আক্ষেপ আর অভিমান নিয়ে ৮০তম বর্ষে প্রবীর মিত্র
১৮ আগস্ট ২০২১ ১৩:৪২
চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী অভিনেতা প্রবীর মিত্র। চলচ্চিত্রের গুনী এই অভিনেতা দেখতে দেখতে জীবন চলার পথে আজ ৮০ বছরে পা রাখতে যাচ্ছেন। ১৯৮২ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর আরো বহু চলচ্চিত্রে তিনি অনবদ্য অভিনয় করেছেন। ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা। পেয়েছেন ‘প্রযোজক সমিতি অ্যাওয়ার্ড’, ‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার’, ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সম্মাননা’,‘মাদার তেরেসা স্মৃতি পদক-২০১৭’,‘ জাগো বাংলা সম্মাননা’, ‘আমরা কুড়ি সম্মাননা’,‘ মহানগরী অ্যাওয়ার্ড’, ‘দর্শক ফেরাম অ্যাওয়ার্ড’, ‘ঢাকা কালচারাল রিপোর্টার্স ইউনিটি অ্যাওয়ার্ড’সহ আরো বহু সম্মাননা।
প্রবীরমিত্র’র বাবা গোপেন্দ্র নারায়ণ মিত্র এবং মা অমিয় বালা মিত্র। রাজধানীর তাতীবাজারের হরিপ্রসণ্ণ মিত্র রোড প্রবীর মিত্ররই দাদার নামে। নায়ক হিসেবে প্রবীর মিত্রের প্রথম চলচ্চিত্র ছিলো জহির রায়হানের শেষ সহকারী শেখ নজরুল ও ইলতুত মিস পরিচালিত ‘চাবুক’। এতে প্রবীর মিত্রের নায়িকা ছিলেন কবরী। অভিনয়ের পথচলায় বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অনেকে প্রযোজক পরিচালকের কাছে এখনো অনেক টাকা পাওনা তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রবীর মিত্র বলেন,‘ আমি মনে করি যে এই টাকাটা আমার ছিলো না। তাই আমি পাইনি।’ সর্বশেষ প্রবীর মিত্র ‘বৃদ্ধাশ্রম’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর আর কোন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি তিনি।
অভিনয় জীবনে প্রচুর সম্মাননা পেলেও একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক পাননি নিবেদিত এই অভিনেতা। এই নিয়ে প্রবীর মিত্র বলেন, ‘দর্শকের ভালোবাসাই আমার কাছে সবসময়ই অমূল্য অর্জন। দর্শকের ভালোবাসাই আমাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। এই ভালোবাসার মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই আমি।’
২০০০ সালে হারিয়েছেন সহধর্মিনী অজন্তা মিত্র-কে। ২০১২ সালে মারা যায় ছোট ছেলে আকাশ। ২০২১’র শুরুতে মারা যায় তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। খুব শখ ছিলো এটিএম শামসুজ্জামানের সঙ্গে আড্ডা দেবার। কিন্তু শেষ দেখা হলোনা প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে। প্রবীর মিত্র বলেন, ‘খুব ইচ্ছে ছিলো খোকনের (এটিএম শামসুজ্জাানের ডাক নাম) সঙ্গে আড্ডা দেবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হলোনা। আমার আগেই আমার বন্ধু চলে গেলো। খুব কষ্ট পেয়েছি। কতো যে স্মৃতি খোকনের সঙ্গে তার কোন হিসেবে নেই। পুরান ঢাকার মানুষ আমরা। সুখে দু”খে একসঙ্গে আমাদের যে কতো সময় কেটেছে তার কোন হিসেবে নেই। আজ জীবনের এই সময়ে এসে কতোকিছু যে মনে পড়ে। কতোজনকে যে দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পারিনা। সত্যি বলতে কী কেউই এখন আর ফোন করেনা, খোঁজও নেয়না। মানুষের জীবনের শেষ সময়টুকু বুঝি এমনই, চাইলেই কোথাও যাওয়া যাবেনা, কারো সঙ্গে দেখাও করা যাবেনা। খুব খারাপ লাগে, কষ্ট হয়।’
চলচ্চিত্রের এই জীবন্ত কিংবদন্তী অভিনেতা প্রায় ১৪ বছর ধরে দুই পায়ের হাটুতে ব্যথা নিয়ে ভুগছেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচাতেই সময় কাটছে তার। কানেও এখন খুব কম শুনছেন। মেশিন ব্যবহার করেও কাজ হচ্ছেনা। এখনো অভিনয়ে আগ্রহ আছে তার। বললেন, ‘অভিনয়টাইতো পারি, আর তো কিছু পারিনা। অভিনয়তো আজীবন করে যেতে চাই। কিন্তু আমার এই অবস্থায় কে আমাকে দিয়ে অভিনয় করাবে? তবে হ্যাঁ, যদি বসে বসে অভিনয় করানোর কোন ব্যবস্থা থাকে তবে আমি অভিনয় করতে পারবো।’
সারাবাংলা/এএসজি