প্রেমিকাদের জন্য লিখেছিলেন, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’
৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:০৬
তার লেখা গানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। একটা সময় ছিল, যখন চলচ্চিত্রের গান মানেই গাজী মাজহারুল আনোয়ার। পর পর কয়েকটা প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের গান শুনে। বাংলা গানের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই গীতিকবি বিশ হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন। এর মধ্যে জনপ্রিয়, কালজয়ী গানের তালিকাটিও বেশ লম্বা। কিছু গানের কথা উল্লেখ করলে আন্দাজ করা যাবে তার প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেম সম্পর্কে। অসংখ্য দেশের গানের মধ্যে অন্যতম ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না ,আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ , ‘জন্ম আমার ধন্য হল মা গো…’ ।
শুধু গান লেখাই নয়। বিরল প্রতিভার এই মানুষটি সুর দিয়েছেন হাজারও গানে। নির্মাণ করেছেন বহু চলচ্চিত্র। লিখেছেন চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, করেছেন প্রযোজনা। মাত্র ২১ বছর বয়সেই গাজী মাজহারুল আনোয়ার গীতিকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে তার লেখা প্রথম গান প্রচার হয়। এরপর নিরলস ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো ষাট বছরে সৃষ্টি করে গেছেন হাজার হাজার গান। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা গানের ইতিহাসকে।
জেনে অবাক হবেন, গুণী এই মানুষটি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। মেডিকেলের নিয়ামানুযায়ী দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় এক দিন লাশ কাটা ঘরে ঢুকতে হয়েছিল তাকে। লাশ কাটাছেঁড়া করতে ভালো না লাগায় আর মেডিকেলে পড়া হলো না। গান লেখা শুরু করলেন গাজী মাজহার। সেই খবর শুনে পিতা খুবই মনোক্ষুন্ন হয়েছিলেন। চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন ছেলের ভবিষ্যত নিয়েও। দুঃখ করে ছেলেকে চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘ইউ আর মাই লস্ট গেম’। পরে অবশ্য ভুল ভেঙেছিল গাজী মাজহারুল আনোয়ারের বাবার। ছেলের নাম-যশ দেখে যেতে পেরেছিলেন তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেছিলেন, গীতিকার হিসেবে যখন তিনি পরিচিত হতে শুরু করেছেন তখন স্বাভাবিকভাবেই তার অনেক মেয়ে ভক্ত হয়েছিল। চিঠি-উপহার পেতেন প্রায়ই। অনেক সুন্দরী অনুরোধ করতেন, তাকে নিয়ে একটা গান লিখার জন্য। শুধু চিঠিতেই নয় সামনাসামনিও অনেকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু এতোজনের জন্য কি আলাদা আলাদাভাবে গান লেখা সম্ভব! অবশ্য তিনি কাউকে নিরাশ করেননি। সবাইকে খুশি করতে লিখেছিলেন কালজয়ী গান, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’। এরপর যেই গাজী মাজহারুলকে বলেছেন, তাকে নিয়ে গান লিখতে- তিনি ‘এই মন তোমাকে দিলাম’ শুনে নিতে বলতেন।
বাংলা গানের কিংবদন্তী এই মানুষটি চলে গেলেন আজ সকালে। রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যারা যান তিনি। মৃত্যকালে তিনি স্ত্রী এক ছেলে, এক মেয়ে এবং নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রেমিকাদের জন্য লিখেছিলেন ‘এই মন তোমাকে দিলাম’