মিতা হক: জীবন ও শিল্পের এমন শুদ্ধতম মিলন কালেভদ্রে ঘটে
৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:০২
রবীন্দ্রনাথের গানে আজন্ম নিবেদিত এক শিল্পীর নাম মিতা হক। রবীন্দ্রনাথের গানই ছিল যার জীবনের একমাত্র ব্রত। রবীন্দ্রসঙ্গীতের অমিয় ধারায় নিজেকে সিক্ত করার পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মাঝেও ছড়িয়ে দিয়েছেন তার সঙ্গীত লব্ধ জ্ঞান। এই উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের আজ (৬ সেপ্টেম্বর) জন্মদিন।
১৯৬২ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্ম হয় মিতা হকের। সঙ্গীতপ্রেমী পরিবারে বড় হওয়ায় গানের জন্য আলাদা কোনো স্কুল বা একাডেমিতে ভর্তি হননি। তার চাচা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক ও রবীন্দ্র গবেষক ওয়াহিদুল হক। প্রথমে চাচা ওয়াহিদুল হক এবং পরে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খান ও সনজিদা খাতুনের কাছে বাড়িতেই গান শেখেন তিনি। মাত্র ১১ বছর বয়সে বার্লিনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শিশু উৎসবে অংশ নেন তিনি। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি তবলা বাদক মোহাম্মদ হোসেন খানের কাছে সঙ্গীত শেখা শুরু করেন। ১৯৭৭ সাল থেকে নিয়মিত তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে সঙ্গীত পরিবেশনা করেন। মিতা হক ছিলেন বাংলাদেশ টিভি ও বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী।
এককভাবে মুক্তি পাওয়া ২৫টি অ্যালবাম আছে তার। এর মধ্যে ১৪টি ভারত থেকে ও ১১টি বাংলাদেশ থেকে। তার প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম ‘আমার মন মানে না’ প্রকাশিত হয় ১৯৯০ সালে। সঙ্গীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক এবং ২০২০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
সুরের এই মহান সাধক ‘সুরতীর্থ’ নামে একটি সঙ্গীত প্রশিক্ষণ দল গঠন করেন, যেখানে তিনি পরিচালক ও প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালন করতেন। পাশাপাশি ছায়ানটের রবীন্দ্রসঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসেবে গান শিখিয়েছেন বহুদিন ধরে। জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদে প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তী সময়ে সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে মিতা হক অকাল প্রয়াত স্বনামধন্য অভিনেতা-পরিচালক নাট্যজন খালেদ খানকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র সন্তানের নাম ফারহিন খান জয়িতা। উল্লেখ্য, জয়িতাও একজন সম্ভাবনাময় সংগীত শিল্পী হিসেবে আমাদের সংগীত ভূবনে বিশেষ দৃষ্টি কেড়েছেন।
বাঙালি সংস্কৃতির শুদ্ধতায় নিমগ্ন এই শিল্পী অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে শুধু ধারণ ও লালনই করেননি, নিরন্তর সচেষ্ট ছিলেন তার বিকাশেও। শিল্প-সংস্কৃতির নানান ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
দীর্ঘ পাঁচ বছর কিডনি রোগেও ভুগছিলেন এই শিল্পী। নিয়মিত ডায়ালাইসিস চলছিল। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন। ১১ এপ্রিল (রোববার) সকাল সাড়ে ছয়টায় রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৩১ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হন মিতা হক। এরপর করোনা নেগেটিভ হলে বাসায় ফেরেন। শনিবার (১০ এপ্রিল) কিডনি ডায়লাইসিসের সময় তার প্রেসার ফল করে। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পরে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। শত চেষ্টাতেও আর ফেরানো গেলো না তাকে। নিরলস চেষ্টা ও অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে আকড়ে ধরে সঙ্গীত সাধনায় নিমগ্ন উজ্জ্বলতম এই নক্ষত্র হারিয়ে গেলেন চিরতরে।
সারাবাংলা/এএসজি