চলে গেলেন নির্মাতা ও গবেষক সাজেদুল আউয়াল
১৫ এপ্রিল ২০২১ ২৩:১৭
চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক ও গবেষক সাজেদুল আউয়াল মারা গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নিজ বাসায় মারা গিয়েছেন। খবরটি নিশ্চিত করেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু।
তিনি বলেন, ‘সাজেদুলের করোনা হয়েছিল। সে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে ছিল। সেখান থেকে বাসায় এসেছিল কিছুদিন আগে। করোনা পরবর্তী অসুস্থতায় মারা গিয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ নিজ বাসায় মারা যায়। সে ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠা সদস্যদের একজন। ১৯৭৪ থেকে আমাদের সম্পর্ক। তার লেখা ফনি মনসা নাটকটি আমি নির্দেশনা দিয়েছিলাম। আজ আমার জন্মদিন ছিল। এরই মাঝে এ খবর, জন্মদিনের সবকিছু বাদ দিয়েছি আমি।’
সাজেদুল আউয়ালের ছেলে ইশরাত শামীম অনন্ত বলেন, ‘বাবা গত মাসে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পরে তার করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। এরপর কিছুটা ভালো ছিলেন। আজকে সন্ধ্যার পর হঠাৎ করেই বলছিলেন, খারাপ লাগছে। কিছুক্ষণের মধ্যে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তখন অ্যাম্বুলেন্স কল করি। কিন্তু আধা ঘণ্টার মধ্যে তিনি মারা যান। তাকে হাসপাতালে আর নিতে পারিনি।’
এখনও দাফনের ব্যাপারে পারিবারিকভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অনন্ত।
ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় জন্ম সাজেদুল আউয়ালের। আট বছর বয়সে প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। পদ্মাপুরাণ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে শুনে ও যাত্রা, সার্কাস, পুতুলনাচ দেখে বেড়ে ওঠেন তিনি। ১৩ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য হেঁটে হেঁটে আগরতলায় পৌঁছান।
২০০৯ সালে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ঋতিক ঘটকের চলচ্চিত্র: সমাজবাস্তবতা ও নির্মাণভাবনা’-র জন্য পেয়েছেন পিএইচডি ডিগ্রি।
মঞ্চে ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছিলেন। কাজ করেছেন শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যা নিকেতন, সিনে আর্ট সার্কেল ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ সার্কেলে। বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে যুক্ত ছিলেন।
তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন ২০০৯ থেকে ২০১০ পর্যন্ত। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১২ এর জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। সরকারী অনুদানে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বাছাই কমিটির সদস্য ছিলেন ২০১৩-১৫ পর্যন্ত।
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ জার্নালের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন দুই মেয়াদে ২০০৮-১১ এবং ২০১৪-১৫ পর্যন্ত।
তিনি অসংখ্য নাটক রচনা করেছেন— ফণিমনসা, রাঙামিলার পাঙ্খাবিবি, জম্মুন জমাদার, ছত্রিশ প্রহরের মাঠ। লিখেছেন বেশকিছু বই— চলচ্চিত্রকলার রূপ-রূপান্তর, চলচ্চিত্রচর্যা, নাট্যচর্যা ইত্যাদি।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করেছেন বহুদিন। নির্মাণ করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নির্বানা’। তার পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ছিটকিনি’ মুক্তি পায় ২০১৭ সালে।
সারাবাংলা/এজেডএস