Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শুভ জন্মদিন ‘প্রিয় অভিনেতা’


২৯ মে ২০২১ ১২:৪৭

আশি ও নব্বইয়ের দশকে যে ক’জন অভিনয়শিল্পী মঞ্চ ও টিভি নাটককে জনপ্রিয় করেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যিনি, তিনি হুমায়ুন ফরীদি। শুধু অভিনয় দিয়েই মানুষকে বিমোহিত করেছিলেন ডাকসাইটে এই অভিনেতা। তাকে বলা হয় অভিনেতাদের অভিনেতা, একজন আদর্শ শিল্পী। তার অভিব্যক্তি, অট্টহাসি, ব্যক্তিত্ব- হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল সকলের।

আজ (২৯ মে) এই গুণী শিল্পীর জন্মদিন। জীবদ্দশায় তিন দশকেরও বেশি সময় চলচ্চিত্রেও সমান দাপটের সঙ্গে অভিনয়ের মাধ্যমে রং ছড়িয়ে গেছেন নন্দিত ও বরেণ্য এই অভিনেতা। এর সুবাদে দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্তের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নেন তিনি। নায়ক কিংবা খলনায়ক সব চরিত্রেই সমান পারদর্শিতা দেখানো এই গুণী শিল্পী কাটিয়েছেন অভিনয়ের বর্ণাঢ্য জীবন। তিনি এখনও আছেন সবার হৃদয়ে। ভক্তদের ভালোবাসায় হুমায়ুন ফরীদি একজন অমর অভিনেতা।

বিজ্ঞাপন

১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। তার বাবার নাম এটিএম নুরুল ইসলাম, মায়ের নাম বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়। জন্ম ঢাকায় হলেও শৈশব-কৈশোরে স্থায়ীভাবে তার থাকা হয়নি ঢাকায়। বাবার চাকরির সুবাদে ঘুরতে হয়েছে মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুরসহ আরও অনেক জেলায়। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্কুলে। চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করেন ১৯৭০ সালে। এরপর একই বছর স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জৈব রসায়ন বিভাগে। কিন্তু পরের বছরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় খাতা-কলম রেখে কাঁধে তুলে নেন রাইফেল। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে দামাল ছেলের মতো লড়াই করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জে মহল্লার একটি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয়ের যাত্রা শুরু হুমায়ুন ফরিদীর। স্কুল জীবনে থাকতেই নির্দেশনার খাতায় নাম লেখান। সে নাটকের নাম ছিল ‘ভূত’। এরপর ঢাকার মঞ্চে ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘ফণীমনসা’, ‘শকুন্তলা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’ নাটকগুলোতে তার অভিনয় কেবল প্রসংসিতই হয়নি, হুমায়ুন ফরিদীকে করে তুলেছে অনন্য।

টিভি নাটকে হুমায়ুন ফরিদী প্রথম অভিনয় করেন আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় ‘নিখোঁজ সংবাদ’-এ। এরপর ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘চাঁনমিয়ার নেগেটিভ পজেটিভ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নীল আকাশের সন্ধানে’, ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’, ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সমুদ্রে গাঙচিল’, ‘তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘বিষকাঁটা’, ‘শৃঙ্খল’, ‘ভবের হাট’ এসব নাটকের তার অভিনয় তাকে শুধু পরিচিতই করেনি, করে তুলেছে তুমুল জনপ্রিয়। সর্বশেষ তিনি ‘তখন হেমন্ত’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা করেন এবং ‘পূর্ণ চাঁদের অপূর্ণতায়’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করেন।

টিভি কিংবা মঞ্চে সেলিম আল দীন এবং নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর সঙ্গেই ছিল এ অভিনেতার সর্বাধিক সংখ্যক কাজ। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গেও অনেক নাটকে কাজ করেছেন হুমায়ুন ফরিদী। বিশেষ করে হুমায়ুন আহমেদের ‘সংশপ্তক’ ধারাবাহিক নাটকে হুমায়ুন ফরীদি অভিনীত চরিত্র ‘কানকাটা রমজান’ এখনও দর্শকমনে দাগ কেটে আছে।

চলচ্চিত্রেও হুমায়ুন ফরিদী ছিলেন বেশ জনপ্রিয়। যদিও ফরীদির নাট্যাভিনয় থেকে চলচ্চিত্রে আসা ছিল অনেক নাটকীয়। দেশীয় চলচ্চিত্রের তখনকার বেহাল অবস্থা দেখে রূপালি পর্দার জন্য কাজ করবেন কিনা এ বিষয়ে দ্বিধায় ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সুবর্ণা মুস্তাফার অকুণ্ঠ সমর্থনে ও নিজের দৃঢ়তায় এক নতুন আঙ্গিক নিয়ে বড় পর্দায় আসেন ফরীদি। তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ তার অভিনীত প্রথম ছবি। শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘সন্ত্রাস’ দিয়ে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে তার সাফল্যগাঁথা শুরু। এই ছবিতে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। বলা যায়, এরপরেই দেশীয় চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্র পায় এক অন্যমাত্রা। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছিল যে, একসময় মানুষ নায়কের পরিবর্তে তাকে দেখার জন্যই প্রেক্ষাগৃহে যেতো। এরপর ‘ভণ্ড’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘মায়ের র্যোদা’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ও ‘পালাবি কোথায়’সহ আরও অনেকগুলো ছবি হুমায়ুন ফরিদীকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। তার অভিনীত বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই ছিল সুপারহিট।

২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। বেঁচে থাকতে একুশে পদক পাননি এই শক্তিমান অভিনেতা। তবে মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন তিনি।

ব্যক্তিজীবনে বেশ সাদামাটা মানুষ ছিলেন হুমায়ুন ফরিদী। যদিও ব্যক্তিজীবন খুব বেশি সুখের ছিল না। ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেই শুরু করেন সংসার জীবন। কিন্তু সেটার বিচ্ছেদ ঘটে। সে ঘরে দেবযানি নামে তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এরপর প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে ঘর বাঁধেন এ অভিনেতা। কিন্তু ২০০৮ সালে তাদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকে ২০১২ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একাই দিনযাপন করেছেন প্রখ্যাত এ অভিনেতা।

শুভ জন্মদিন হুমায়ুন ফরীদি হুমায়ুন ফরীদির জন্মদিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর