ইফতেখার চৌধুরী। অভিনেতা স্বাধীন খসরু থাকছেন ডিরেক্টর অব কমিউনিকেশনের দায়িত্বে। ‘পিকনিক’ ও ‘বিফোর ডন’ নামের দুটি সিনেমা নির্মাণেরও ঘোষণা দেয়া হয়। তবে চলতি বছর সিনেমা দুটির কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এদিকে ইন্ডাস্ট্রির খবর, দুবাই প্রবাসি সুলেমান আলী নামের এক সুগন্ধি ব্যবসায়ী দুটি ছবি প্রযোজনা করবেন। কয়েকদিন আগে শাকিব খান, পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী, চিত্রনাট্যকার আব্দল্লাহ জহির বাবু দুবাই ঘুরে এসেছেন। সেখান সম্ভাব্য ছবির লোকেশান ও প্রাথমিক আলোচনা শেষে দেশে ফিরে আসেন।

দুবাইতে শাকিব খান, ইফতেখার চৌধুরী, আব্দুল্লাহ জহির বাবুসহ আরও অনেকে। ছবি: ফেসবুক

দুবাইতে শাকিব খান, ইফতেখার চৌধুরী, আব্দুল্লাহ জহির বাবুসহ আরও অনেকে। ছবি: ফেসবুক

যদিও ওই দলের সদস্য আব্দুল্লাহ জহির বাবু দুবাই প্রোজেক্টের ক্ষেত্রে রহস্য জিঁইয়ে রাখতে চাইলেন। তিনি বলেন, এখনই সিনেমাটি নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কৌশলগত কারণে ট্যুরের বিস্তারিত নিয়ে কিছু বলা বারণ আছে। চলতি মাসের ২২ তারিখে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি জানানো হবে। তখন প্রযোজকের নাম জানানো হবে। আসলে এটি একজন ব্যক্তি প্রযোজনা করছেন না। কয়েকজন মিলে প্রযোজনা করছেন।

এছাড়া শাকিব খানও নিয়মিত ছবি প্রযোজনা করার ঘোষণা দিয়েছেন। বছরে চারটি ছবি প্রযোজনা করবেন তিনি। জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাও যৌথভাবে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করছেন।

অন্যদিকে ‘মনপুরা’ প্রযোজনার এক দশক পর স্কয়ার গ্রুপ ‘সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স’ নামে নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করে সিয়াম ও পরীমনিকে নিয়ে ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমা প্রযোজনা করছে। ছবির শুটিং এরইমধ্যে শেষ হয়েছে।

প্রযোজক ধরে রাখতে যা করবে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি
নতুন প্রযোজক আসা ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইতিবাচক বটে। তবে এর আগে দেখা গেছে, একটি মাত্র ছবি প্রযোজনা করে লাভের মুখ না দেখে অনেক প্রযোজক সিনেমা প্রযোজনা করেননি। তাই নতুন প্রযোজক ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ বলা চলে।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উদ্যোগুলো সম্পর্কে চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, সিনেমা নির্মাণের অযাচিত বাজেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। শুটিং সেটে একজন প্রযোজককে অনেক বাড়তি খরচ করতে হয়। ছবির নায়ক–নায়িকা বড় অংকের টাকা নেন সিনেমায় অভিনয় করতে। তারপরও শুটিং শেষে তাকে তিন থেকে চার হাজার টাকা বিবিধ খরচ বাবদ দিতে হয়। শুধু তাই নয়, ইউনিটের নির্ধারিত মেকআপম্যান, সহকারী থাকার পর ওই নায়ক–নায়িকা নিজের মেকআপম্যান, সহকারী নিয়ে আসেন। তাদেরও খরচ দিতে হয়। এমনকি তাদের আলাদা খাবারের খরচও দিতে হয়।

নতুন কয়েকটি প্রযোজনা সংস্থার লোগো। ছবি: সংগৃহীত

নতুন কয়েকটি প্রযোজনা সংস্থার লোগো। ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, অনেক অভিনয়শিল্পী আছেন যারা সকাল ১০টায় কল টাইম থাকলে বিকাল ৫টায় সেটে যান। অনেকে কোনো রকম নোটিশ ছাড়া সেটে আসেন না। এতে করে প্রযোজকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়। এই খরচগুলো যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে প্রায় চল্লিশ শতাংশ নির্মাণ ব্যয় কমে যাবে।

এসময় তিনি সিনেমা হলের বুকিং এজেন্ট ও রিপ্রেজেন্টেটিভদের অনৈতিক কাজ বন্ধে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন। তিনি জানান, প্রদর্শণের ক্ষেত্রে বুকিং এজন্ট ও যারা সেল রিপোর্ট দেয় তারা অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকেন। যার ফলে প্রযোজক লাভের মুখ দেখতে পারেন না। তাদের এসব কাজ বন্ধে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হবে।

খসরু যোগ করেন, চলমান অনিয়মগুলো যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে প্রযোজক লাভের মুখ দেখবে বলে বিশ্বাস করি। আর লাভের মুখ না দেখলেও লগ্নিকৃত টাকা ফেরত আসলে প্রযোজকরা আরেকটি ছবি প্রযোজনা করবেন।

এছাড়া প্রযোজকদের মেধাহীন দক্ষিণী ছবির ফ্রেম টু ফ্রেম ছবি নকল করতে নতুন প্রযোজকদের অনুৎসাহিত করবেন বলে জানান খসরু।

শেষের কথা
প্রযোজক সমিতি যদি প্রযোজকদের বাঁচাতে উদ্যোগগুলো কার্যকর করতে না পারেন, তাহলে নতুন প্রযোজকরা দ্বিতীয় ছবি নির্মাণে সাহস করবেন না— এমনটি মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। কারণ, এর আগে চলচ্চিত্রের ভগ্নদশা রোধে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও সেসব উদ্যোগ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। তাছাড়া, ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরীণ বিভাজন তো রয়েছেই। এসব কাটিয়ে উঠে ইন্ডাস্ট্রি শঙ্কাহীনভাবে এগিয়ে যেতে পারবে কিনা— সেটা সময় বলে দেবে।

চলচ্চিত্র টপ নিউজ প্রযোজক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর