ফেসবুকে প্রকাশিত জিকো’র গল্প থেকে ঈদ নাটক ‘হ্যালো শুনছেন?’
২০ জুলাই ২০২১ ১৭:২২
রাসয়াত রহমান জিকো পেশায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা হলেও ভালোবাসেন লেখালেখি করতে। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৯। একজন হাস্য-রসাত্মক মানুষ হিসেবেই বন্ধুমহলে বেশ জনপ্রিয় তিনি। তার লেখালেখিতেও রয়েছে স্বভাবসুলভ হাস্যরসের উপাদান।
এই মানুষটারও একদিন মন খারাপ হয়ে যায়। হাসপাতালের বেডে সংকটাপন্ন অবস্থায় তার মা, বাইরে তুমুল বৃষ্টি। তার কথায়, ‘আমার মা তখন অসুস্থ। তাকে আইসিইউ-তে রাখতে হয়েছিল। সময়টা ছিল বর্ষাকাল। হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে আমিও ছিলাম। সেদিন খুব বৃষ্টি পড়ছিল। একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে মায়ের অসুস্থতা। তখনও জানতাম না, মা আদৌ বেঁচে ফিরবেন কিনা! মনটা ভীষণ খারাপ। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি, কত রকম ভাবনা ভাবছিলাম। বৃষ্টির রাতটা আমার কাছে খুব কষ্টের ছিল, আমি ভাবতে চেষ্টা করছিলাম, বৃষ্টিতে কি শুধু খারাপ ঘটনাই ঘটে? অন্য রকম কিছু ঘটতে পারে না? মনে হলো— এই বৃষ্টি নিয়ে একটি গল্প লেখা যায়। বৃষ্টিতে যে গল্পের মূল চরিত্রের সবসময় মন খারাপ থাকে। কিন্তু আবার এই বৃষ্টির কারণেই হঠাৎ তার জীবনে পজিটিভ কিছু দেখা দেয়।’
প্রিয় পাঠক— এই গল্পটি নিয়েই নির্মিত হলো একটি নাটক। যে নাটকের মূল উপজীব্য বৃষ্টি। আর এই গল্পের রচয়িতা রাসয়াত রহমান জিকো। তার সেদিনের লেখা সেই ‘বৃষ্টি’ গল্প অবলম্বনে ‘বড় ছেলে’খ্যাত নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান এই ঈদের জন্য নির্মান করলেন একক নাটক ‘হ্যালো, শুনছেন?’
নাটকটির মূল দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ সময়ের জনপ্রিয় জুটি তানজিন তিশা ও আফরান নিশো। চ্যানেল আইতে ঈদের দিন সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে নাটকটি প্রচারিত হবে।
গল্পটি প্রথমে একটি ফেসবুক গ্রুপে প্রকাশিত হয়। এরপর সে গল্প থেকে নাটক হওয়ার কাহিনি জানতে চাইলে সারাবাংলাকে রাসয়াত রহমান জিকো বলেন, ‘এ গল্পটা আমি প্রথমে ফেসবুকে দিয়েছিলাম। সেখান থেকেই গল্পটি সবার নজরে আসে। সবাই খুব পছন্দ করে। প্রচুর শেয়ার হয়। নির্মাতা আরিয়ান ভাই আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে ছিলেন। যিনি এ সময়কার বেশ জনপ্রিয় একজন নির্মাতা এবং নাট্যকার। উনি আমার লেখা গল্প নিয়ে নাটক বানানোর আগ্রহ দেখান। আমি তাকে দুইটা গল্প দিই। তার মধ্য থেকে উনি এ গল্পটা খুব পছন্দ করেন। গল্পটার চিত্রনাট্য আরিয়ান ভাই-ই করেছেন। আমার গল্পটার নাম ছিল ‘বৃষ্টি’। সেই গল্প অবলম্বনে আরিয়ান ভাই চিত্রনাট্য করার পর নাম দিলেন ‘হ্যালো শুনছেন?”
গল্পটা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাসয়াত রহমান জিকো বললেন, ‘আগেই বলেছি, সেদিনের সেই ভাবনা থেকেই আমার এই গল্পটা লেখা। ২০১৩ সালের দিকে— সেই সময়টাতে আমার ব্যাংকের চাকরিটার সবেমাত্র শুরু। পড়ালেখা শেষ করেই চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আমি খুব ভাগ্যবান হলেও, আমার বন্ধুদের কয়েকজন তখনও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু চাকরি হচ্ছিল না। এই গল্পটা তেমনই একটা ছেলেকে নিয়ে— যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিয়েই যাচ্ছে। প্রচুর পরিশ্রম করছে, কিন্তু চাকরি পায় না। এদিকে তার সরকারি চাকরির বয়সসীমাও চলে যাচ্ছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে একদিন একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে সে একটা চায়ের দোকানে আটকা পড়ে। এরপর থেকেই গল্পের নতুন মোড়, যা আমি আর বলতে চাচ্ছি না। নাটক দেখেই জানতে হবে।’
নিজের সেই গল্পটা নাটক হিসেবে নির্মিত হওয়ার পর এখনও সেটি দেখেননি রাসয়াত রহমান জিকো। তার কারণ হিসেবে বললেন, ‘নির্মাতা আরিয়ান ভাইয়ের ওপর আমি নিশ্চিন্তে ভরসা রাখতে পারি। যার কারণে আমি শুটিংয়েও যাইনি। এমন কি, নাটকটি আমি এখনও দেখিনি। একেবারে চ্যানেল আইতে সরাসরি প্রচারের সময় দর্শকদের সঙ্গেই দেখব। আমার বিশ্বাস, অসাধারণ একটা কাজ করেছেন নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান।’
এর আগেও রাসয়াত রহমান জিকোর অপ্রকাশিত গল্প নিয়ে একটি নাটক হয়েছে। নাম ছিল ‘রাজুর সাগর দেখা’। শিশু-কিশোরদের জন্য ১৬ পর্বের ধারাবাহিক হিসেবে ২০১৮ সালে বিটিভি-তে প্রচারিত হয়েছিল।
নাট্যকার হিসেবে তার আগামীর ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাটক নিয়ে আগামীতে অনেক পরিকল্পনা আছে। তবে সেটি সংখ্যায় নয়, মান-কে প্রাধান্য দিয়ে। আমার ইচ্ছা— ভালো কিছু গল্প লিখে সেগুলোকে নাট্যরূপ দেওয়া। কাজটি এমনভাবেই করতে চাই— যেটি একটা ইউনিক কাজ হয়, দর্শকরা মন থেকেই গ্রহণ করে। বর্তমান সময়ে প্রচুর ভালো নাটক হচ্ছে। এই কাজগুলোর মধ্যেই আমি আমার চিন্তা-চেতনাটি দিয়ে যেতে চাই। সেটি প্রথাগত নয়, একেবারেই আমার নিজের মতো করেই। তবে এটিও সত্যি যে, যদি আমি আমার নিজের মতো করে কাজ করতে পারি, তাহলে আমি এই পথে এগুবো, নতুবা নয়।’
সারাবাংলা/এএসজি/একে
আফরান নিশো ঈদ আয়োজন একক নাটক চ্যানেল আই তানজিন তিশা বৃষ্টি মিজানুর রহমান আরিয়ান রাসয়াত রহমান জিকো শুনছেন? হ্যালো