‘মেয়ে হওয়াটাই সবচেয়ে বড় অপরাধ?’- পরীর ব্যাপারে তসলিমা
৬ আগস্ট ২০২১ ১৬:৪৪
বাংলাদেশের প্রখ্যাত নারীবাদী লেখক তসলিমা নাসরিন অনেক বছর যাবত দেশের বাইরে বসবাস করলেও দেশের নানা ইস্যুতে এখনও সরব। তিনি এবার সরব হয়েছেন পরীমনির গ্রেফতার ও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো নিয়ে। তিনি মোট আটটি পয়েন্টে পরীর অপরাধের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এগুলোকে নানান যুক্তি নিতে খন্ডিয়ে তিনি পরীর অপরাধ আসলে কী তা খুঁজছেন। সবশেষ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘নাকি মেয়ে হওয়টাই সবচেয়ে বড় অপরাধ?’
তসলিমা নাসরিন তার ভেরিফাই ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাসে এসব কথা লিখেন।
তিনি লিখেছেন, র্যাবের ব্রিফিং দেখলাম পরীমণিকে নিয়ে। আমি শুধু শুনতে চাইছিলাম কত ভয়ংকর অপরাধ করেছে পরীমণি। অপরাধের মধ্যে যা বলা হয়েছে, তা হলো, ১ পিরোজপুর থেকে ঢাকায় এসে স্মৃতিমণি ওরফে পরীমণি সিনেমায় রাতারাতি চান্স পেয়ে গেছে। ২ তার বাড়িতে বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে। ৩ তার বাড়িতে একখানা মিনি বার আছে। ৪ পরীমণি মদ্যপান করে, এখন সে মদে আসক্ত। ৫ নজরুল ইসলাম নামের এক প্রযোজক, যে তাকে সাহায্য করেছিল সিনেমায় নামতে, মাঝে মধ্যে পরীমণির বাড়িতে আসে, মদ্যপান করে। ৬ ডিজে পার্টি হতো পরীমণির বাড়িতে। ৭ আইস সহ মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে ( এগুলোর চেহারা অবশ্য দেখানো হয়নি)। ৮ মদ খাওয়ার বা সংগ্রহ করার লাইসেন্স আছে পরীমণির, তবে তার মেয়াদ পার হয়ে গেছে, এখনও রিনিউ করেনি সে।
তারপর আরো কিছু খবর দেখলাম, পরীমণি পর্নো ছবির সঙ্গে যুক্ত ছিল। না এটিরও প্রমাণ কিছু দেখানো হয়নি।
মদ খাওয়া, মদ রাখা, ঘরে মিনিবার থাকা কোনওটিই অপরাধ নয়। বাড়িতে বন্ধু বান্ধব আসা, এক সঙ্গে মদ্যপান করা অপরাধ নয়। বাড়িতে ডিজে পার্টি করা অপরাধ নয়। কারও সাহায্য নিয়ে সিনেমায় নামা অপরাধ নয়। কারো সাহায্যে মডেলিং এ চান্স পাওয়া অপরাধ নয়। কোনও উত্তেজক বড়ি যদি সে নিজে খায় অপরাধ নয়। ন্যাংটো হয়ে ছবি তোলাও অপরাধ নয়। লাইসেন্স রিনিউ-এ দেরি হওয়াও তো অপরাধ নয়।
পরীমণি নাকি একাধিক বিয়ে করেছে, সেটিও কোনও অপরাধ নয়।
অপরাধ তবে কোথায়? যে অপরাধের জন্য দামি গ্লেনফিডিশ হুইস্কিগুলো বাজেয়াপ্ত করা হলো, মেয়েটাকে গ্রেফতার করা হলো, রিমাণ্ডে নেওয়া হলো!
যে কটা মদ ভর্তি বোতল দেখা গেল পরীমণির বাড়িতে, মদের লাইসেন্সধারীদের বেসমেন্টের সেলারে এর চেয়ে অনেক বেশি থাকে। একটা দুটো পার্টিতেই সব সাবাড় হয়ে যায়। পরীমণি আবার মদ শেষ হয়ে গেলে খালি বোতল জমিয়ে রাখে। বোতলগুলো দেখতে ভালো বলেই হয়তো। কী জানি, এও আবার অপরাধের তালিকার মধ্যে পড়ে কিনা।
সত্যিকার অপরাধ খুঁজছি। কাউকে কি জোর করে মাদক গিলিয়েছে, মদ গিলিয়েছে, কারও সঙ্গে প্রতারণা করেছে মেয়েটি? ধাপ্পা দিয়ে ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা পকেটে ভরেছে? কাউকে খুন করেছে? অনেকে বলছিল খুব গরিব ঘর থেকে উঠে এসে ধনী হয়েছে পরীমণি। গরিব থেকে ধনী হওয়া পুরুষগুলোকে মানুষ সাধারণত খুব প্রশংসা করে, কিন্তু মেয়ে যদি গরিব থেকে ধনী হয়, তাহলেই চোখ কপালে ওঠে মানুষের। কী করে হলো, নিশ্চয়ই শুয়েছে। যদি শুয়েই থাকে, তাহলে কি জোর করে কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে শুয়েছে? ধর্ষণ করেছে কাউকে? পুরুষেরা যেমন দিন রাত ধর্ষণ করে মেয়েদের, সেরকম কোনও ধর্ষণ?
অপরাধ খুঁজছি।
নাকি মেয়ে হওয়াটাই সবচেয়ে বড় অপরাধ?
সারাবাংলা/এজেডএস