স্বাধীনতা ঘোষণার আগেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির জন্ম
২৫ মার্চ ২০২১ ১৯:৪৫
‘মুখ ও মুখোশ’ দিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির যাত্রা শুরু হয়েছিল। শুরু দিকে চলচ্চিত্র প্রযোজকরা ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি’র সদস্যভুক্ত ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা ঘোষণার ঠিক আগ মুহুর্তে খান আতাউর রহমান ও জহির রায়হানদের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি’। কালের আবর্তনে যে সমিতির নাম এখন ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি’।
ঘটনাটি ১৯৭১ সালের কাল রাত্রির ঠিক আগ মুহুর্তে। ২৫ মার্চ, বিকাল ৫টা। এদিন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) একটি কক্ষে মিটিং ডাকা হয়েছে। উদ্দেশ্য পাকিস্তানি জান্তাদের সঙ্গে আর থাকা যাবে না। তারা আমাদের যেমন সর্ব সেক্টরে দমিয়ে রেখেছে, তেমনি চলচ্চিত্রেও রাখতে চাইছে।
চাইবে না কেন? যেখানে উর্দু ছবির দাপট। সিনেমা হল মালিক থেকে শুরু করে পরিবেশক সবাই উর্দু ছবি ছাড়া কিছু চালাতে চান না। অথচ ‘রূপবান’ সে ধারা ভেঙ্গে দিল। একের পর এক বাংলা ছবি সুপারহিট হতে থাকলো। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু ছবি চললেও অপর অংশ পশ্চিম পাকিস্তানে বাংলা ছবি চালাতে দিতে চান না জান্তারা। এ ব্যাপারে পাকিস্তান প্রযোজক সমিতির কাছে ধর্ণা দিয়েও বাংলা ছবির প্রযোজক পরিচালকরা কোন সাড়া পাননি।
ফলশ্রুতিতে এফডিসিতে মিটিং। সে মিটিংয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন খান আতাউর রহমান ও জহির রায়হানরা। আরও ছিলেন মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল জব্বার খান, মোস্তাফিজুর রহমান, আলমগীর কুমকুম, আজিজুর রহমান বুলি, এস এম পারভেজ, আবুল খায়ের, এ. ই. আর. খান, কামালউদ্দীন আহমদ, ফখরুল আলম, আব্দুল হামিদ, মোঃ সিরাজ উদ্দীন, ওবায়দুল ইসলাম মিলন, হায়দার আলী, ইবনে মিজান, নুরুল আজিম, রওনক চৌধুরী, নিরঞ্জন সাহা প্রমুখ।
সেদিনের মিটিংয়ে উপস্থিত চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক আজিজুর রহমান বুলি সারাবাংলার কাছে স্মৃতিচারণ করেন।
‘তারা আমাদেরকে সর্বদিকে আটকিয়ে রেখেছিল। শিল্প সংস্কৃতিতেও আটকাতে চেয়েছিল। তখন আমরা নিজেদের আলাদা ইন্ডাস্ট্রি করার সিদ্ধান্ত নিই। সে জায়গা থেকে খান আতা ও জহির রায়হানের নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি গঠন করি।’
এ সিদ্ধান্তে কি আপনাদের উপর কোন প্রকার চাপ, হুমকি ছিল? ‘না ছিল না। প্রথমত এরপর দিনই তো স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাই চাপ বা হুমকির অপশন ছিল না। আর যদি আসতো তাহলেও আমরা কেউই মাথা নত করতাম না। তাদের মতো শক্তির কাছে মত নত করার প্রশ্নই আসে না’— বলেন আজিজুর রহমান বুলি।
প্রযোজক সমিতির সঙ্গে পরিবেশক সমিতি একীভূত করা হয় আশির দশকের শুরুতে মাসুম পারভেজ সোহেল রানার উদ্যোগে।
করোনার কারণে দিনটি নিয়ে আলাদা করে কর্মসূচি নেয়নি বলে জানিয়েছে সমিতির বর্তমান সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু।
সারাবাংলা/এজেডএস
খান আতাউর রহমান জহির রায়হান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা