Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মিশন এক্সট্রিম’ শুরুর সময় তিনটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ ছিলাম: দীপন


২৩ জানুয়ারি ২০২০ ১০:১৫

দীপংকর দীপন— টেলিভিশন নাটক নির্মাণ করেছেন এক দশকের বেশি সময় ধরে। ২০১৭ সালে নির্মাণ করেন বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ অ্যাকশন থ্রিলার ‘ঢাকা অ্যাটাক’। ছবিটি চারটি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেয়। বর্তমানে নির্মাণ করছেন সুন্দরবনে র‍্যাবের অভিযান নিয়ে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ এবং ভবিষ্যতের ঢাকা নিয়ে ‘ঢাকা ২০৪০’। তার হাতে থাকা ছবিগুলো ও পারিপার্শ্বিক অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেছেন সারাবাংলার সাথে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন সিনিয়র নিউজরুম এডিটর আহমেদ জামান শিমুল

বিজ্ঞাপন

‘অপারেশন সুন্দরবন’র শুটিংয়ের কী অবস্থা?

প্রথম লটের কাজ শেষ। ৪০ শতাংশ শুটিং হয়েছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় লট। এবার শুটিং হবে দ্বীপ সুন্দরবনে—দুবলারচর, কটকা, হীরন পয়েন্ট এসব জায়গায়।

সুন্দরবনে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো, কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?

সুন্দরবনে শুটিংয়ের পুরো ব্যাপারটাই ছিলো ‘ফুল অব এক্সপেরিয়েন্স’। বলতে পারেন, সুন্দরবনকে নতুন করে চিনেছি। ওখানে কখনই পানি একটা নির্দিষ্ট লেভেলে থাকে না। পানি সারাক্ষণই হয় উঠে, না হয় নামে। ফলে আমরা যে জায়গাটাকে যেভাবে রেখে যাচ্ছি, ফিরে এসে দেখতাম ওই জায়গাটা ওইরকম নাই। সুন্দরবনের যেসব জায়গায় কখনই পানি উঠে না সেরকমই একটা জায়গায় আমরা বড় সেট বানিয়েছিলাম। শুটিং করতে গিয়ে দেখি ওখানে কাদা। ওখানকার লোকজনও খুব অবাক, এখানে তো কখনো পানি উঠে না। ভরা কাটালেও উঠে না। আমাদের স্থানীয় গাইড কিংবা বন বিভাগের লোক তারাও অবাক। পরে আমরা বের করলাম ওইদিন সূর্যগ্রহণ ছিলো। যার ফলে পানির উচ্চতা ৩ থেকে ৪ ফিট করে বেড়ে গিয়েছিলো।

আরেকটা ভয়ানক অভিজ্ঞতা, প্রচন্ড বৃষ্টি, কুয়াশা, শীত।  এর মধ্যেই একটা ছোট স্প্রিড বোটে করে শুটিং থেকে ফিরছিলাম কাটেশ্বর নামে একটা টুরিস্ট ক্যাম্প থেকে। যেখানে ছিলাম সেখান থেকে ক্যাম্পে ফিরতে লাগে আড়াই ঘণ্টা। যাই হোক বাইরে থেকে চালাচ্ছিলো চালক, আমরা ভিতরে বসা। একটু পরে দেখি মোবাইলের নেটওয়ার্ক চলে গেছে। সাধারণত ওখানে তা হয় না। একটু পরে অনুধাবন করলাম, ক্যাম্পের দিকে না গিয়ে চলে গিয়েছি সমুদ্রের দিকে। একে তো রাত্রিবেলা, ঠিক কোন জায়গায় আছি, কীভাবে ফিরবো বুঝতে পারছিলাম না। স্পিড বোটে তেল বেশি ছিলো না। জিপিএস ট্র্যাক করে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। তাও পথ ভুল করে এমন একটা খালে ঢুকলাম, যেটা অনেকটা পুকুরের মত একটা জায়গায় গিয়ে শেষ। ওই মুহুর্তে বোট খুব দুলছিলো। সবকিছু মিলিয়ে একটা অ্যাডভেঞ্চারের মধ্য দিয়ে ওখান থেকে বের হয়ে শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলাম।

বিজ্ঞাপন

আমাদের সাথে ৭-৮টা বোট থাকতো সবসময়। এর মধ্যে একটা বোট ডুবো চরে চার ঘণ্টা আটকা ছিলো। কিছু আধুনিক বোট আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো। মজার ব্যাপার হচ্ছে ওই বোটগুলো নানাভাবে সমস্যায় পড়লো। যেটা হয়নি স্থানীয় মাঝিদের থেকে নেওয়া বোটগুলোর ক্ষেত্রে। যেটা বুঝলাম তারা জানে কোথায় ডুবো চর, কুয়াশা কই, শীতে কীভাবে চালাতে হবে, পথ কোন দিকে।  সে রাতের স্মৃতি ভুলার না।

ঘটনার সময় আপনাদের সাথে অভিনয়শিল্পীরা সাথে ছিলো?

না, তাদেরকে অন্য বোটে করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। আমাদের সাথে ছিলো ডিওপি ও অ্যাকশন টিম।

আপনারা কি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন?

না। সুন্দরবনে একটা কথা প্রচলিত, বাঘের দেখা পেলে কি আপনি আমার দেখা পেতেন? একটা বিষয় তারা কিন্তু বাঘকে আপনি করে সম্বোধন করে।

অন্য আরেকটা স্মৃতি। জায়গাটার নাম এ মুহুর্তে মনে পড়ছে না। আমাদের একটা দৃশ্য আছে—পুকুরে বাঘ ও হরিণ পানি খেতে আসে। সেখানে বাঘকে নিয়ে কিছু ঘটনা ঘটে। আমরা ওরকইম একটা পুকুরে শুট করার জন্য যাই। যাওয়ার সাথে একধরনের ভোটকা গন্ধ পাই। এটার সাথে আমি খুব পরিচিত। একটা বাঘের গায়ের গন্ধ। কিছুক্ষণ পর বাঘের পায়ের একটা টাটকা ছাপও পাই। সাথে থাকা ছয়জন নিরাপত্তারক্ষীকে তৎক্ষণাৎ ছয়দিকে পাঠিয়ে দিই। স্থানীয়রাও নিশ্চিত করেন মাত্র দশমিনিট আগেই বাঘ এখানে ছিলো। ওই সময় আমাদের সাথে ফারিয়া ও সিয়াম ছিলো।

সিয়াম, নুসরাত ফারিয়া কিংবা রোশানের সাথে প্রথমবারের মত কাজ করলেন। এখন পর্যন্ত যতটুকু শুটিং হয়েছে তাতে তাদের পারফরর্মেন্সে কতটুকু সন্তুষ্ট?

আমার যতটুকু প্রত্যাশা ছিলো তার চেয়েও অনেক বেশি ভালো করেছে তারা। বিশেষ করে রিয়াজ ভাইয়ের পারফর্মেন্স; তার ব্যক্তিত্ব, টিমের প্রতি তার ভালোবাসা, সবাইকে মাতিয়ে রাখা, সবার সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ সবমিলিয়ে আমরা তার ভক্ত হয়ে গেছি। তার জনপ্রিয় গান ‘পড়ে না চোখের পলক’ গেয়ে আমরা প্রথম লট প্যাকআপ করেছিলাম তার সম্মানে। অন্যদিকে সিয়াম, রোশান দুজনের সাথেই আমার আগে থেকেই পরিচয় ছিলো। তারাও অসাধারণ রকমের ভালো করেছে। ফারিয়া এ চরিত্রের জন্য খুব বেশি মানানসই ছিলো।

আর আমি দুইটা ছেলে-মেয়ের কথা বলবো, তারা যে কী লেভেলের ভালো করছে তা দর্শক পর্দায় দেখতে পাবেন—মনোজ ও সামিনা বাশার। মনোজ সবার মন কেড়ে নিবে। সামিনা যদি ঠিকঠাক সুযোগ পায় তাহলে বাংলাদেশে একটা ভালো অবস্থানে যাওয়ার মতো সম্ভাবনা আছে। ও এ বয়সেই এত সুন্দর পরিণত অভিনয় করে, মনেই হয় নাই নতুন কারো সাথে কাজ করছি। দেখে মনে হয়েছে সে পাকা।

এখন পর্যন্ত যতটুকু শুটিং হয়েছে তাতে করে কি ছবিটি কোরবানের ঈদে মুক্তি দেওয়া সম্ভব?

আমরা কোরবানের ঈদে মুক্তি দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত, যদি না বড়রকমের কোন বিপত্তি তৈরি না হয়। আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় রেখেই সব প্ল্যান করা আছে।

‘ঢাকা ২০৪০’ দেরীর কারণ?

ওটা আবার এপ্রিলে শুরু হবে। প্রথম লটটা শেষ হবার পর প্রযোজকই পরের লটটা একটু পরে করার কথা বলেছিলেন।

এ ছবির মুক্তির তারিখ কি ঠিক করেছেন? নাকি শুটিং শেষ করে চিন্তা করবেন?

‘ঢাকা ২০৪০’ নিয়ে পরিকল্পনা ছিলো গত বছরের ডিসেম্বরে মুক্তি দেওয়ার। সে হিসেবে আমরা শুটিং শুরু করেছিলাম জুনে। দ্বিতীয় লট ছিলো আগস্টে। যাই হোক যেহেতু পিছিয়ে গেলাম, তাই এখন কখন শেষ করতে পারবো সেটা বুঝে মুক্তির তারিখটা ঠিক করবো।

‘ডু অর ডাই’র ঘোষণা এলো; শাকিব, পরীমণি ও প্রসেনজিতকে নিয়ে গুঞ্জন এসেছে, এদের সাথে ফেসবুকে ছবি দিয়েছেন আপনি। এসকল ছবি আদৌ হবে কি?

‘ডু অর ডাই’র ক্ষেত্রে ‘অপারেশন কিলো ফাইট’র নয়জন পাইলটকে আমি একত্রে এনেছিলাম এবং ছবিটার ঘোষণা দিয়েছিলাম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। ওই ছবিটা আমরা পরে আর করতে পারিনি বাজেটের কারণে। যদিও সবধরনের প্রি-প্রডাকশন করা আছে। ওটার জন্য আসলে একটু বেশি রকমের খরচ লাগবে, যেটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান ক্ষমতার বাইরের খরচ। ছবিটার শেষের ২৫ মিনিট আকাশে। পুরো অ্যাকশন ভিফিএক্স আকাশে। ওধরনের ভিএফএক্স আমাদের দেশে শুট করতে গেলে বেশ কষ্টসাধ্য। এছাড়া শাকিব, প্রসেনজিত ও পরীমণির সাথে যে ছবিগুলোর কথা বলছেন আপনি কোনটার বিষয়েই আমি কোন কথাবার্তা বলিনি। আমাদের এখানে যত প্ল্যান হয়, তত ছবি হলে বছরে পাঁচশ ছবি হতো।

আর আমি অনেকগুলো ছবিতে চুক্তিবদ্ধ। একটা শেষ না করে আরেকটা করবো না।

‘ঢাকা অ্যাটাক’র পর পুলিশ নিয়ে পরের ছবি ‘মিশন এক্সট্রিম’ প্রথমেই আপনি বানানোর কথা ছিলো। কিন্তু অন্য পরিচালক দিয়ে ইতোমধ্যে ছবিটির দুটি পর্বের শুটিং শেষ হয়েছে। এ ছবিগুলো নিয়ে শুভকামনা বা কোন প্রকার অবজারভেশন জানাবেন?

ওদের জন্য আগেও শুভকামনা ছিলো এখনো আছে। যারা কাজ করছে এরা বিভিন্নভাবে আমরাই লোকজন। যারা প্রথমবার কাজ করছে এরা সবাই আমার হাত ধরেই সিনেমায় এসেছে। আর ভারতীয় টিমটিও বাংলাদেশে আমিই এনেছি। এই টিমটার সাথেই ‘অপারেশন সুন্দরবন’ করছি। এদের কারো সাথেই আমার কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই।

তবে আমি যেটা বলতে চাইবো, গায়ে পরিচালকের তকমা লাগালাম; বিষয়টা সিনেমা হয়ে উঠলো কিনা, সেটা দেখলাম না। দরকার হচ্ছে ‘ভালো সিনেমা’। এখানে যারা আছেন তারা হয়তো সে চেষ্টায় করছেন। ভালো ছবি হবে বলে আমার বিশ্বাস। ‘মিশন এক্সট্রিম’ আমার ঘরের ছবি। দুই পর্বেই যেনো টান টান উত্তেজনা থাকে, সে প্রত্যাশা থাকবে।

প্রযোজকের সাথে কিছুটা দ্বন্দ্বের কারণেই নাকি এ ছবিতে অন্য পরিচালককে নেওয়া হয়েছে?

এ ধরনের কোন অভ্যন্তরীণ কোন দ্বন্দ্ব বা বিদ্বেষ আছে কিনা, আমার জানা নেই। ‘মিশন এক্সট্রিম’ শুরুর সময় আমি তিনটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ ছিলাম। সব মিলিয়ে আমি কাজটির খোঁজ নিতে পারি নাই বা করা হয়নি।

হইচইয়ের জন্য আপনি ওয়েব সিরিজ বানিয়েছিলেন। সামনে কোন সিরিজ বা টিভি ফিকশন বানাবেন কিনা?

ওদের সাথে আমি ‘পাঁচফোড়ন’ বানিয়েছিলাম। এখন আমি কেনো, ওই সময়ের পাঁচজনের কেউই বানাচ্ছে না। তবে সামনে একটা সিরিজের কথা চলছে তাদের সাথে। সব ঠিক হলে হয়তো জানাবো।

ওয়েব কি সিনেমার স্থান নিবে?

আমি ওয়েবকে কোনভাবেই সিনেমার চেয়ে কম মনে করি না। কেনো চিন্তা করবো নাটকের চেয়ে একটু বেশি বাজেট দিলেই হয়ে যাবে। তাহলে কিন্তু বিপদ। একটা সময় ভালো ছবি দিতে পারিনি দেখে সিনেমা হল থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দেখা যাচ্ছে এখন ভালো ছবি এলেও দর্শক হলে যাচ্ছে না। সেটা কিন্তু ওয়েবের ক্ষেত্রেও হবে। আর হাত বাড়িয়ে আছে আম্যাজন, নেটফ্লিক্স—আমাদের দর্শকরা সেখানে চলে যাবে।

অভিনয়ের উপর বেশকিছু ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবে দিয়েছিলেন, কোন চিন্তা থেকে।

আমাদের এখানে অনেকে অভিনয়টা শিখে আসেন না। কিন্তু তারা শিখতে চান। অনেকেই আমার কাছে জানতে চাইতো। আমার পক্ষে তো সবাইকে একসাথে শেখানো সম্ভব না। তাই সে চিন্তা থেকে আমি যতটুকু জানি ততটুকু দিয়েই ভিডিও বানানোর সিদ্ধান্ত নিই। বর্তমানে শুটিং ব্যস্ততার কারণে বন্ধ আছে।

আমাদের ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে সবাই কম বেশি হতাশ। আপনার মত কী?

আমার সাথে কলকাতার পরিচালকদের সাথে কথা হয়। ওদের ছবিগুলো টিকে আছে টেলিভিশন রাইটস থেকে আয় দিয়ে। সিনেমা হল থেকে দর্শক সরে গেছে একদমই। যেটা হচ্ছে আমাদের এখানে দর্শকরা এখনও ছবি দেখতে চাইছে। পৃথিবীর সকল জায়গায় মূল যে শংকা, আমাদের এখানে সেটাই আছে—সিনেমার মূল শক্তি অর্থাৎ দর্শক। এ দর্শকগুলোর জন্য ভালো সিনেমা বানিয়ে তাদের আবার সিনেমা হলে আনতে হবে। এখন যারা সিনেমার জন্য আগ্রহী, তারা যদি আগ্রহটা হারিয়ে ফেলে তাহলে কিন্তু অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।

অপারেশন সুন্দরবন ঢাকা অ্যাটাক দীপংকর দীপন সুন্দরবন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর