হুমায়ূনের পরিবারকে নমনীয় হতে বললেন আবু সাইয়ীদ
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:০৩
‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ ছবি নির্মাণের বিষয়ে হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের শর্তারোপ ও অমিতাভ রেজা চৌধুরীর সরকারী অনুদানের অর্থ ফেরত নিয়ে এক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সারাবাংলায়। এ নিয়ে দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে আলোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এক ফেসবুক লাইভ করেছেন নির্মাতা আবু সাইয়ীদ।
ফেসবুকে লাইভে তিনি হুমায়ূন পরিবারকে এমন কোন আর্থিক শর্তারোপ না করতে অনুরোধ করেছেন, যাতে ছবিটি না হয়। তাদেরকে ব্যাপারটি নিয়ে নমনীয় হতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি
আবু সাইয়ীদ তার লাইভে হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’র অনুমতি নেওয়ার প্রেক্ষাপট ও অন্যান্য বিষয় বর্ণনা করেন।
২০০৪ সালের দিকে নাসরিন জাহানের ‘উড়ে যায় নিশিপক্ষী’ উপন্যাস অবলম্বনে ‘শঙ্খনাদ’ নির্মাণ করছিলেন। ছবিটির শুটিং শেষ করে তিনি তখন পোস্টের কাজ করছিলেন। এমন সময় একদিন তাকে ফোনে সঙ্গীত শিল্পী সেলিম চৌধুরী হুমায়ূন আহমেদের ‘জনম জনম’ উপন্যাস অবলম্বনে ছবি নির্মাণের প্রস্তাব দেন। তখন তিনি উপন্যাসটি সংগ্রহ করে পড়েন এবং সেলিমকে বলেন, এখানে তো অনেকগুলো চরিত্র, যে কোন একটি চরিত্র ধরে এগিয়ে চলচ্চিত্র বানানো যায়।
পরবর্তীতে সেলিম চৌধুরীকে নিয়ে আবু সাইয়ীদ হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন। তখন হুমায়ূন আহমেদই তাকে ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ উপন্যাসটি নিয়ে ছবি নির্মাণ করতে বলেন। শেষ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে ‘জনম জনম’ ও ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ উপন্যাস অবলম্বনে ছবি নির্মাণের জন্য লিখিত অনুমতি পান।
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা হয়েছিলো। লাইভে আবু সাইয়ীদ জানান, ‘জনম জনম’-এর জন্য ২৫ হাজার টাকা সম্মানী বাবদ দিয়েছিলেন। ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’র জন্য তখনও কোন অর্থ দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে দেওয়ার কথা ছিল। সে অংকও ২৫ হাজার হওয়ার কথা ছিল।
আবু সাইয়ীদ ‘জনম জনম’ অবলম্বনে ‘নিরন্তর’ নির্মাণ করেছিলেন। ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ একই সময়ে নির্মাণ না করার কারণ হিসেবে বলেন, আমি চেয়েছিলাম ‘নিরন্তর’ নির্মাণের পর আরও ২ থেকে ৩ টা ছবির পরে ওটা অবলম্বনে ছবি বানানোর।’
২০০৮ কিং ২০০৯ সালের দিকে আবু সাইয়ীদের মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের অফিসে একদিন দেখা করেন অমিতাভ রেজা। তিনি তখন বলেন, আমি ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’র গল্পের প্রেমে পড়ে গেছি। আপনি আমাকে অনুমতি দিলে আমি ছবিটা বানাতে পারি, যেহেতু অনুমতিটা আমার নামে ছিল।
আবু সাইয়ীদ বলেন, ‘আমি অমিতাভকে বলি আপনি ছবিটা করতে পারেন আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমি চুক্তিনামা স্থানান্তর করতে পারি কিনা আমার জানা নেই। আপনি হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কথা বলে নিয়েন।’ তিনি অমিতাভকে তার করা ‘পেন্সিল আঁকা পরী’র বাংলা এবং ইংরেজি চিত্রনাট্য দিয়েছিলেন। কারণ তখন ‘রুপান্তর’ নির্মাণ শেষ করে ছবিটি করতে চেয়েছিলেন তিনি। অমিতাভ চাইলে তার চিত্রনাট্য ব্যবহার করতে পারবে বা চাইলে নতুন করে করতে পারবে বলেও তখন জানিয়েছিলেন আবু সাইয়ীদ।
তার অনুমতির পর হুমায়ূন আহমেদ অমিতাভকে মৌখিক অনুমতি দিয়েছে তা আবু সাইয়ীদ খবরে দেখেছেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে অমিতাভ রেজা লিখিত অনুমতি নিয়েছিলেন কিনা তা তার জানা নেই।
তিনি হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের প্রতি আহ্বান জানান, যেহেতু হুমায়ূন আহমেদ অনুমতি দিয়ে গেছেন, তাই বিষয়টি যেনো আর্থিক শর্তাবলির কারণে আটকে না যায়।
‘হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের উচিত এ ছবির জন্য অর্থনৈতিক বিষয়টাকে মুখ্য হিসেবে না দেখা। এখন ২৫ হাজার টাকার ব্যাপারটি ২৫ হাজারেই থাকবে নাকি কিছুটা বাড়বে এটা দেখা যাবে। কিন্তু কয়েক লক্ষ টাকা এবং ছবির কিছু কিছু ব্যাপারে শেয়ার চাওয়া— এটা মনে হয় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঠিক হবে না। তাতে হবে কি এ ছবিটা আর হবে না। কেউ হয়তো করতে পারবে না। বা অন্য উপন্যাস নিয়ে মানুষ খুব বেশি উৎসাহ পাবে না’— বলেন আবু সাইয়ীদ।
সারাবাংলা/এজেডএস