মধুমিতাকে টিকিয়ে রাখতে শেষ চেষ্টা
২ অক্টোবর ২০২১ ২০:২৮
একসময় ছিল মধুমিতা হলের সামনে ব্ল্যাকারদের ভিড় লেগেই থাকতো। কারণ ছবির শো শুরুর আগেই সকল টিকেট বিক্রি হয়ে যেত। তাই দেরিতে আসা দর্শকরা বাধ্য হয়ে ব্ল্যাকে টিকেট কাটত। গত শতাব্দীর শেষ দশক থেকে বাংলা চলচ্চিত্রের ধ্বস নামা শুরু হলে হলের ব্যবসা কমতে থাকে। মধুমিতাও এর ভুক্তভোগী। তাই এর মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাত পরিবারিক ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে শেষ চেষ্টা হিসেবে কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন।
নওশাত সারাবাংলার সঙ্গে এক দীর্ঘ ফোনালাপে জানান, তিনি সিনেমা হলটিতে থ্রিডি ছবি দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে এসেছেন। থ্রিডি সিনেমার প্রজেক্টরের জন্য এলসিও খুলেছেন।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মাঝে মধুমিতাকে নতুন রূপে দর্শকদের সামনে নিয়ে আসতে পারব। আমরা যেহেতু এ দেশে বহু আগে থেকে হলিউডের ছবি আমদানি করি, তাই ইচ্ছে হলিউডের বড় বড় প্রযোজনা সংস্থার ছবি এখানে মুক্তি দেওয়ার।
তবে দেশি ছবিও মুক্তি দিবেন। সেক্ষেত্রে এখানকার সকল ছবি দিবেন না। তিনি বলেন, ‘যে সকল ছবি মানুষ পছন্দ করবে এবং মানসম্পন্ন ছবি সে সকল বাংলা ছবি আমরা চালাবো।’
বছর দুয়েক আগে এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন আপনারা মাল্টিপ্লেক্স করবেন। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করেছেন। কিন্তু সেটা তো হল না।
‘এখন মাল্টিপ্লেক্স বা সিনেপ্লেক্স করতে তো অনেক টাকা লাগবে। এখন মধুমিতাকে থ্রিডি সিনেমা হলে রূপান্তর করতেই অনেক টাকা চলে যাচ্ছে। এখন এটা ভালভাবে চললে ইচ্ছে আছে আরেকটা স্ক্রিন বাড়ানোর। আর না হলে সিনেমা হলের ব্যবসায় বন্ধ করে দিব। যতটুকু টিকিয়ে রাখছি আমার বাবার লিগেসি বজায় রাখার জন্য’—বললেন নওশাত।
সরকারের সিনেমা হলের জন্য তো ১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছে। সেখান থেকেও চাইলে আর্থিক সহায়তা নিতে পারেন। এমন প্রশ্নে নওশাত বলেন, ‘ওই অর্থ তো ঋণ। এখন হলে চালানোর মতো ঠিকঠাক দেশি ছবিই নাই। তাছাড়া ঋণ হওয়ার কারণে আমাকে নিয়মিত সুদ দিতে হবে। কোন কারণে দিতে না পারলে দেখা যাবে আমার সিনেমা হলের জায়গা ব্যাংক নিয়ে নিছে। এরপরও এ অর্থের নিয়মনীতি সহজ করলে হয়ত নিবো।’
মধুমিতা সিনেমা হলকে থ্রিডিতে রূপান্তরে সহায়তা করছে ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান। সিনেমা হলটির আসন সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২শ ২১টি। করোনার আগে কমিয়ে করা হয়েছিল ১ হাজার ১শ। নতুন করে ১ হাজারে নামিয়ে আনা হচ্ছে।
তবে টিকেটের দাম আগের মতই ৬০, ১০০ ও ১৫০ টাকা থাকবে। তবে থ্রিডি ছবি যখন চলবে ডিসির টিকেটের দাম ২০০ টাকা করা হবে বলে জানান নওশাদ।
১৯৬৭ সালে রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা মতিঝিলে চালু হয়েছিল মধুমিতা সিনেমা হল। প্রথম দিকে হলিউডের ছবি চললেও পরবর্তীতে বাংলা ছবি দেখাতে শুরু করে হলটি। একসময় তারা চলচ্চিত্র প্রযোজনায় আসে। দেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের অনেক কিছুর স্বাক্ষী হলটি গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ। আগামী ৮ অক্টোবর থেকে আমাদানিকৃত ভারতীয় বাংলা ছবি ‘বাজি’ দিয়ে হলটি আমার খোলা হচ্ছে।
সারাবাংলা/এজেডএস
‘এক টিকিটে দুই ছবি’ ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ টিকিয়ে রাখা থ্রিডি ছবি মধুমিতা সিনেমা হল