২৩ বছরের পথচলায় প্রমা অবন্তীর ‘ওটিডিএমসি’
৩০ মে ২০২২ ১৮:৪০
ওড়িশি নৃত্য- প্রাচীনতম ভারতীয় নৃত্যকলার অন্যতম এই ধারা এখন শুধু ভারতবর্ষ নয়, সারা পৃথিবীতে খ্যাতি অর্জন করেছে তার অপরূপ ভাষা এবং সেই ভাষার মধ্য দিয়ে নৃত্যের অপরিসীম সৌন্দর্যের জন্য। মার্গনৃত্যের সুক্ষ্ম ইঙ্গিতময়তা, আধ্যাত্মিক চেতনা ও গভীর ভাবসম্পদ সমৃদ্ধ এই নৃত্যধারা ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নৃত্যাঙ্গনেও।
ওড়িশি নৃত্যের এই প্রসার ও প্রচারে যে ক’জন নৃত্যশিল্পী নিরলস কাজ করে চলেছেন, তাদেরই একজন ‘প্রমা অবন্তী’। বলা হয়ে থাকে, এদেশে ওড়িশি নৃত্যচর্চায় তিনি অন্যতম। নাচের প্রতি ভালোবাসার টানে প্রমা একসময় পাড়ি জমান ভারতে। বাংলাদেশ থেকে মাধ্যমিক পাশ করেই তিনি ভর্তি হন পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেই ১৯৯৭ সালে আই.সি.সি.আর বৃত্তি নিয়ে ‘ওড়িশী নৃত্যকলা’য় ‘ব্যাচেলর অব আর্টস’ এবং ১৯৯৯ সালে ‘মাস্টার অব আর্টস’ দুটিতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন প্রমা।
রবীন্দ্রভারতীতে পড়াকালীন সময়েই পেয়েছিলেন ‘চন্ডিগড়’ বৃত্তি ও ‘উদয়শঙ্কর’ বৃত্তি। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম ওড়িশী নৃত্যশিল্পী, যিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় দীক্ষিত হয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন। ওড়িশী নৃত্যের প্রবাদ প্রতীম নৃত্যগুরু পদ্মবিভুষণ কেলুচরণ মহাপাত্র’র একমাত্র বাংলাদেশি শিষ্য ‘প্রমা অবন্তী’।
২০০০ সালে দেশে ফিরে এক ব্যাতিক্রমি সিদ্ধান্ত নেন প্রমা। চট্টগ্রামের গুণীজনদের একান্ত অনুরোধে রাজধানীমুখী না হয়ে চট্টগ্রামেই স্থায়ী হন এই প্রতিভাবান শিল্পী। গঠন করেন নিজের নৃত্য প্রতিষ্ঠান ‘ওড়িশী অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার’। আর সেখানেই দীর্ঘ দুইদশক ধরে নিবিড়ভাবে ওড়িশী নৃত্যচর্চা করে চলেছেন প্রমা। নতুন প্রজন্মের নৃত্যশিল্পী তৈরিতে সেদিন চট্টগ্রামে যে নৃত্য প্রতিষ্ঠান প্রমা গঠন করেছিলেন, সে নৃত্য প্রতিষ্ঠানটি দেখতে দেখতেই পদার্পণ করলো ২৩ বছরে।
শনিবার (২৮ মে) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় প্রমার ‘ওড়িশী অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার’-এর ২২ বছর পুর্তি উৎসব। এই আয়োজনের শুরুতেই আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন। অতিথি হিসেবে ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশন, চট্টগ্রাম-এর সহকারী হাইকমিশনার রাজীব রঞ্জন এবং কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
আলোচনা পর্ব শেষ হওয়ার পরপরই শুরু হয় ‘আলোয় আলোয় রবীন্দ্র-নজরুল ও ওড়িশী নৃত্যকলা সন্ধ্যা’। নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তীর নৃত্য পরিকল্পনায় এতে অংশ নেয় ‘ওড়িশী অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার’-এর শতাধিক নৃত্যশিল্পী ও শিক্ষার্থী। একের পর এক পরিবেশিত হয়- আখড়া, মঙ্গলাচরণ, পল্লবী (যুগ্মদন্ড), বসন্ত পল্লবী, রাম ভজন (শ্রীরাম), অভিনয় (কাঁহি গলে মুরলী পুংকা) এবং সবশেষে মোক্ষ।
দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই আয়োজন প্রসঙ্গে নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তী বলেন, ‘জানি না দর্শকদের কতটুকু উপহার দিতে পেরেছি। তবে আমার মেয়েরা চেষ্টা করেছে ভালো কিছু উপহার দেওয়ার। দর্শকদের জন্যই এত আয়োজন আমাদের। আমার সবচেয়ে আনন্দের বিষয় দীর্ঘদিন পর ওড়িশী অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, চট্টগ্রামের প্রায় সকল শিক্ষার্থী এই প্রযোজনার অংশ হয়েছে। সংগঠনের ক্ষুদে শিক্ষার্থী, জ্যেষ্ঠ বিভাগের শিক্ষার্থীরা, সহকারী ও সহযোগী নৃত্য প্রশিক্ষকরাও তাদের নৃত্য নিবেদন করেছে।’
‘আলোয় আলোয় রবীন্দ্র-নজরুল ও ওড়িশী নৃত্যকলা সন্ধ্যা’য় ধারাভাষ্যে ছিলেন হৈমন্তী বড়ুয়া, অভ্র বড়ুয়া ও অনিন্দা দাশ, শব্দ প্রক্ষেপনে সুমেধ বড়ুয়া, মঞ্চ পরিকল্পনায় কুন্তল বড়ুয়া, আলোক নির্দেশনায় অসীম দাশ এবং পোস্টার ও অলংকরনে চিত্রশিল্পী অজয় সেন চৌধুরী।
আরও দেখুন:
গত ১৭ মার্চ সারাবাংলা কথোপকথনে নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তী শুনিয়েছিলেন তার নৃত্যশিল্পী হয়ে ওঠার গল্প…
https://www.facebook.com/Sarabangla.net/videos/542441660437048
সারাবাংলা/এএসজি
ওড়িশি নৃত্য ওড়িশী অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার ড. অনুপম সেন প্রমা অবন্তী রবীন্দ্রভারতী