সিরিজ ও সিনেমা মিলিয়ে ১২টি নতুন প্রযোজনা নিয়ে ফিল্ম সিন্ডিকেট
২১ মার্চ ২০২৩ ১৮:০২
তিরিশ কোটি বাঙালির সাস্কৃতিক রাজধানী হবে ঢাকা। সেখান থেকেই বাংলার গল্প ছড়িয়ে যাবে গোটা দুনিয়ায়। এই স্বপ্ন নিয়েই ঢাকার সাত নির্মাতার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ফিল্ম সিন্ডিকেট’-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। ২০২০ সালে কোভিডের দিনগুলোয় প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে ইতোমধ্যে তাকদীর, ঊনলৌকিক, কারাগার এবং কাইজারের মতো আলোচিত ও দর্শক সমাদৃত ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করেছে।
সোমবার (২০ মার্চ) রাজধানীর গুলশান ক্লাবে তরুণ ও সৃজনশীল পেশাদারদের নিয়ে গড়া প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ফিল্ম সিন্ডিকেট’ ৭টি নতুন ওয়েব সিরিজ ও ৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রসহ মোট ১২টি নতুন নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশী এ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য সারাবিশ্বের ৩০ কোটি বাংলাভাষী দর্শক-শ্রোতা এবং বিনোদন দুনিয়ায় সৃজনশীল, বৈচিত্র্যময় ও গতিশীল নির্মাণের মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থানকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ফিল্ম সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মীর মোকাররম হোসেন এই উদ্যোগের লক্ষ্য ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমরা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটি সাসটেইনেবল ইকোসিস্টেম তৈরির লক্ষ্যে এগোচ্ছি। এতে পরিচালক, লেখক, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী এবং প্রযুক্তিবিদরা তো থাকবেনই পাশাপাশি ব্র্যান্ড, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, প্রযোজনা সংস্থা, পরিবেশক, প্রদর্শক, সম্প্রচারক এবং স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোও থাকবে। আমরা সকলের মধ্যে সুদূরপ্রসারী অংশীদারিত্বের সংস্কৃতি তৈরি করতে চাই।”
২০২০ সালে মীর মোকাররম হোসেনের উদ্যোগে চলচ্চিত্র নির্মাতা তানিম নূর, কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, সালেহ সোবহান অনীম, সৈয়দ আহমেদ শাওকী, রুমেল চৌধুরী এবং রেহমান সোবহান সনেটকে নিয়ে গঠিত হয় ‘ফিল্ম সিন্ডিকেট’।
বাংলা ভিজুয়াল মিডিয়ার নতুন ও সৃজনশীল ভাষায় কাজ করার তাগিদ নিজেদের ভেতরে অনুভব করার প্রেক্ষিতেই এই তরুণ উদ্যোক্তারা এক হয়ে ফিল্ম সিন্ডিকেটের যাত্রা শুরু করেছিলেন বলে জানান মীর মোকাররম। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যেই পেশাদারী মনোভাব নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
মোকাররম হোসেনের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল দেশ ও বিদেশের শীর্ষ স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে। পরবর্তীতে তিনি নির্মাণ করেছেন তথ্যচিত্র, চলচ্চিত্র। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের গল্প বলার অভিজ্ঞতার আলোকে অনুষ্ঠানে তিনি ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে সৃজনশীল পেশাদার, ব্র্যান্ড, পরিবেশক এবং স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোকে একত্রিত করে ফিল্ম সিন্ডিকেট সবার জন্য লাভজনক একটি ক্ষেত্র তৈরি করতে চায়।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ‘কাইজার’- এর নির্মাতা তানিম নূর বলেন, ফিল্ম সিন্ডিকেট নিজেদের কাজের মাধ্যমেই সৃজনশীল সহযোগিতার পথ তৈরি করতে চায়। স্টুডিওতে চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং লেখকদের প্রযোজনা তত্ত্বাবধানেরও ওপর জোর দেন তিনি।
ফিল্ম সিন্ডিকেট-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় আলোকপাত করেন, তাদের চারটি দর্শকপ্রিয় ওয়েব সিরিজের নির্মাণের স্মৃতি। তার আলোচনায় উঠে আসে, তাকদীর, ঊনলৌকিক, কাইজার এবং কারাগারের নির্মাণের সময় পেরিয়ে আসা চ্যালেঞ্জগুলো।
অনুষ্ঠানে ফিল্ম সিন্ডিকেটের আসন্ন ১২টি প্রযোজনার ঘোষণা দেন নির্মাতা ও প্রতিষ্ঠানটির আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকী। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৭টি ওয়েব সিরিজ- ‘ঊনলৌকিক ২’, ‘পেন্ডুলাম’, ‘গুলমোহর’, ‘ডেল্টা ২০৫১’, ‘দ্বৈত’, ‘অদানব’ এবং ‘ফ্রেন্ডস উইদাউট বেনিফিটস’।
আর ফিল্ম সিন্ডিকেট ঘোষিত ৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র হচ্ছে- ‘লোহানী’, ‘বাইপাস’, ‘খোঁয়ারি’, ‘পুলসিরাত’ এবং ‘হেল ব্রোক লুজ’।
‘কাইজার’-এর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় তানিম নূর নির্মাণ করবেন পূর্ণদৈর্ঘ্য ক্রাইম থ্রিলার ‘লোহানী’ এবং রহস্য সিরিজ ‘পেন্ডুলাম’। রহস্য সিরিজ ‘গুলমোহর’ এবং ফিচার ফিল্ম ‘বাইপাস’ হতে চলেছে ফিল্ম সিন্ডিকেটের জন্য সৈয়দ আহমেদ শাওকীর নতুন দুই সৃজনশীল উদ্যোগ।
কোক স্টুডিও বাংলার ভিজুয়াল ডিরেক্টর কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় নিয়ে আসছেন সাই-ফাই ওয়েব সিরিজ ‘ডেল্টা ২০৫১’।
এশিয়ান একাডেমি ক্রিয়েটিভ অ্যাওয়ার্ডস বিজয়ী ওয়েব সিরিজ ‘জাগো বাহে’-এর নির্মাতা সালেহ সোবহান অনীমের বানাবেন ফিচার ফিল্ম ‘খোঁয়ারি’ এবং ‘পুলসিরাত’।
পুনর্জন্ম ফ্র্যাঞ্চাইজি-খ্যাত ভিকি জাহেদ নিয়ে আসছেন সাই-ফাই রহস্য থ্রিলার সিরিজ ‘অদানব’, ফিল্ম সিন্ডিকেটের ব্যানারে।
পরিচালক রবিউল আলম রবি ফিরছেন ‘ঊনলৌকিক-২’ নিয়ে। তার পরিচালিত প্যারানরমাল জঁনরার অ্যান্থলজি সিরিজের প্রথম সিজন ২০২১ সালে বাঙালি দর্শকদের মনোজগতে আলোড়ন তুলেছিল।
থ্রিলার রহস্য ড্রামা অ্যান্থলজি ‘দ্বৈত’ দিয়ে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন আয়মান আসিব স্বাধীন এবং সুস্ময় সরকার। পাশাপাশি ড্রামা ফিল্ম ‘হেল ব্রোক লুজ’-এর মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন রাজীব রাফি।
আত্মপ্রকাশ ঘটছে আরও একজন পরিচালকের। দুই দেশের দুই মানুষের তৃতীয় একটি দেশে মিলিত হওয়ার কাহিনী নিয়ে রিয়াদ আরফিন তৈরি করতে যাচ্ছেন কমেডি সিরিজ ‘ফ্রেন্ডস উইদাউট বেনিফিটস’।
নিজ নিজ পেশাদার জীবনে ফিল্ম সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠাতারা স্বল্প ও ফিচার-দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র এবং ফিকশন তৈরি করেছেন, যেমন, পায়ের নিচে মাটি নেই, পাতালঘর, ফিরে এসো বেহুলা, সিনসিয়ারলি ইওরস ঢাকা, লাইট ক্যামেরা অবজেকশন ইত্যাদি। এগুলো প্রদর্শিত হয়েছে বুসান, মস্কো, কলকাতা, গোয়া, লোকার্নো, ভেনিস, এশিয়ান ডক ল্যাব-এর মতো বিভিন্ন বিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবে। ভূষিত হয়েছে নানা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে।
সারাবাংলা/এজেডএস