কোটি দর্শকের হৃদয় ভোলানো মেয়েটির আজ জন্মদিন
৫ আগস্ট ২০২১ ১৯:২৬
নব্বই দশকের বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় নাম কাজল। লাখো কোটি দর্শকের হৃদয় ভোলানো এই মেয়েটি রূপালি জগত থেকে অনেকটা দূরে থাকার পরও এখন পর্যন্ত দর্শকের কাছে সমান জনপ্রিয়। বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের সাথে তার জুটি এখনো অনবদ্য। নানা ধরনের ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বার বার নিজেকে ভেঙেছেন, আবার গড়েছেন। আজ এই বলিউড তারকার জন্মদিন। ৪৭-এ পা দিলেন বলিউডের এই অভিনেত্রী।
১৯৭৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতের বোম্বের (বর্তমানে মুম্বই) বাঙালি-মারাঠি মুখার্জী-সমর্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা তনুজা সমর্থ অভিনেত্রী এবং বাবা শমু মুখার্জী ছিলেন পরিচালক ও প্রযোজক।
১৯৯২ সালে ‘বেখুদি’ সিনেমা দিয়ে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে যাত্রা শুরু হয় কাজলের। যদিও চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়, কিন্তু ১৯৯৩ সালে আব্বাস-মাস্তানের ‘বাজীগর’ ছবিতে কাজলের অভিনয় সকলের দৃষ্টি কাড়ে। এই ছবিটি ছিল সে বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল এবং চতুর্থ সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র। এটি বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের সাথে তার অভিনীত অসংখ্য কাজের মধ্যে প্রথম।
১৯৯৫ সালে কাজল দুটি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, সেগুলো হল রাকেশ রোশন পরিচালিত ‘করন অর্জুন’ এবং আদিত্য চোপড়া পরিচালিত ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’। দুটি চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে ছিলেন শাহরুখ খান। যার মধ্যে ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’
১৯৯৭ সালে ‘গুপ্ত: দ্য হিডেন ট্রুথ’ চলচ্চিত্রে মনোবিকৃত ধারাবাহিক খুনী ও মোহাবিষ্ট প্রেমিকা ইশা দিওয়ান চরিত্রে কাজলের অভিনয় সমাদৃত হয় এবং এটি তার কর্মজীবনের বাঁক বদলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়, এবং কাজল প্রথম অভিনেত্রী হিসাবে শ্রেষ্ঠ খল অভিনয়শিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন।
তার সবচেয়ে সফল কাজ ছিল ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’। করণ জোহরের পরিচালনায় শাহরুখ খান, রানী মুখার্জী, এবং সালমান খানের সাথে অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি সর্বকালের ব্লকবাস্টার খ্যাতি অর্জন করে।
১৯৯৫ এ ‘হালচাল’ সিনেমার সেটে কাজল-অজয়ের প্রথম দেখা। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে পরিচয় বদলে গেল পরিণয়ে। ১৯৯৯ সালে বিয়ে করেন কাজল-অজয়। কাজলের অনুরাগীদের জন্য বেশ মজার একটা তথ্য ফাঁস করেছেন স্বামী অজয় দেবগন। অজয়-কাজলের বিয়ে নিয়ে যতটা না খুশি ছিল দেবগন পরিবার, তার চেয়ে ঢের বেশি ছিল স্বস্তি। বাড়িতে কেউ তো অন্তত কথা বলছে শেষমেশ। শুরু থেকেই অজয় দেবগন একদম শান্ত প্রকৃতির। দু’জনেই চুপ থাকলে চলবে কী করে?
১৯৯৯ সালে অজয় দেবগনকে বিয়ের পর কাজল প্রকাশ ঝার ‘দিল ক্যায়া করে’ চলচ্চিত্রে অজয় ও মহিমা চৌধুরীর সাথে পার্শ্ব ভূমিকায় অভিনয় করেন। যা ব্যবসায়িকভাবে একটি ব্যর্থ চলচ্চিত্র। তার পরবর্তী মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ছিল সতীষ কৌশিকের ‘হাম আপকে দিল মেঁ রেহতে হ্যাঁয়’। এটি সমালোচনামূলক ও ব্যবসায়িকভাবে সফলতা অর্জন করে।
১৯৯৯ সালের শেষভাগে তিনি করণ জোহর পরচিালিত ‘কভি খুশি কভি গম’ ছবিতে অভিনয় করেন। এটি ভারতে ব্লকবাস্টার এবং ২০০৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বোচ্চ আয়কারী ভারতীয় চলচ্চিত্র ছিল।
এরপর দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র জগত থেকে বিরতি নেনে কাজল। এরপর ২০০৬ সালে আমির খানের বিপরীতে কুনাল কোহলির থ্রিলার ছবি ‘ফানা’ দিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে প্রত্যাবর্তন করেন। ‘ফানা’ বক্স অফিসে ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। এবং এই ছবিতে তার অসাধারণ অভিনয়ের জন্য কাজল শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং জি সিনে পুরস্কার অর্জন করেন।
২০১০ সালে শাহরুখ খানের বিপরীতে করণ জোহর পরিচালিত মাই নেম ইজ খান চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন কাজল। এটি ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলা পরবর্তী মার্কিন মুসলমানদের উপর জাতিগত বিদ্বেষ ও বৈষম্য নিয়ে নির্মিত সন্ত্রাস-বিরোধী চলচ্চিত্র। এই ছবির জন্যও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন কাজল। আবার পাঁচ বছর পর্দায় অনুপস্থিত থাকার পর ২০১৫ সালে শাহরুখ খানের বিপরীতে ‘দিলওয়ালে’ ছবিতে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন কাজল।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি কাজল সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তিনি বিধবা নারী এবং শিশুদের নিয়ে কাজের জন্য সুপরিচিত। এই কাজের জন্য তিনি ২০০৮ সালে কর্মবীর পুরস্কার লাভ করেন। শিল্পকলায় অনন্য অবদানের জন্য ২০১১ সালে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ সম্মানিত পুরস্কার পদ্মশ্রীতে ভূষিত হয়েছেন।
সারাবাংলা/এএসজি